কামার আহমাদ সাইমন পরিচালিত এবং সারা আফরীন প্রযোজিত ‘জলত্রয়ী’ সিরিজের দ্বিতীয় অংশ ‘অন্যদিন…’ মুক্তি পাচ্ছে আগামীকাল। এদিন থেকে রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সের সীমান্ত সম্ভার প্রেক্ষাগৃহে টানা সাত দিন প্রদর্শিত হবে। ‘অন্যদিন…’ দেশের অন্যতম বিতর্কিত ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিনেমাগুলোর মধ্যে একটি। বিশ্বের প্রথম সারির চলচ্চিত্র উৎসব ইডফার মূল প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত এই ছবি, কানের সিনেফন্দেশিওনের অফিসিয়াল সিলেকশনে থাকায় বিশেষ নজর কাড়ে। লোকার্নোর পিয়াতজা গ্রান্দায় বাংলাদেশের প্রথম ‘ফিচারড ডিরেক্টর’ হিসেবে সম্মাননা লাভের পাশাপাশি ক্যামডেনের হ্যারেল অ্যাওয়ার্ড ও ফ্রান্সের আর্তে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজসহ বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে।
এদিকে, দেশের রাজনৈতিক কারণে ছবি নিষিদ্ধ থাকার দীর্ঘ সময় কাটিয়ে এবার মুক্তি পাওয়া প্রসঙ্গে প্রযোজক সারা আফরীন বলেন, “কান, লোকার্নো, ক্যামডেনসহ আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্বীকৃতি ও পুরস্কার পেলেও দেশে ছবিটি দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ ছিল। ২০১৪ সালে সানড্যান্স থেকে ‘অন্যদিন…’ গ্রান্ট জেতার পর ২০২১ সালে ইডফায় ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারের সময় তাদের ওয়েবসাইটে ছবিটিকে ‘ক্যালাইডস্কোপিক ও ফিলসফিক্যাল’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। তবে দেশের সেন্সর বোর্ডের কারণে দীর্ঘদিন আটকে ছিল ‘অন্যদিন…’।”
‘অন্যদিন…’ কামার আহমাদ সাইমনের নির্মিত ‘জলত্রয়ী’র দ্বিতীয় ছবি। পরিচালক কামার আহমাদ সাইমন জানান, একটা ছবিকে গায়েব করা মানে একজন নির্মাতাকে গুম করে দেওয়া। ২৪ সালের জুলাইয়ের আগে ‘অন্যদিন…’ দেখানো বন্ধ ছিল। তাই ঠিক করেছিলাম এরপর আর কোনো ছবি বানাবো না। জুলাই এসে সব কিছু বদলে দিয়েছে। বিগত সময়ের সেন্সর নিষেধাজ্ঞা ছিল ছবিটিকে আটকে রাখার পেছনে, কারণ ছবিটা প্রফেটিক ছিল। এখন সুযোগ এসেছে, তাই এই জুলাইয়েই ছবিটিকে মুক্তি দিচ্ছি।
‘অন্যদিন…’ এর মুক্তি দেশের স্বাধীন চিন্তা ও শিল্পের জোরালো প্রতিনিধিত্ব হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। চলচ্চিত্রটি যে শুধু একটি সিনেমা নয়, বরং এক সময়ের সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিবাদ ও মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরে, সেটিই দর্শক ও বিশ্লেষকদের কাছ থেকে এই সিনেমার উচ্চ প্রশংসার অন্যতম কারণ।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’
নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি।
৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে।
আরো পড়ুন:
দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে
সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা
২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা।
চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী।
উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।”
চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।”
চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়।
মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।
ঢাকা/রাহাত/শান্ত