কক্সবাজারের চকরিয়ায় সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দিয়েছে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা। এ দুর্ঘটনায় অটোরিকশাটির এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে যাওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়। এর আগে সন্ধ্যায় উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের বুড়ির দোকান এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটনা ঘটে।

নিহত যাত্রীর নাম আবদুল মান্নান। তিনি পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া এএস আলিম মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক। তাঁর বাড়ি কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদণ্ডী ইউনিয়নে। একই দুর্ঘটনায় আবদুল মান্নানের স্ত্রী, এক শিশুসন্তান ও অটোরিকশার চালক আহত হয়েছেন। তাঁদের চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

দুর্ঘটনায় আবদুল মান্নানের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ছালেকুজ্জামান। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে  বলেন, দুর্ঘটনার পর অটোরিকশার মালিকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁকে নিহত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ এবং আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, আবদুল মান্নান চাকরির সুবাদে পরিবার নিয়ে পেকুয়া বাজার এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। তাঁর বোন বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। তাই গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি পরিবার নিয়ে বোনকে দেখতে কক্সবাজারের উদ্দেশে বের হন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে পেকুয়া বাজার থেকে চকরিয়া যাওয়ার জন্য সিএনজিচালিত ওই অটোরিকশায় ওঠেন। অটোরিকশায় তাঁর তিন শিশুসন্তান, স্ত্রী ও চালক ছিলেন। দুই শিশু সুস্থ রয়েছেন।

জানতে চাইলে উজানটিয়া এএস আলিম মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি মীর মোহাম্মদ আকরাম হোছাইন প্রথম আলোকে বলেন, অটোরিকশাচালকের অদক্ষতা ও বেপরোয়া গতির কারণে পুরো পরিবারটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। একজন শিক্ষকের প্রাণ গেছে। তাঁর স্ত্রী-সন্তানও আহত হয়েছেন। জানতে চাইলে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি দুর্ঘটনার বিষয়ে কিছু শুনেননি। এ ব্যাপারে খোঁজ নেবেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ ল ম ন ন ন দ র ঘটন য় পর ব র ত হয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য

দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।

আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।

আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা।

কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ