নেতানিয়াহুর দুই লক্ষ্য, কোনোটি কি অর্জন সম্ভব?
Published: 17th, June 2025 GMT
দুটি লক্ষ্য নিয়ে ইরানে হামলা করেছে ইসরায়েল। একটি হলো পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা, অন্যটি সরকার পরিবর্তন। এই দুই লক্ষ্য সামনে রেখে ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা, তা নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে দ্য কনভার্সেশন।
নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, ইরানে হামলা দুই সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে। এ সময়সীমা একটি কারণে সুনির্দিষ্ট বলে মনে হচ্ছে। তা হলো, ইসরায়েলি গোয়েন্দারা নিখুঁত ছকে ধাপে ধাপে অভিযানের পরিকল্পনা তৈরি করেছে। প্রথম হামলায় ইরানের শীর্ষ সামরিক ও বৈজ্ঞানিক নেতৃত্ব ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
পরমাণু বিজ্ঞানীরা নিহত হওয়ায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি হুমকির মুখে পড়েছে। অন্যদিকে শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যা এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে ইসরায়েল সহজে ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হচ্ছে। নেতানিয়াহু দেশটির সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়ার কৌশল নিয়েছেন।
২০১৫ সালে যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন, তখনই চুক্তির বিরোধিতা করেছিল ইসরায়েল। ২০১৮ সালে ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প সেই চুক্তি থেকে সরে আসেন। ইসরায়েল আগাগোড়াই ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা অর্জনের প্রচেষ্টাকে কড়া নজরে দেখে আসছে। এখন ইরানে হামলা করার পর ওই আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হিতে বিপরীত হবে বলে মনে করে তেলআবিব। ট্রাম্প আর আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য নেতানিয়াহুকে যুদ্ধ থামাতে বলতে পারবেন না।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির সম্পূর্ণ ধ্বংস চায় ইসরায়েল। এজন্য তেহরানের প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত ফোরডো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাসহ সব পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করার পরিকল্পনা করেছে তারা। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসির মতে, ফোরডো স্থাপনাটি প্রায় আধামাইল মাটির নিচে স্থাপিত, যা একটি পাহাড়ের তলদেশে অবস্থিত। এটি সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০০০ পাউন্ডের বোমারও নাগালের বাইরে।
ইসরায়েল বড়জোর ভূমিধস ঘটিয়ে স্থাপনাটির প্রবেশপথ বন্ধ করে দিতে পারে। তবে এটি কোনো স্থায়ী সমাধান হবে না। ফোরডো সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার জন্য ইসরায়েলি বিশেষ বাহিনীর আক্রমণ প্রয়োজন হবে। তা আদৌ সম্ভব কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন রয়ে গেছে। পারমাণবিক সেন্ট্রিফিউজ ধ্বংস না হলে হামলা কোনো কাজে আসবে না।
তাছাড়া পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনে ইরানকে দূরে রাখতে হলে ৬০ শতাংশের বেশি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে দেওয়া যাবে না। ৯০ শতাংশ অর্জন হলেই পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট হবে।
ইসরায়েল মনে করে, ইরানি শাসনব্যবস্থার পতন অবশ্যই সম্ভব। বিশেষ করে প্রথম দফার হামলায় জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা ও শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীরা নিহত হওয়ার পর এ ব্যাপারে ইসরায়েল আরও আত্মবিশ্বাসী। তাছাড়া বছরের পর বছর ইরানি সরকারের বিরুদ্ধে বড় বড় বিক্ষোভ হয়েছে। ২০২২ সালে মাহশা আমিনের মৃত্যুর ঘটনায় বড় বিক্ষোভ প্রমাণ করে ইরান সরকারের জনপ্রিয়তা চ্যালেঞ্জের মুখে। তাছাড়া অব্যাহত ইসরায়েলি হামলায় বেসামরিক লোকজন মারা গেলে ইরানের সরকারবিরোধীরা বিক্ষোভ শুরু করতে পারে। তাতে দেশটির সরকার ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
অন্যদিকে ইরানের সরকার পরিবর্তনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা প্রত্যাশা করছে ইসরায়েল। কারণ লিন্ডসে গ্রাহামের মতো সিনিয়র রিপাবলিকানরা ইসরায়েলকে যুদ্ধে সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানিয়েছেন। এক্ষেত্রে যদিও ট্রাম্প অনীহা দেখিয়েছেন, তবুও ইসরায়েল মনে করছে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে কোনো হামলা হলেই ট্রাম্পের ওপর চাপ বাড়বে; যা ইরানের সরকার পতনে সহায়তা করতে পারে।
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ জড়িত হওয়ার শঙ্কা কম। সৌদি আরব কিংবা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশ এই সংঘাতে অনাগ্রহ দেখিয়েছে। যদিও তাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম রয়েছে। তাছাড়া কয়েক দশক ধরে ইরানের সঙ্গে শত্রুতা থাকলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরব দেশগুলো ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে। সুতরাং যুদ্ধে জড়িয়ে কেউই ঝুঁকিতে পড়তে চাইবে না।
ইরানের ওপর ব্যাপক হামলা চালালেও নানা কারণে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন নেতানিয়াহু। ইরান পাল্টা আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। ফলে ইসরায়েলে বেসামরিক মানুষ হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে গাজা যুদ্ধের কারণে অসন্তুষ্ট ইসরায়েলিরা নেতানিয়াহুর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ইতোমধ্যে নেতানিয়াহুর দূরদর্শিতা নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন।
তবে বেশির ভাগ ইসরায়েলি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে পঙ্গু করে দেওয়ার জন্য নেতানিয়াহুকে স্বাগত জানিয়েছেন। এছাড়া নেতানিয়াহু হুমকি দিয়েছেন, ইরান ইচ্ছাকৃতভাবে ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করলে তেহরান জ্বালিয়ে দেওয়া হবে।
তাছাড়া ইসরায়েল ইরানের প্রক্সিযুদ্ধের সহযোগী হিজবুল্লাহ ও হামাসকে ব্যাপকভাবে দুর্বল করে দিয়েছে। তারা স্পষ্টতই আর ইরানকে যুদ্ধে সহায়তা করার অবস্থানে নেই। এখন বড় প্রশ্ন হচ্ছে, যুদ্ধের পরে কী হবে। ইরান প্রায় নিশ্চিতভাবেই পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি থেকে সরে আসবে ও আইএইএর পর্যবেক্ষণও নিষিদ্ধ করবে। পারমাণবিক বোমা তৈরির সক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এই অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতময় পরিস্থিতি দীর্ঘ হতে পারে।
লেখক: আয়ান পারমিটার, অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মিডলইস্ট স্টাডিজের গবেষক
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ধ ব স কর র সরক র ইসর য় ল র জন য লক ষ য ইসর য অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
পাবনায় বাস-ট্রাক সংঘর্ষে ট্রাকচালক নিহত, ২ হেলপার আহত
পাবনা বাইপাস মহাসড়কে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে সেলিম হোসেন (৩৮) নামে একজন ট্রাকচালক নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় আরও দুইজন হেলপার আহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) ভোর সাড়ে চারটার দিকে পাবনা বাইপাস মহাসড়কের ইয়াকুব ফিলিং স্টেশন এর সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ট্রাকচালক সেলিম হোসেন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের মৃত আব্দুল গনির ছেলে।
আহতরা হলেন, বাসের হেলপার তারেক (৩৫) ও ট্রাকের হেলপার আলামিন (৩৫)। তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ট্রাকচালক সেলিম সুনামগঞ্জ থেকে পাথর ভর্তি করে মাওয়া যাচ্ছিলেন। অপরদিকে পাবনা এক্সপ্রেস বাসটি ঢাকা থেকে পাবনা বাস টার্মিনালে যাত্রী নামিয়ে হেলপার আলামিন গাড়ি গ্যারেজ করার জন্য দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে ইয়াকুব প্লিজ ফিলিং স্টেশনের সামনে পৌঁছালে ট্রাকের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয় লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে জানালে ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম আহত ৩ জনকে উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ট্রাকচালক সেলিম কে মৃত ঘোষণা করেন।
আহত ট্রাকের হেলপার ও বাসের হেলপারের অবস্থা গুরুতর হওয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্থানান্তর করা হয়।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে সদর থানা হেফাজতে রেখেছে। দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাক ও বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঢাকা/শাহীন/টিপু