শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিএনপির সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম, শিক্ষা ব্যাহত
Published: 27th, August 2025 GMT
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানের বিঘ্ন ঘটিয়ে বিএনপির সদস্য নবায়ন, নতুন সদস্য সংগ্রহ ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (২৭ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত উপজেলার ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই কর্মসূচি চলে। এতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
আরো পড়ুন:
বুয়েট শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের নিন্দা
সাজিদ হত্যার দ্রুত বিচার দাবি ইবি শিক্ষার্থীদের
উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই কার্যক্রম চলেছে, সেগুলো হলো, সোনারায় ইউনিয়নের শিবরামে আলহাজ্ব মো.
এর মধ্যে আলহাজ্ব মো. হোসেন স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে দেখা গেলেও অন্য সবকটি স্কুলে পাঠদান বন্ধ ছিল। মাইকের শব্দ, স্কুলমাঠে বিভিন্ন যানবাহনে আসা নেতাকর্মীদের ভিড়ের কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে না পেরে ফিরে যান।
পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী এর আগে মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দিনভর উপজেলার ৩ ইউনিয়নের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই ধরনের কর্মসূচি চলে। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) বাকি ৫ ইউনিয়নের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এই কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে। ফলে ওই প্রতিষ্ঠানে পাঠদানে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
গত ২৫ আগস্ট জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে এই কার্যক্রম পরিচালনার সিডিউল প্রকাশ করা হয়। সিডিউলে বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি অধিকাংশই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম এবং সময় সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ক্ষুদ্ধ অভিভাবক ও তৃণমূল বিএনপির নেতারা বলছেন, শত শত নেতাকর্মী স্কুলে ঢুকে পড়ায় ঠিকমতো পাঠদান হয়নি। অনেক শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যেতে না পেরে ফিরে গেছে। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দলের কর্মসূচি আয়োজনে জেলা নেতাদের দুষছেন তারা।
আলহাজ্ব মো. হোসেন স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফরিদা পারভিন চৌধুরী রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ব্যাহত হয়েছে। এখানকার অনেক স্কুলে তারা কর্মসূচি পালন করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিষেধ করেছেন, যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’’
ধুবনী কঞ্চিবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদুর রহমান বলেন, ‘‘আমার বিদ্যালয়ে পাঠদান চলাকালীন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে দেইনি। ভবিষ্যতেও হবে না।’’
হরিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হৃদয় কুমার দাস রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘বিএনপির কাউন্সিল করার জন্য ৪টি ক্লাস শেষ করে ছুটি দিয়েছি।’’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের অনুমতি দিতে পারেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘না, এটা ঠিক হয়নি।’’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজকুমার বিশ্বাস বলেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে দলীয় কর্মসূচি করার সুযোগ নেই। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব) এইচ এম. মাহাবুবুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘‘নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক কর্মসূচির সুযোগ নেই। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’’ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি কর্মসূচির আয়োজনে থাকা ইউনিয়ন বিএনপি নেতাদের কেউই।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুল ইসলাম প্রামাণিক বলেন, ‘‘বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে কাউকে রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে বলা হয়নি। বিদ্যালয় ছুটির পর কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে কার্যক্রম পরিচালনা করা যেত।’’
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ করে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি মইনুল হাসান সাদিক বলেন, ‘‘বিদ্যালয়ে কোনো কার্যক্রম করতে বলা হয়নি। উপজেলার নেতাদের স্কুলের বাহিরে ফাঁকা কোনো স্থানে এই কর্মসূচি পালন করতে বলা হয়েছে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে এ ঘটনায় দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে।’’
ঢাকা/মাসুম/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন দরগঞ জ উপজ ল র জন ত ক ক উপজ ল র ব এনপ র আগস ট সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
গাইবান্ধায় চোর সন্দেহে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় তিস্তা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলে গরু চোর সন্দেহে আব্দুস সালাম (৫০) নামে মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় দুলালী বেগম (৪৩) নামে এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ।
শনিবার (১ নভেম্বর) সকালে উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের তিস্তার চরে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। খবর পেয়ে সুন্দরগঞ্জ থানা পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে যুবককে কুপিয়ে হত্যা
ঝিনাইদহে কৃষকের হাত-পা ও গলা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার
নিহত আব্দুস সালাম একই ইউনিয়নের রামডাকুয়া গ্রামের ওমেদ আলীর ছেলে। স্বজনরা জানান, সালাম দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছিল।
আটক দুলালী বেগম বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের আব্দুল গণি মিয়ার স্ত্রী।
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ বলেন, ‘‘খবর পাওয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার দুলালী বেগম ছাড়াও যারা জড়িত ছিল, তা শনাক্তে তদন্ত চলছে।’’
নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) গভীর রাতে সালাম আব্দুল গণি মিয়ার গোয়ালঘরে প্রবেশ করে। বিষয়টি টের পেয়ে দুলালী বেগম স্বামী ও আশপাশের লোকজনকে খবর দেয়। স্থানীয়রা সালামকে রশি দিয়ে বেঁধে বেধড়ক মারধর করে। একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়লে তাকে পুকুরপাড়ে রেখে দেওয়া হয়। ভোরের দিকে আবার তাকে পাশের গোয়ালঘরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়।
অভিযুক্ত আব্দুল গণি মিয়া বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে শ্যালো মেশিন চুরি হয়ে গেছে। রাতে গোয়ালে সালামকে দেখি। তাই প্রতিবেশীদের খবর দেই। পরে তারা এসে মারধর করে।’’
আটক দুলালী বেগম বলেন, ‘‘এক সপ্তাহ আগে মেশিন হারিয়েছে। রাতে শব্দ শুনে দেখি গোয়ালের বাঁধন খুলছে। পরে লোকজন এসে মারধর করে।’’
নিহতের স্বজনরা জানান, আব্দুস সালাম দীর্ঘদিন ধরে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন এবং মানুষের সাহায্যে জীবন চলত। তার বিরুদ্ধে আগে কখনো চুরির অভিযোগ ওঠেনি। তারা দাবি করেন, পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের তিনটি ছোট ছেলে রয়েছে, বাবাকে হারিয়ে তারা অসহায় অবস্থায় পড়েছে।
বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ জানান, ঘটনাস্থল দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় খবর পেতে দেরি হয়। স্বজনদের বক্তব্য অনুযায়ী নিহত ব্যক্তি মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) বিদ্রোহ কুমার কুণ্ডু, সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল হাকিম আজাদ এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ঢাকা/মাসুম/বকুল