সকালের নাশতায় এই ৭টি অভ্যাসে বেড়ে যায় ইনসুলিন
Published: 4th, August 2025 GMT
ইনসুলিন বেড়ে গেলে কী হয়
মানবদেহের জন্য অপরিহার্য এক হরমোন ইনসুলিন। আমরা যখন কোনো খাবার খাই, তখন তা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় ভেঙে গ্লুকোজ বা শর্করায় পরিণত হয়। তারপর এই শর্করা শোষণ করার জন্য শরীরের কোষগুলোকে নির্দেশ দেয় ইনসুলিন। কোনো কারণে ইনসুলিনের ঘাটতি হলে প্রক্রিয়াটি ব্যাহত হয়। তখন দেখা দেয় ডায়াবেটিসসহ নানা ধরনের সমস্যা।
একইভাবে শরীরে ইনসুলিন বেড়ে গেলেও দেখা দিতে পারে নানা ধরনের সমস্যা। যেমন এতে হতে পারে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া), যা গুরুতর হলে খিঁচুনি বা অজ্ঞান হওয়ার মতো সমস্যাও হতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত ইনসুলিন শরীরের ওজন বৃদ্ধি, হৃদ্রোগ ও ক্যানসারের মতো রোগের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। এবার জেনে নিন সকালের নাশতায় যেসব ভুল ইনসুলিন বাড়ায়।
১.জুস বা মিষ্টি পানীয় দিয়ে নাশতা শুরু করা
প্রাকৃতিক হলেও জুসে ফাইবার বা আঁশ না থাকায় শরীরে শর্করা দ্রুত শোষিত হয়। ফলে ইনসুলিন হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শারীরিক শক্তিও কমে যেতে পারে। তাই নাশতায় জুসের পরিবর্তে গোটা ফল বেছে নেওয়ার পাশাপাশি চিনি ছাড়া পানীয় খাওয়া ভালো।
২. উচ্চমাত্রার কার্বোহাইড্রেট খাওয়াসাদা রুটি; সিরিয়াল; জ্যাম, জেলি কিংবা চকলেট–জাতীয় খাবারসহ টোস্ট; ডোনাট; কেক ও পেস্ট্রি–জাতীয় খাবারে থাকে উচ্চমানের কার্বোহাইড্রেট। অন্যদিকে এসবে ফাইবার ও প্রোটিন থাকে খুবই কম। ফলে এসব দ্রুত হজম হয়ে ইনসুলিন বাড়ায়। তাই গোটা শস্য ও সুষম খাবার দিয়ে দিন শুরু করে রক্তে শর্করা বৃদ্ধির ঝুঁকি এড়ানো বুদ্ধিমানের কাজ।
৩. অতিরিক্ত মিষ্টি স্মুদি বা আঁশবিহীন খাবার খাওয়াস্মুদিতে তুলনামূলকভাবে চিনির পরিমাণ বেশিই থাকে। ফলের রসেও আমরা অনেকে চিনি যোগ করি, আর মিষ্টি দইয়ের সঙ্গে তো চিনি থাকেই। সমস্যা হলো, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও আঁশবিহীন তরলে থাকা চিনি দ্রুত শোষিত হয়। ফলে এসব খাবার খেলে ইনসুলিন বেড়ে যেতে পারে। তাই স্মুদিতে টক দই বা বাদামের মতো প্রোটিন এবং আঁশসমৃদ্ধ ফল যোগ করে নেওয়া ভালো।
আরও পড়ুনইউটিউবে দিনে মাত্র আধা ঘণ্টা ব্যয় করেই শিখতে পারেন ইংরেজি০২ আগস্ট ২০২৫৪. খালি পেটে চিনিযুক্ত চা বা কফি খাওয়াখালি পেটে চিনিযুক্ত চা–কফি দিয়ে সকাল শুরু করলে শরীরের ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ে। মনে রাখা জরুরি, তরল শর্করা শক্ত খাবারের চেয়ে দ্রুত শোষিত হয়। পাশাপাশি ক্ষুধা বাড়ায়। তাই সকালের নাশতায় চিনি ছাড়া চা–কফি বেছে নেওয়াই স্বাস্থ্যসম্মত।
৫. অতিরিক্ত চিনিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার খাওয়ামিষ্টি দইয়ের পাশাপাশি কিছু দুগ্ধজাত পানীয়তেও অতিরিক্ত চিনি বা উচ্চমাত্রার ল্যাকটোজ থাকে। সমস্যা হলো, এসব খাবারের চিনি দৃশ্যমান নয়। মানে আমরা নিজেরা যোগ করি না, আগে থেকেই যোগ করা থাকে। ফলে এসব খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
তাই নাশতায় দই খেতে চাইলে সাধারণ টক দই খান, উদ্ভিজ্জ দুধও ভালো বিকল্প। উদ্ভিজ্জ দুধ বিভিন্ন উৎস থেকে আসতে পারে; যেমন বাদাম, সয়াবিন, ওটস, চাল ও নারকেল। এসব দুধ সাধারণত ল্যাকটোজ ও কোলেস্টেরলমুক্ত।
আরও পড়ুনগ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমাবে এই ৫ অভ্যাস১৭ ঘণ্টা আগে৬. খাবারের ক্রম না মানাকার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবার দিয়ে সকালের নাশতা শুরু করলে শরীরে গ্লুকোজ প্রবেশ করে তুলনামূলক দ্রুতগতিতে। এ কারণে বিশেষজ্ঞরা সকালে নাশতার শুরুতে শাকসবজি বা প্রোটিন খেতে বলেন, আর শেষে রাখতে বলেন কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবার। খাবারের এই ক্রম রক্তে শর্করা ও ইনসুলিনের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৭. নাশতা বাদ দেওয়ানাশতা বাদ দিলেও দিনের শেষভাগে শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়ে। বিশেষ করে আপনি যখন খাবারের জন্য খুব বেশি অপেক্ষা করেন, তখন শরীরে সঞ্চিত গ্লুকোজের নিঃসরণ ঘটে। ফলে খাবার খাওয়ার পর ইনসুলিনের প্রতিক্রিয়া বাড়ে। তাই নিয়মিত নাশতা করলে রক্তে শর্করার মাত্রা ভারসাম্যপূর্ণ থাকার সম্ভাবনা বাড়ে এবং পরে অতিরিক্ত ক্ষুধাও পায় না।
সূত্র: মায়ো ক্লিনিক
আরও পড়ুনব্রণ দূর করতে তামান্না ভাটিয়ার বিস্ময়কর টোটকা, চিকিৎসক কী বলছেন৯ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইনস ল ন ব ড় ইনস ল ন র য গ কর ন শত য় সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
‘শরিয়াহ ও সরকারি নীতিবিরোধী’: নারী ও ইরানি লেখকদের ১৪০টিসহ ৬৭৯ বই নিষিদ্ধ করল তালেবান
আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যসূচি থেকে নারীদের লেখা বই নিষিদ্ধ করেছে তালেবান সরকার। মানবাধিকার ও যৌন হয়রানি–সম্পর্কিত বিষয়ে পাঠদানের ওপর একটি নতুন নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
শরিয়াহবিরোধী ও সরকারি নীতির পরিপন্থী বলে মনে হওয়ায় ৬৭৯টি বইকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে চিহ্নিত করেছে তালেবান। নিষিদ্ধ এসব বইয়ের মধ্যে ১৪০টি নারীদের লেখা ও ৩১০টি ইরানি লেখকদের লেখা বা ইরানে প্রকাশিত।
নিষিদ্ধ বইয়ের ৫০ পৃষ্ঠার একটি তালিকা আফগানিস্তানের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
আফগান সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে, তারা এখন থেকে ১৮টি বিষয়ে পাঠদান করতে পারবে না। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেন, এসব বিষয় মূলত ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
চার বছর আগে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ ধরনের নানা নিয়মকানুন জারি করেছে তালেবান সরকার। চলতি সপ্তাহেই তালেবানের সর্বোচ্চ নেতার নির্দেশে অন্তত ১০ প্রদেশে ‘ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট’ বন্ধ করে দেওয়া হয়। কর্মকর্তারা বলেছেন, অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আফগান সরকারের পক্ষ থেকে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয়েছে, তারা এখন থেকে ১৮টি বিষয়ে পাঠদান করতে পারবে না। তালেবানের এক কর্মকর্তা বলেছেন, এসব বিষয় মূলত ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি ও সরকারের নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।অনেকের মতে, এসব নিয়মকানুন আফগানিস্তানের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কিশোরী ও নারীরা এসব নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ষষ্ঠ শ্রেণির পর থেকে তাদের শিক্ষা গ্রহণ নিষিদ্ধ। ২০২৪ সালের শেষ দিকে ধাত্রীবিদ্যা বা মিডওয়াইফারি কোর্সও বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ১৮ বিষয়ে পাঠদান নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তার ৬টিই নারীদের নিয়ে, যেমন ‘জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’, ‘দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন’ ও ‘উইমেনস সোসিওলজি’।
আরও পড়ুনআফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে কী কারণে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া ১৪ জুলাই ২০২৫তালেবান সরকার বলেছে, তারা আফগান সংস্কৃতি ও ইসলামিক আইনের ভিত্তিতে নারী অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
তালেবানের এসব নিয়মকানুন দেশটির মানুষের দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে কিশোরী ও নারীরা এসব নিয়মের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।তবে আফগানিস্তানের বই পর্যালোচনা কমিটির একজন সদস্য বিবিসিকে বলেন, নারী লেখকদের সব বই পড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
নিষিদ্ধ বইগুলোর তালিকায় আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের বিচার মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী জাকিয়া আদেলির বইও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘চার বছরে তালেবান যা করেছে, তাতে পাঠ্যসূচিতে এমন পরিবর্তনে অবাক হইনি। নারীরা পড়াশোনা করতে পারছেন না। তাদের মতামত ও লেখালিখির অধিকারও দমন করা হবে, এটাই স্বাভাবিক।’
আরও পড়ুনরাশিয়ার পর আর কোন কোন দেশ তালেবানকে স্বীকৃতি দিতে পারে০৫ জুলাই ২০২৫গত আগস্টের শেষ দিকে বই নিষিদ্ধের অধ্যাদেশে স্বাক্ষর করেন তালেবান সরকারের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক জিয়াউর রহমান আরিয়ুবি। তিনি বলেন, আলেম ও বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শুধু নারী লেখকই নয়, নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকায় ইরানি লেখক ও প্রকাশকদের বইও রয়েছে। বই পর্যালোচনা কমিটির এক সদস্য বলেন, আফগান পাঠ্যসূচিতে ইরানি বিষয়বস্তুর প্রবেশ ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনতালেবান শাসনের তিন বছর, কেমন আছে আফগানিস্তান১৫ আগস্ট ২০২৪