বিংশ শতাব্দীর শেষ প্রান্তে বাংলাদেশের বেশিরভাগ যুবকই বড় হয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মঞ্চে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন নিয়ে। কেউ কেউ পেরেছেন কেউ পারেনি। যারা পারেনি তাদের অনেকেই ক্রিকেট ছেড়ে অন্য পথ বেছে নিয়েছেন। আর যারা পেরেছেন তাদের কেউ কেউ খেলোয়াড়ী জীবন শেষ করে ক্রিকেটেই নিজেদের সপে দিয়েছেন।
কেউ আম্পায়ারিংকে বেছে নিয়েছেন। কেউ বেছে নিয়েছেন কোচিংকে। কেউ বা প্রশাসনিক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। তবে আনুপাতিক হারে ক্রিকেট কোচিংয়ে মনোযোগটা একটু কমই পড়েছে। কেননা ক্রিকেট কোচিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট কোর্স আছে, সেসব কোর্সে ধাপে ধাপে পার করতে হয়। নানা ধাপ পেরোনোর পরই মিলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) স্থানীয় কোচ এবং ক্রিকেটারদের উদ্ভুদ্ধ করতে আয়োজন করেছে তিনদিন ব্যাপী লেভেল-১ কোচিং কর্মশালা। যে কর্মশালায় ব্যাপক সাড়া পেয়েছে বিসিবি। শুধু ক্রিকেটার নয়, বিভিন্ন সংস্থা থেকেও কোচিংয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন অনেকে। বিসিবির গেম ডেভেলপমেন্টের হেড অব অপারেশন্স হাবিবুল বাশার জানালেন, দেশে এখন কোচিং পেশায় আগ্রহ বাড়ছে, এটা ক্রিকেটের বিকাশের জন্য ইতিবাচক সংকেত।
আরো পড়ুন:
সালাউদ্দিনের মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত, বেতন বেড়ে প্রায় ১০ লাখ
বিসিএলে বিদেশি দল, এনসিএলে বিদেশি ক্রিকেটার
মিরপুরে তিনি বলেছেন, ‘‘ক্রিকেটটা ছড়িয়ে দিতে হলে শুধু ক্রিকেট খেললেই হবে না, ক্রিকেট এডুকেটেড হওয়া খুব জরুরি। তাই এখানে যারা (কোর্স করতে) আসছেন, তারা আসলে তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করেন। আমরা যদি তাদের সঠিক প্রশিক্ষণ দিতে পারি, একটু আপগ্রেড করতে পারি, সেটা দিনশেষে বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই কাজে লাগবে। আমরা সামনে আরও বেশি বেশি এ ধরনের সেমিনার করব।’’
‘‘কোয়ালিটি কোচিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটারই একটা প্রয়াস আমাদের এবারের সেমিনার। আমাদের ক্রিকেটারদের আগে এত কোচিংয়ে আসতে দেখিনি। ইনফ্যাক্ট পাঁচ-দশ বছর আগেও এত কোচিংয়ে আসতে চাইত না। এখন অনেককেই দেখছি, প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার শেষ করে কোচিংয়ে আসতে চাইছে।’’ – যোগ করেন তিনি।
খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন এমন ক্রিকেটাররাও কোচিংয়ে আসতে আগ্রহ দেখাচ্ছে যা মনে ধরেছে হাবিবুলের। বিসিবি তাদের পাশে থাকবে এবং সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের এগিয়ে নেবে সেই আশ্বাসও দিয়েছেন,
‘‘লেভেল ওয়ান কোর্স করার জন্য অনেকের সিভি জমা পড়েছে। অনেকের সিভি জমা পড়েছে মানে যারা ফার্স্ট ক্লাস প্লেয়ার যারা এখনো খেলছেন অথবা আর এক দুই বছর খেলবেন তারা কোচিংয়ে আসতে চাচ্ছেন। ভালো কোচ যদি আমরা প্রডিউস করতে পারি তাহলে অবশ্যই বাইরের দেশে তারা ডাক পাবেন। বাট আমার আসলে মূল চিন্তার বিষয় আমাদের যে ক্রিকেটটা সেখানে কিভাবে আমরা আরো ভালো কোচ বানাতে পারি, সেখানে কীভাবে ভালো কোচিং করাতে পারি।’’
ঢাকা/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে ধর্মান্তরের গুজবে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নৈশভোজে পুলিশ ও মবের হানা, মারধরের অভিযোগ
ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের জামশেদপুরের একটি হাউজিং সোসাইটিতে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের একটি নৈশভোজের অনুষ্ঠানের সময় ধর্মান্তরের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এরপর পুলিশসহ শতাধিক লোক সেই বাড়িতে হানা দেন। কিন্তু পুলিশ পরে জানিয়েছে, ওই বাড়িতে ধর্মান্তরের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
গত ২৬ জুলাই জামশেদপুরের গোলমুড়ি থানা এলাকার একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সেখানে ২১ দিনের উপবাস ও প্রার্থনা শেষে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রায় ৫০ জন মানুষ রাতের খাবার খাচ্ছিলেন। কিন্তু স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগ করেন, দুটি ফ্ল্যাটে কিছু মানুষ জড়ো হয়ে সন্দেহজনক কিছু করছিলেন।
স্থানীয় গোবিন্দপুর গির্জার যাজক জিতু লিমা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘আমাদের গির্জার প্রায় ৫০ জন সদস্য ২১ দিনের উপবাসের সময় ওই দুটি ফ্ল্যাটে থাকছিলেন। তাঁরা প্রায় সবাই আত্মীয় ও পরস্পরের সঙ্গে চেনাজানা।’
জিতু লিমা বলেন, ফ্ল্যাট দুটি কেবল থাকার জন্য ব্যবহার হচ্ছিল। সেখানে কোনো প্রার্থনা বা ধর্মীয় কার্যক্রম হচ্ছিল না। শুধু উপবাসের শেষ দিন রাতের খাবার খেতে সবাই সেখানে সমবেত হয়েছিলেন। এতে ছোট শিশু থেকে বৃদ্ধ—সবাই ছিলেন।
গির্জার যাজক আরও বলেন, এই অবস্থায় সেখানে পুলিশের সঙ্গে উচ্ছৃঙ্খল জনতার একটি দল (মব) হঠাৎ একটি ফ্ল্যাটে ঢুকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁরা ছয়জনকে থানায় নিয়ে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গির্জার একজন সদস্য অভিযোগ করেন, পুলিশ ও উচ্ছৃঙ্খল জনতা মিলে তাঁদের হয়রানি করেছে এবং থানায় নিয়ে যাওয়ার পর কিছু লোককে মারধরও করা হয়েছে।
জিতু লিমা অভিযোগ করেন, যে কক্ষে রাতের খাবারের আয়োজন চলছিল, সেখানে রাত ৯টার দিকে মব ঢুকে পড়ে। এরপর পুলিশ ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয় এবং কাউকে বের না হতে নির্দেশ দেয়। মবে শতাধিক মানুষ ছিল। কিছু পুলিশ সাদাপোশাকে ছিলেন। তাই বোঝা যাচ্ছিল না, কে পুলিশ আর কে মবের লোক।
গির্জার এই সদস্য অভিযোগ করেন, ‘আমাদের প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল। রাত সাড়ে ১২টার দিকে আমাকেসহ ছয়জনকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমাদের কয়েকজনকে চড়-থাপ্পড় মারা হয়েছে। পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাই তাঁদের মারধর করেছেন। তিনি তাঁদের জিজ্ঞেস করেছেন, ‘কেন তোমরা লোকজনকে ধর্মান্তর করছ?’
গোলমুড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাজেন্দ্র কুমার বলেন, ‘কাউকে মারধরের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। বরং আমি তাঁদের জল খেতে দিয়েছি এবং তাঁদের সঙ্গে সম্মানের সঙ্গে ব্যবহার করেছি। তবে আমি বাইরে যাওয়ার পর সোসাইটির কেউ হয়তো কিছু করে থাকতে পারে।’
রাজেন্দ্র কুমার বলেন, ওই রাতে বাসিন্দাদের থেকে মৌখিক অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ সেখানে গিয়েছিল। অভিযোগ ছিল, সেখানে ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য থেকে আসা প্রায় ৫০ জন মানুষ সমবেত হয়েছিলেন।
রাজেন্দ্র কুমার বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আমরা তৎক্ষণাৎ অন্যায় কিছু করার বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাইনি। কেউ লিখিত কোনো অভিযোগও জমা দেননি।’
রাজেন্দ্র কুমার আরও বলেন, ‘এফআইআর করার আগের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে আমরা থানায় একটি ডায়েরি করেছি। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ-ছয়জনকে থানায় আনা হয়েছিল। আমরা জমায়েতটির প্রকৃতি নিয়ে তদন্ত করছি, এ ধরনের সমাবেশের জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না, নেওয়া হলে কার নামে নেওয়া হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখছি। তাই এখনই নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
জামশেদপুরের উপপুলিশ সুপার (ডিএসপি) সুনীল চৌধুরী বলেন, বিষয়টি থানায় রেকর্ড করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।
গত বুধবার অল ইন্ডিয়া খ্রিষ্টান মাইনরিটি ফ্রন্টের সহসভাপতি ও সংখ্যালঘু অধিকারকর্মী অজিত তিরকে জামশেদপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, ধর্মান্তরের মিথ্যা অভিযোগের অজুহাত তুলে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষের ওপর নিপীড়ন বাড়ছে।
অজিত তিরকে বলেন, মুখ্যমন্ত্রী আতাল মহল্লা ক্লিনিক প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে মাদার তেরেসার নামে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। ওই জমায়েতে ধর্মান্তরের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তা সত্ত্বেও হামলাকারী কিংবা অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
জামশেদপুরের ডেপুটি কমিশনার কর্ণ সত্যার্থি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, গোলমুড়ি ও ভূঁইয়াদি এলাকায় সাম্প্রতিক ধর্মান্তরের অভিযোগ সংক্রান্ত দুটি ঘটনার বিষয়ে পুলিশ একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
কর্ণ সত্যার্থি বলেন, গোলমুড়ির ঘটনায় পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিল। সেখানে পুলিশ দুটি দলকে পেয়েছিল। একটিতে ছিল ১০০ থেকে ১৫০ জন। অন্য দলে ছিল প্রায় ৫০ জন। অভিযুক্ত হওয়ার কারণে নয়, বরং নিরাপত্তার জন্য খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের কয়েকজনকে থানায় নেওয়া হয়েছিল।
কর্ণ সত্যার্থি আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জোরপূর্বক ধর্মান্তরের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সেখানে যাঁরা ছিলেন তাঁদের মধ্যে মাত্র দুই কি তিনজন অন্য ধর্মের ছিলেন। তাঁরা স্বেচ্ছায় প্রার্থনায় অংশ নিচ্ছিলেন। সমবেতদের বেশির ভাগই খ্রিষ্টান। প্রতিবেদনে জবরদস্তির কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।
পুলিশ হেফাজতে মারধরের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডেপুটি কমিশনার বলেন, ‘এমনটি হয়ে থাকলে তা অন্যায়। অপরাধী ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে কার সঙ্গে কীভাবে আচরণ করা হবে, সেই ব্যাপারে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। আমরা ঘটনাটি আমলে নিচ্ছি এবং পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে মিলে এই বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’
আরও পড়ুনভারতে উড়োজাহাজে সহযাত্রীর থাপ্পড়ের পর খোঁজও মিলছে না যাত্রীর: পরিবারের দাবি৫ ঘণ্টা আগে