গণঅভ্যুত্থান না হলে নির্বাচনের স্বপ্নই দেখতে পারতেন না: নাহিদ
Published: 28th, July 2025 GMT
‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচির ২৮তম দিনে জামালপুরে ১১ জন শহীদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ, পদযাত্রা ও পথসভা করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় নেতারা।
সোমবার (২৮ জুলাই) সকালে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে শহীদদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ অন্য নেতারা। সেখানে থেকে হরিজন পল্লীতে যান তারা। পরে শহরের তমাল মোড় থেকে ফৌজদারি মোড় পর্যন্ত পদযাত্রায় অংশ নেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও জামালপুরের সাত উপজেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা। ফৌজদারি মোড়ে পথসভায় বক্তব্য রাখেন এনসিপির নেতারা।
পথসভায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “অনেকে বলছে, আমরা নাকি নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছি, নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি। গণঅভ্যুত্থান না হলে আপনারা নির্বাচনের স্বপ্নই দেখতে পারতেন না। কোটা আন্দোলন থেকে যদি সরকার পতনের দিকে আন্দোলন না নিয়ে যেতাম, তাহলে শেখ হাসিনার আমলে নির্বাচনের জন্য আরো চার বছর অপেক্ষা করতে হতো।”
আরো পড়ুন:
বিকেলে এনসিপির পদযাত্রা-সমাবেশ, প্রস্তুত ময়মনসিংহ
ফেনীতে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবিতে পদযাত্রা
তিনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের শক্তি এখনো রাজপথে আছে। আমরা গণঅভ্যুত্থানের সময় সর্ম্পূণভাবে সংগঠিত ছিলাম না। আমাদের কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না। ফলে, আমরা অনেক কিছুই করতে পারিনি। কিন্তু, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি অন্তর্বতী সরকারকে ও এই সময়ের রাজনীতিকে গণঅভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত করতে। আমাদের চেষ্টা এখনো জারি আছে।”
জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “জাতীয় সংসদকে দুই ভাগ করে ভোটের অনুপাতে উচ্চ কক্ষ নির্ধারণ করতে হবে, যাতে জবাবদিহিমূলক ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করা যায়। সেই উচ্চ কক্ষের বিষয়ে ঐক্যমত না হওয়ায় জুলাই সনদ আটকে আছে। জুলাই সনদের মাধ্যমে সর্বদলীয়ভাবে ৫ আগস্ট উদযাপন করা হবে।”
তিনি বলেন, ‘সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছে ঐক্যমত কমিশন। সেখানে জাতীয় নাগরিক পার্টি অংশ নিচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের পরে সামনে যে নির্বাচন আসছে, সেই নির্বাচনে মৌলিক সংস্কার শেষে আমরা অংশগ্রহণ করতে চাই। কারণ, বিচার, সংস্কার ও নতুন সংবিধান এই গণঅভ্যুত্থানে আমাদের অন্যতম দাবি। সংস্কারের মাধ্যমে পুরনো আইনগুলো পরিবর্তন করতে হবে, যাতে বাংলাদেশে আর কখনোই নির্বাচন কমিশনে দলীয়করণ না হয়, পুলিশে দলীয়করণ না হয়, প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থায় দলীয়করণ না হয়। আমরা সবখানে নিরপেক্ষতা চাই। ইতোমধ্যে পুলিশ কমিশনে সবাই একমত হয়েছে। এজন্য ধন্যবাদ জানাই।”
পথসভায় আরো বক্তব্য রাখেন—জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা.
এনসিপির পদযাত্রা ও সমাবেশ উপলক্ষে জামালপুরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পথসভা শেষে ময়মনসিংহের উদ্দেশে যাত্রা করেন এনসিপির নেতাকর্মীরা।
ঢাকা/শোভন/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পদয ত র ন হ দ ইসল ম জ ত য় ন গর ক প র ট গণঅভ য ত থ ন র ন এনস প র পদয ত র
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে
বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা/নাজমুল/রফিক