অন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনেরও বাধা কাটুক
Published: 27th, July 2025 GMT
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে অচলাবস্থা ছিল, তার অবসান হতে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণা করা হবে ২৯ জুলাই, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেপ্টেম্বরে। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে দীর্ঘ কর্তৃত্ববাদী শাসন অবসানের পর দেশের নাগরিকদের গণতান্ত্রিক উত্তরণযাত্রার যে আকাঙ্ক্ষা, সে নিরিখে এবারের ডাকসু নির্বাচন নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর জনমত যাচাইয়ের জন্য নির্বাচনটি একটি নিরীক্ষাক্ষেত্র হয়ে উঠবে। কেননা, দেশের তরুণদের রাজনৈতিক মত কোন দিকে বাঁক নিচ্ছে, তার সুস্পষ্ট একটা ধারণা এ নির্বাচনে প্রতিফলিত হবে।
এ প্রেক্ষাপটে একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জন্য বড় একটা চ্যালেঞ্জ। প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ২০ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে ডাকসু নির্বাচনের অংশীজনদের সঙ্গে তফসিল–সংক্রান্ত চূড়ান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কেন্দ্রীয়ভাবে ছয়টি আলাদা কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। একেক হলের শিক্ষার্থীরা একেক কেন্দ্রে ভোট দিতে পারবেন। ২০১৯ সালে সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনে যে নেতিবাচক অভিজ্ঞতা, তার পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রসংগঠনগুলোর ও শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে করার। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানের কেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আশা করা হয়েছিল, অভ্যুত্থানের পরপরই ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, শিক্ষার্থীদেরও সেই প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে অনৈক্য থাকায় সময়ক্ষেপণ হয়েছে। দেরিতে হলেও ডাকসু নির্বাচনের সিদ্ধান্তের জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানাই। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ডে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিদের সক্রিয় ও জোরালো ভূমিকা রাখার সুযোগ তৈরি হবে। সাড়ে তিন দশকের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিদের কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি। আমরা আশা করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পথ ধরে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতেও ধাপে ধাপে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আমরা দেখেছি জাতীয় পরিসরে মেধাশূন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের যে শূন্যতা, তা পূরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ছাত্র সংসদগুলো। পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ডাকসুর একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকা থাকলেও নব্বইয়ের পর গণতান্ত্রিক আমলে সরকারগুলো সেই গণতান্ত্রিক পরিসরকে রুদ্ধ করে ফেলা হয়। যে সরকার যখন ক্ষমতায় এসেছে, তাদের ছাত্রসংগঠনকে দলীয় ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু বিরোধী মত দমনে নয়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিপীড়নের কাজে তাদের ব্যবহার করা হয়েছে। এ সময়কালে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক দাবিতে অসংখ্য আন্দোলন গড়ে তুললেও নিষ্ঠুরভাবে তাদের দমন করা হয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সেটা চূড়ান্ত রূপ নিয়েছিল। এসব অন্যায়, নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত ক্ষোভের বিস্ফোরণ থেকেই গণ–অভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিল।
চব্বিশের অভ্যুত্থান বাংলাদেশের সামনে গণতান্ত্রিক পথে যাত্রার অনন্য এক সুযোগ এনে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা কেউই লেজুড়বৃত্তিক ও নিপীড়নমূলক ছাত্ররাজনীতি এবং কর্তৃত্ববাদী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরতে চান না। এটা দুঃখজনক যে ছাত্রসংগঠনগুলোর বেশির ভাগই শিক্ষার্থীদের এ পরিবর্তনটাকে ধারণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তারা পুরোনো রাজনীতিরই চর্চা করে চলেছে। সব মত, সব পথের অবাধ প্রকাশের সুযোগের জায়গা হিসেবেই বিশ্ববিদ্যালয়কে গড়ে তুলতে হবে। রাজনৈতিক মতের কারণে কেউ যেন নিপীড়নের শিকার না হয়, সেই গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সে পরিসরটা তৈরি করে দিতে পারে ছাত্রদের নির্বাচিত ছাত্র সংসদ।
শুধু ডাকসু নয়, দেশের সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বাধা কাটুক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক র জন ত ক ছ ত রস
এছাড়াও পড়ুন:
জকসু নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ ছাত্র সংগঠনগুলোর
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন নিয়ে একে অপরকে নানাভাবে দোষারোপ করছে ছাত্র সংগঠনগুলো। সরাসরি নাম উল্লেখ না করে কেউ কাউকে কিছু না বললেও ছাড় দিতে নারাজ তারা।
গত ৩০ অক্টোবর জবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের নেতারা জকসু নির্বাচনের বিধিমালা প্রণয়নে প্রশাসন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়ো করেছে বলে অভিযোগ করে।
আরো পড়ুন:
জবি প্রশাসনের কাছে ২০ দাবি জানাল ইউটিএল
পিএইচডি গবেষকদের জন্য বৃত্তি চালু করা হবে: জবি উপাচার্য
রবিবার (২ নভেম্বর) ভাষা শহীদ রফিক ভবনের নিচে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জকসু নির্বাচন পেছাতে নির্বাচন কমিশন ‘বিশেষ উদ্দেশ্যে’ কাজ করছে বলে অভিযোগ করেছেন জবি শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম।
পরে সন্ধ্যায় একই স্থানে ‘জকসু নির্বাচনের আচরণবিধি ও স্পোর্টস কার্নিভাল’ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি অভিযোগ করে, জকসু নির্বাচন নিয়ে একটি সংগঠন তড়িঘড়ি করে নির্বাচন আয়োজন করতে চাচ্ছে এবং আরেকটি সংগঠন নির্বাচন পিছিয়ে জাতীয় নির্বাচনের সময়ের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
রবিবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, “নির্বাচন কমিশন একটি বিশেষ কারো ইশারায়, বাইরের প্রেসক্রিপশনে নির্বাচনের খসড়া প্রস্তুত করেছে। আমাদের দাবি, ২৭ নভেম্বরই শিক্ষার্থীদের নিয়ে জকসু নির্বাচন বাস্তবায়ন করা। নির্বাচন কমিশনের সবাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অংশ। তারা ২৭ নভেম্বর নির্বাচন হওয়ার বিষয়টি আগেই জানতো। কিন্তু তবু ১০ ডিসেম্বরকে সামনে রেখে খসড়া রোডম্যাপ তৈরি করেছে। এতে একটি গ্রুপকে সুবিধা দিয়ে অন্যদের ভোটাধিকার হরণের চেষ্টা চলছে।”
তিনি বলেন, “প্রশাসন ও কমিশন আগে জানিয়েছিল, আইন প্রণয়নের পরই প্রস্তুতি কমিটি গঠনের কাজ শুরু হবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তারা নতুনভাবে সব কাজ করতে চাচ্ছে—যেন নির্বাচন বিলম্বিত হয়। আলোচনার টেবিলে নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে।”
তিনি আরো বলেন, “একটা পক্ষের সব কথা শোনা হচ্ছে। কিন্তু অন্যদের মতামত গুরুত্ব পাচ্ছে না। এতে স্পষ্ট, নির্বাচন পেছানোর মানসিকতা নিয়েই তারা আলোচনায় বসছে। ১৩ ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষা বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় বিজয় দিবসের কর্মসূচির কারণে সে সময় নির্বাচন গ্রহণ করা সম্ভব নয়।”
“এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন ১৬ ডিসেম্বরের পর ভোট আয়োজন করতে চাইছে। কিন্তু তখন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে বা ছুটি শুরু হলে জকসু নির্বাচন করা অসম্ভব হয়ে পড়বে,” যুক্ত করেন শিবির সভাপতি।
আপ বাংলাদেশের সঙ্গে প্যানল ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমরা ইনক্লুসিভ প্যানেল করতে চাচ্ছি। আমাদের প্যানেলে কারা থাকবেন সেটা এখনো নির্দিষ্ট হয়নি। শিগগিরই এ বিষয়ে জানতে পারবেন।”
এ সময় উপস্থিত ছিলেন জবি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল আলিম আরিফ, অফিস সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল ও বাইতুল মাল সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন নিয়ে একটি সংগঠন তড়িঘড়ি করে নির্বাচন আয়োজন করতে চাইছে, আরেকটি সংগঠন নির্বাচন পিছিয়ে জাতীয় নির্বাচনের সময়ের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছে শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি।
অপরদিকে, ‘জকসু নির্বাচনের আচরণবিধি ও স্পোর্টস কার্নিভাল’ বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা জাতীয় ছাত্রশক্তি সদস্য সচিব শাহিন মিয়া বলেন, “একটি সংগঠন নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা করছে, আরেকটি সংগঠন তড়িঘড়ি করে দিতে চাইছে। আমরা চাই এমন একটি নির্বাচন, যেখানে শিক্ষার্থীরা অবাধভাবে অংশ নিতে পারবে এবং সবাই সমান সুযোগ পাবে। নির্বাচন কমিশন যেন প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি গ্রহণযোগ্য সময়সূচি ঘোষণা করে এবং কোনো পক্ষের প্রভাবে না পড়ে।”
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের যে সাহসী ও নিরপেক্ষ ভূমিকা দেখানোর কথা, আজকের মতবিনিময় সভায় আমরা তা দেখতে পাইনি।”
জবি শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, “আমরা সব সময় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে। আমরা চাই না যে ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে হঠাৎ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। অন্যদিকে, ছাত্রশিবির দ্রুত নির্বাচন চায়, আর ছাত্রদল সেটি পেছাতে চায়—যা নির্বাচনী পরিবেশকে জটিল করে তুলছে। জাতীয় নির্বাচন ও জকসু নির্বাচন একই সময়ে পড়লে তা প্রশাসনিকভাবেও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।”
এর আগে, গত ৩০ অক্টোবর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেছিলেন, “আমাদের প্রত্যাশা ছিল প্রশাসন একটি আধুনিক, যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত জকসু নীতিমালা প্রণয়ন করবেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, প্রশাসন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে তাড়াহুড়ো করেছে, যা হতাশাজনক।”
তিনি বলেছিলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথমবার জকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমরা চাই এটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হোক—যাতে জকসু শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধি নির্বাচনের মুক্ত মঞ্চে পরিণত হয়, কোনো দলীয় প্রভাবের শিকার না হয়।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী