যুক্তরাজ্যে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে বাংলাদেশির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
Published: 22nd, July 2025 GMT
পারিবারিক কলহ ও নির্যাতনের কারণে আলাদা থাকা স্ত্রীকে নিজের শিশুসন্তানের সামনেই নৃশংসভাবে ছুরিকাঘাতে হত্যার দায়ে হাবিবুর রহমান মাসুম (২৬) নামের এক বাংলাদেশিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের একটি আদালত।
মঙ্গলবার ব্র্যাডফোর্ড ক্রাউন কোর্ট এই সাজা ঘোষণা করেন। রায়ের আদেশে আদালত বলেন, হাবিবুর অন্তত ২৮ বছর কারাভোগ না করে মুক্তি পাবেন না।
গত বছরের ৬ এপ্রিল কুলসুমা আক্তার (২৭) তাঁর শিশুসন্তানকে নিয়ে ব্র্যাডফোর্ডের একটি নারী আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বের হলে হাবিবুর তাঁর পিছু নেন এবং রাস্তায় প্রকাশ্যে ছুরি নিয়ে আক্রমণ করেন।
সিসিটিভি (ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা) ফুটেজে দেখা যায়, কুলসুমা শিশুসন্তানকে বহনকারী ঠেলাগাড়ি ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় কুলসুমাকে ছুরি দিয়ে ২৫ বারের বেশি আঘাত করেন হাবিবুর। কুলসুমাকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
তদন্তে জানা গেছে, হাবিবুর আগে থেকেই পরিকল্পনা করে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে কুলসুমাকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বের করে আনেন। তিনি নিজেকে একজন জিপি (চিকিৎসক) পরিচয় দিয়ে ওই বার্তা পাঠিয়েছিলেন।
ঘটনার পর হাবিবুর নির্বিঘ্নে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। পুলিশ পরে তাঁকে আইলসবুরি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। গত ২৭ জুন হত্যা, হামলা, হত্যার হুমকি ও অনুসরণের অভিযোগে হাবিবুরকে দোষী সাব্যস্ত করেন আদালত।
আদালত বলেন, এই হামলা ছিল ‘ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত, নিষ্ঠুর ও চরম সহিংসতাপূর্ণ’। বিচারক আরও বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি কোনো অনুশোচনা প্রকাশ করেননি এবং পুরো বিচারপ্রক্রিয়ায় ছিলেন নির্বিকার।
কুলসুমার ভাই আকতার হুসেইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আমাদের বোন হত্যার বিচার পেয়েছি। যদিও আমরা আমাদের বোনকে ফেরত পাব না, কিন্তু হত্যাকারীর উপযুক্ত শাস্তি হওয়ায় আমরা খুশি।’
ঘটনাটি দেশজুড়ে নারীর নিরাপত্তা ও আশ্রয়কেন্দ্রের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস বলেছে, এই মামলাটি প্রমাণ করে, অনেক সময় আশ্রয়কেন্দ্রের মতো নিরাপদ জায়গাও নির্যাতনের হাত থেকে মুক্ত নয়।
হাবিবুর রহমান ব্রাডফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর কোর্সের ছাত্র ছিলেন। তিন বছর আগে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাজ্যে আসেন। পরে তাঁদের এক সন্তানের জন্ম হয়। বাংলাদেশে তাঁদের বাড়ি সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলায়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিয়ে বাড়িতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বরের বাবার মৃত্যু
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় বিয়ে বাড়ির আলোকসজ্জায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারালেন বরের বাবা বিষু পাল (৬৫)। বুধবার (৩০ জুলাই) উপজেলার গুনই মদনমুরত গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আইনানুগ প্রক্রিয়া শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
স্থানীয়রা জানান, বিষু পালের বড় ছেলে বিজয় পালের বিয়ে ঠিক হয় ৩১ জুলাই (বৃহস্পতিবার)। সেই উপলক্ষে বাড়িতে আলোকসজ্জার আয়োজন করা হয়। বাড়ির একটি গ্রিলে অস্থায়ী বিদ্যুৎ লাইনের তার ঝুলছিল। যেখানে লিকেজ ছিল। সকালে অসাবধানতাবশত সেই গ্রিলে হাত দিলে বিষু পাল বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্দার করে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরো পড়ুন:
কুড়িগ্রামে সাপের কামড়ে সাপুড়ের মৃত্যু
কিশোরগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে ২ কৃষকের মৃত্যু
বানিয়াচং থানার এসআই সজিব ঘোষ জানান, ঘটনাটি মর্মান্তিক। বিয়ের আনন্দময় পরিবেশ হঠাৎ করে বিষাদে পরিণত হয়েছে। বিকেলে বিষু পালের পরিবারের সদস্যরা বিনা ময়নাতদন্তে লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য হবিগঞ্জ জেলা সদরে গিয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর আবেদন করেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ঢাকা/মামুন/বকুল