উদ্দেশ্য ভালো বলেই ঢাকা ব্যাংক সুনামের সঙ্গে টিকে আছে
Published: 2nd, July 2025 GMT
আগামী ৫ জুলাই প্রতিষ্ঠার তিন দশক পূর্ণ করছে ঢাকা ব্যাংক। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবিরও চেয়ারম্যান। তিনি পূর্বাণী গ্রুপের কর্ণধার ও বিটিএমএর সাবেক সভাপতি। ঢাকা ব্যাংক ও সমসাময়িক নানা বিষয়ে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ওবায়দুল্লাহ রনি
সমকাল : ৩০ বছর পূর্ণ করছে ঢাকা ব্যাংক। এই মাইলফলক কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
আব্দুল হাই সরকার: ১৯৮৪ সালে এরশাদ সরকারের আমলে বেসরকারি খাতে ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার জন্য আবেদন চাওয়া হয়। ওই সময় ৪১টি আবেদন জমা পড়ে, যার একটি ঢাকা ব্যাংক। পরে বিএনপি সরকার এসে ঢাকা ব্যাংকসহ কয়েক ধাপে সাতটি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়। ভালো গ্রাহকসেবা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এ ব্যাংকের যাত্রা হয়। উদ্দেশ্য ভালো বলেই নানা ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্যে ঢাকা ব্যাংক সুনামের সঙ্গে টিকে আছে। কোনো সরকারের আমলেই ব্যাংকটি উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়নি।
সমকাল: আপনারা কোন বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন?
আব্দুল হাই সরকার: আমাদের প্রধান লক্ষ্য হলো– গ্রাহক ব্যাংকে এসে বসে থাকবে না। বরং ব্যাংকই গ্রাহকের দোরগোড়ায় যাবে। সেই উদ্দেশ্য থেকে আমরা এখনও বিচ্যুত হইনি। আমরা পরিপূর্ণভাবে ‘পেপারলেস ডিজিটাইজ’ ব্যাংকিং করার দিকে যাচ্ছি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত আংশিক করেছে। দুবাই, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে পুরোপুরি আছে। এসব দেশে গ্রাহকরা কোনো সেবা নিতে গেলে ব্যাংকার তার কাছে গিয়ে কী করতে হবে বলে দেয়। আমাদের এখানে বলা হয়, ওই কাজ করে আসো। অথচ ব্যাংকের দায়িত্ব গ্রাহক কীভাবে কী করবে, তার পরামর্শ দেওয়া। চলমান ধারা থেকে ঢাকা ব্যাংক বেরিয়ে ডিজিটাইজ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
সমকাল: বাংলাদেশে গত বছরের আগস্টে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। পরিবর্তনের বিষয়টি আপনাদের ব্যাংকে কোনো প্রভাব ফেলেছে?
আব্দুল হাই সরকার: সরকার পতনের পর আর ভয় পাই না। আগে ভয় পেতাম। ভাবতাম কোন সময় কে ঢাকা ব্যাংক নিয়ে যায়। যেহেতু ব্যাংকটিকে বিএনপির ব্যাংক হিসেবে রাজনৈতিক একটা রং দেওয়া হয়েছিল, সংগত কারণে আমরা ভয় পেতাম। গত সরকারের আমলে একটি শিল্পগোষ্ঠী এই ব্যাংক দখল করে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। বাজারে এমন গুজবও ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে, আমি নাকি ঢাকা ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছি।
সমকাল: প্রভিশন ঘাটতি রেখে এবার ঢাকা ব্যাংককে লভ্যাংশ দেওয়ার বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
আব্দুল হাই সরকার: সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক লভ্যাংশ দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে। ঢাকা ব্যাংকের সামান্য যে প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে শিগগিরই তা মিটিয়ে ফেলা হবে।
সমকাল: ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমাতে আপনার পরামর্শ জানতে চাই।
আব্দুল হাই সরকার: ইচ্ছাকৃত খেলাপিরা ঋণ নিয়ে আত্মীয়স্বজনের নামে সম্পদ করেছে। এদের ধরতে হলে আত্মীয়স্বজনের অস্বাভাবিক সম্পদের উৎস খতিয়ে দেখা উচিত। সারাদেশে চার থেকে পাঁচটি অর্থঋণ আদালত রয়েছে। অর্থ ঋণ আদালতের বিচারক নানা কারণে অনুপস্থিত থাকেন। খেলাপি ঋণ আদায়ে শুধু ঢাকায় অন্তত ২০টি অর্থঋণ আদালত দরকার। সম্পদ বিক্রি করতে গেলে খেলাপিরা দেশের বাইরে বসে আইনজীবীর মাধ্যমে কিছুদিন পর পর উচ্চ আদালতে রিট করেন। যে ব্যাংকের টাকা মেরে বিদেশে পালিয়েছে, তার এ ধরনের অধিকার থাকা উচিত নয়। চট্টগ্রামভিত্তিক ১০ থেকে ১২টি প্রতিষ্ঠান ঢাকা ব্যাংকের ২ হাজার কোটি টাকার মতো নিয়ে পালিয়েছে। এরা ঢাকা ব্যাংককে বিপদে ফেলেছে।
সমকাল: কয়েকটি ব্যাংক একীভূতকরণের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যােগ নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
আব্দুল হাই সরকার: একটি ব্যাংক বাঁচার পূর্বশর্ত হলো আমানতকারী। ব্যাংকের প্রতি আমানতকারীদের আস্থা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একবার আস্থা হারালে, তা ফেরানো অনেক কঠিন। একীভূতকরণের আইডিয়া ভালো। তবে কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দেশে অনেক ভালো ব্যাংক রয়েছে। ফলে এসব ব্যাংক একীভূতকরণ করলেই আমানত পাবে, তার নিশ্চয়তা নেই। আবার সরকার এখন ট্রেজারি বিলে সাড়ে ১২ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। এ অবস্থায় ব্যাংকে আমানত আসবে কীভাবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
বরফ গলে মেরু এলাকায় নতুন বাস্তুতন্ত্রের খোঁজ
তাপপ্রবাহ, ওজোন গ্যাসের উপস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে পৃথিবীর দুই মেরু এলাকার বরফ গলে যাচ্ছে। তবে উত্তর মেরুর আর্কটিক সাগরের গলিত বরফ ভিন্ন ধরনের লুকানো বাস্তুতন্ত্র প্রকাশ করছে। সেখানে ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন গ্যাসকে পুষ্টিতে রূপান্তরিত করে শৈবালের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলে দেখা গেছে। পুরু বরফের নিচে এই প্রক্রিয়া অসম্ভব বলে মনে করা হলেও এখন আর্কটিকের খাদ্যশৃঙ্খল ও বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন শোষণের জন্য এই প্রক্রিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা এখন নতুন বাস্তুতন্ত্র জলবায়ুগত সুবিধা দেবে নাকি নতুন অনিশ্চয়তা নিয়ে আসবে, তা নিয়ে গবেষণা করছেন।
আর্কটিক মহাসাগরকে দীর্ঘকাল ধরে হিমায়িত ও প্রাণহীন একটি সীমান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যখন এই অঞ্চলের সমুদ্রের বরফ গলতে শুরু করেছে, তখন পানির নিচ থেকে আশ্চর্যজনক নতুন নতুন সব তথ্য জানা যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা দেখছেন, গলিত বরফ আসলে শৈবালের বৃদ্ধি বাড়িয়ে সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রকে উৎসাহিত করতে পারে। এই শৈবালই মহাসাগরের খাদ্যশৃঙ্খলের ভিত্তি তৈরি করে। সেখানকার নতুন পরিবেশ আমাদের গ্রহের সংবেদনশীল জলবায়ু ভারসাম্যের জন্য সহায়ক হবে নাকি ক্ষতিকারক হবে, তা নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।
জার্মানির আলফ্রেড ওয়েগেনার ইনস্টিটিউট ও কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের গবেষণার ফলাফল আর্কটিক মহাসাগর সম্পর্কে আমাদের পূর্বের ধারণাকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে। কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া পুরু আর্কটিক বরফের নিচে ঘটতে পারে না। এই প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া নাইট্রোজেন গ্যাসকে জীবনের সহায়ক রূপে রূপান্তর করে। এই রূপান্তরের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার জন্য সেখানকার পরিস্থিতিকে খুব চরম বলে মনে করা হতো। নতুন গবেষণা ভিন্ন তথ্য প্রকাশ করেছে। মধ্য আর্কটিক বরফের নিচে দেখা গেছে, নাইট্রোজেন ফিক্সেশন বা বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া কেবল ঘটছে তা নয়, বরং এটি প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বিস্তৃত হতে পারে। অন্যান্য সব সমুদ্রে সাধারণত সায়ানোব্যাকটেরিয়া দেখা গেলেও, আর্কটিকে নন-সায়ানোব্যাকটেরিয়া নামে পরিচিত একটি ভিন্ন দলের উপস্থিতি দেখা যায়। ভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্রবীভূত জৈব পদার্থ খেয়ে বেঁচে থাকে ও নাইট্রোজেন যৌগ মুক্ত করে যা শৈবালকে পুষ্টি জোগায়।
আর্কটিক এলাকাকে একসময় প্রাকৃতিক কার্যকলাপের জন্য খুব অনুর্বর বলে মনে করা হতো। গবেষণায় দেখা গেছে, গলে যাওয়া সমুদ্রের বরফের কিনারা বরাবর নাইট্রোজেনের বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া সবচেয়ে শক্তিশালী। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে সূর্যের আলো, পানি ও পুষ্টির উপাদান মিশে গেছে, যা ব্যাকটেরিয়া ও শৈবাল উভয়ের জন্যই আদর্শ পরিবেশ। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে আর্কটিকের নাইট্রোজেনচক্র নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হবে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী লিসা ডব্লিউ ভন ফ্রাইসেন বলেন, আর্কটিক মহাসাগরে সহজলভ্য নাইট্রোজেনের পরিমাণ অনুমান করা হয়নি এখনো। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে শৈবাল উৎপাদনের সম্ভাবনা কেমন হবে তা এখনো জানা যায়নি। শৈবাল আর্কটিক খাদ্যশৃঙ্খলের জন্য অপরিহার্য। তারা আণুবীক্ষণিক ক্রাস্টেসিয়ানদের খাবার হিসেবে কাজ করে, যা পরবর্তী সময়ে ছোট মাছ এবং সিল ও তিমির মতো বড় শিকারি প্রাণীরা খায়। আরও শৈবাল এই শৃঙ্খলকে শক্তিশালী করতে পারে, যা সম্ভাব্যভাবে আর্কটিক সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে তুলবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
সাধারণভাবে শৈবাল কেবল সামুদ্রিক প্রাণীদের খাদ্য জোগায় না। তারা সালোকসংশ্লেষণের সময় বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইডও শোষণ করে। যখন শৈবাল মরে যায়, তখন এই কার্বনের কিছু অংশ সমুদ্রের তলদেশে ডুবে যায়। বিজ্ঞানীরা প্রায়শই শৈবালকে প্রাকৃতিক কার্বন সিংক বা মহাসাগরের নিজস্ব ভ্যাকুয়াম ক্লিনার হিসেবে বর্ণনা করেন। নতুন তথ্য থেকে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়া যদি শৈবালের বৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তোলে, তবে আর্কটিক মহাসাগর আরও বেশি কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণ করতে পারবে। বিষয়টি একদিক থেকে জলবায়ুর জন্য সুসংবাদ বলে মনে করা হচ্ছে। শৈবালের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি বৈশ্বিক কার্বন মাত্রাকে সামান্য হলেও প্রশমিত করতে পারে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ সতর্ক করে জানিয়েছেন, বিষয়টি এত সরল নয়। সামুদ্রিক সিস্টেম অত্যন্ত সংবেদনশীল। অন্যান্য পরিবেশগত পরিবর্তন এই ইতিবাচক প্রভাবকে দুর্বল করে দিতে পারে।
বিজ্ঞানী ল্যাসে রিম্যান বলেন, ফলাফল জলবায়ুর জন্য উপকারী হবে কি না, তা আমরা এখনো জানি না। তবে এটি স্পষ্ট যে সমুদ্রের বরফ কমতে থাকলে আগামী কয়েক দশকে আর্কটিক মহাসাগরের কী হবে, তা অনুমান করার সময় আমাদের নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াকে সমীকরণে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়তে থাকায়, আর্কটিক পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় প্রায় চার গুণ দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে। এই দ্রুত পরিবর্তন কেবল বরফের ওপর নির্ভরশীল প্রজাতিদেরই নয়, বরং মহাসাগর কীভাবে কার্বন সঞ্চয় ও নির্গত করে, তারও পরিবর্তন ঘটায়। নাইট্রোজেন বায়ুমণ্ডলে উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার ভূমিকা বোঝা গেলে বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতের জলবায়ু ধরন সম্পর্কে আরও নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী করতে সক্ষম হবেন বলে আশা করছেন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া