Samakal:
2025-11-03@13:45:59 GMT

আলু চাষে কৃষকের মাথায় হাত

Published: 3rd, July 2025 GMT

আলু চাষে কৃষকের মাথায় হাত

চলতি বছর আলুর ভালো ফলন হলেও ন্যায্য দাম না পাওয়ায় ও সংরক্ষণের অভাবে মুন্সীগঞ্জের চাষিদের লোকসান হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন অনেক বেশি হওয়ায় হিমাগারে সংরক্ষণ করতে না পারা, মূল্য কম ও বাঁশের মাচায় সংরক্ষণ করা আলুতে পচন ধরার কারণে কৃষকের মাথায় হাত। এই বিপুল পরিমাণ ক্ষতির কারণে জেলার বেশির ভাগ কৃষক এখন দেনার দায়ে জর্জরিত। এই অবস্থায় সরকারের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন আলু চাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এবার জেলায় ১০ লাখ ৮০ হাজার টন আলু উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ টন হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়। বাকি ৬ লাখ টন আলু দেশীয় পদ্ধতিতে বাড়িতেই সংরক্ষণ করা হয়েছে।

জেলা আলু চাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন জানান, উৎপাদন উপকরণের অতিরিক্ত দামের কারণে এবার প্রতি কেজি আলুতে খরচ পড়েছে ১৬ টাকা। হিমাগারে সংরক্ষণ করতে গিয়ে প্রতি কেজিতে খরচ উঠেছে ২৬ টাকা। অথচ বর্তমানে হিমাগার থেকে আলুর পাইকারি দাম মিলছে মাত্র ১৫ থেকে ১৬ টাকা। এতে প্রতি কেজিতে চাষি ও ব্যবসায়ীর লোকসান গুনতে হচ্ছে ১০ থেকে ১১ টাকা। এই হিসাবে, হিমাগারে সংরক্ষিত ৪ লাখ টন আলুতে লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকা।

অন্যদিকে, দেশীয় পদ্ধতিতে সংরক্ষিত ৬ লাখ টন আলুর ২৫ শতাংশ অর্থাৎ দেড় লাখ টন পচে গেছে। এই দেড় লাখ টন আলুর উৎপাদন খরচ, বস্তা ও শ্রমিক খরচ বাবদ প্রতি কেজিতে ১৮ টাকা হিসাবে লোকসানের পরিমাণ ২৭০ কোটি টাকা। এ ছাড়া দেশীয় পদ্ধতিতে সংরক্ষিত বাকি সাড়ে ৪ লাখ টন আলু নিজ বাড়ি থেকে ১১ টাকা কেজিতে বিক্রি করায় কৃষকের আরও ৪৯৫ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। সব মিলিয়ে মুন্সীগঞ্জের আলু চাষি ও ব্যবসায়ীদের লোকসান প্রায় ১ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা।

কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জের ১৮ লাখ মানুষ ১২ হাজার টন আলু খেয়েছে। বাকি ৬৮ হাজার টন আলু অন্য জেলায় পাঠানো হয়েছে। তারপরও ১০ লাখ টন আলু হিমাগার ও বাড়িতে দেশীয় পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। এই অতিরিক্ত জোগানই দাম কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্তের ভাষ্য, এবার ভয়াবহ লোকসানের মুখে পড়ে মুন্সীগঞ্জের বেশির ভাগ কৃষক এখন দেনার জালে আটকা পড়েছেন। মহাজন ও ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। অনেক কৃষকের ভিটেমাটি বিক্রি করার উপক্রম হয়েছে। পরিবারের মুখে দুই বেলা অন্ন জোগানো তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। এই লোকসান শুধু অর্থনৈতিক নয়, কৃষকদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিক জীবনেও গভীর প্রভাব ফেলছে। তাদের চোখেমুখে এখন শুধুই হতাশার ছাপ।

আলু চাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মুন্সীগঞ্জের কৃষকদের বাঁচাতে সরকারের সুদৃষ্টি প্রয়োজন। কৃষকদের এই সংকটময় মুহূর্তে সরকারি প্রণোদনা, ঋণ মওকুফ এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য একটি কার্যকর বাজার ব্যবস্থা গড়ে তোলা অপরিহার্য। অন্যথায় আলু চাষে আগ্রহ হারাবেন কৃষক, যা দেশের সামগ্রিক কৃষি অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ও ব যবস য় স রক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’

নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি। 

৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে। 

আরো পড়ুন:

দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে

সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা

২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা। 

চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী। 

উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।” 

চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।” 

চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়। 

মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ