নিম্নচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে তিনদিন ধরে উত্তাল রয়েছে বঙ্গোপসাগর। ফলে কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপটিতে দেখা দিয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের তীব্র সংকট।

কক্সবাজার আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আব্দুল হান্নান জানান, রবিবার (২৭ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কক্সবাজারে ২৭ মিলিমিটার এবং গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বর্তমানে আবহাওয়া কিছুটা উন্নতি হওয়ায় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে সতর্ক সংকেত নামিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে।

সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা জানান, গত বৃহস্পতিবার থেকে দ্বীপজুড়ে দমকা হাওয়া ও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। জোয়ারের পানিও স্বাভাবিকের তুলনায় এক থেকে তিন ফুট বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে অনেক এলাকায় লবণাক্ত পানি ঢুকে পড়েছে। শতাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে।

আরো পড়ুন:

নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলায় ৩০ গ্রাম প্লাবিত

চবির আলাওল হলে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ, ভোগান্তি

স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর আকাশ বলেন, “জমিতে জোয়ারের লবণাক্ত পানি ঢুকে আমাদের ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষকরা দুশ্চিন্তায় আছেন। এ অবস্থায় কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি।”

সেন্টমার্টিন বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান বলেন, “টেকনাফ থেকে পণ্য না পৌঁছানোয় পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হচ্ছে। দ্রুত সি ট্রাক ও সি অ্যাম্বুলেন্স চালুর দাবি জানাচ্ছি।”

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম জানান, অমাবস্যার জোয়ারের কারণে দ্বীপের নিচু অংশগুলো পানিতে ডুবে গেছে। সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে বিভিন্ন এলাকায় ভাঙনের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। দ্রুত উপকূল রক্ষায় ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

তিনি বলেন, “নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় দ্বীপবাসী তীব্র খাদ্য সংকটে পড়েছেন। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নেই বললেই চলে।”

এদিকে, সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ ও কক্সবাজার শহরে গিয়ে আটকে পড়েছেন শতাধিক দ্বীপবাসী। আটকে পড়া সেন্টমার্টিনের বাসিন্দা ও পর্যটন ব্যবসায়ী তৈয়ব উল্লাহ বলেন, “বৈরী আবহাওয়ার কারণে দ্বীপে ফিরতে পারছি না। একজন পর্যটন ব্যবসায়ী হিসেবে এমনিতেই আমাদের সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে। তার ওপর সতর্ক সংকেত, উত্তাল সাগর আর জোয়ারের পানি; সব মিলিয়ে আমাদের জীবনযাপন এখন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।”

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, “বৈরী আবহাওয়ার কারণে সাময়িকভাবে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের নৌযান চলাচল শুরু হবে।”

ঢাকা/তারেকুর/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপক ল স ন টম র ট ন ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ফুটবলার প্রতিমা এগিয়ে যাচ্ছেন, পাশে আছে কিশোর আলোসহ অনেকে

একটি পরিবারের ওপর নেমে আসা অপ্রত্যাশিত চাপ আর হতাশাকে দূর করেছে একটি সংবাদ। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় প্রতিমা মুন্ডার পড়াশোনা ও খেলাধুলা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল মাত্র ৪৭ হাজার টাকার জন্য। প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর মিলেছে সহযোগিতা, পরিশোধ হয়ে গেছে বিকেএসপির বকেয়া।

এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন প্রতিমার মা সুনিতা মুন্ডা। তাঁদের ওপর থেকে নেমে গেছে বড় ধরনের আর্থিক চাপ।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেএসপি প্রতিমার অভিভাবককে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছিল, তাঁদের মেয়ের বকেয়া বেতন ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা। সেই চিঠিতেই সতর্ক করে বলা হয়, ছয় মাসের বেশি বেতন বকেয়া থাকলে চূড়ান্ত সতর্কীকরণ, আর ১২ মাসের বেশি বকেয়া থাকলে বহিষ্কারের বিধান আছে। অর্থাভাবে যখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল প্রতিমার ভবিষ্যৎ, ঠিক সেই সময় ১১ অক্টোবর প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয় তাঁদের পরিবারের সংগ্রামের গল্প।

আরও পড়ুনবকেয়া বেতন চেয়ে বিকেএসপির চিঠি, ফুটবলার প্রতিমার পড়াশোনা বন্ধের পথে ১১ অক্টোবর ২০২৫

প্রতিবেদনটি পাঠকের হৃদয়ে নাড়া দেয়। কিশোর আলোর পক্ষ থেকে প্রতিমার বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই দিনই বিকেলে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে গিয়ে প্রথম আলোর সাতক্ষীরার নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি প্রতিমা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে নেওয়া হয় এই উদ্যোগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী সহায়তা করেন আরও ১০ হাজার টাকা। তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপা রানী সরকার দেন পাঁচ হাজার টাকা ও একটি ফুটবল।

সহায়তা পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে পরিবারে। মুঠোফোনে প্রতিমা বলেন, ‘এখন আর কোনো অনিশ্চয়তা নেই। বিকেএসপির পাওনা ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। আমি ভালো আছি, মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা আর অনুশীলন করছি।’

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার প্রতিমা মুন্ডা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে কিশোর আলোর পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ