দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরে গত ১২ আগস্ট থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে ভারতের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানির কার্যক্রম। কোলাহল বেড়েছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীদের। বাংলাদেশ ও ভারতের ট্রাক লোড-আনলোডে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। যে কারণে বন্দরে ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্যতা। 

হিলি কাস্টমসের তথ্যমতে, গত ১ থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দরে ২২৯টি ট্রাকে ৬ হাজার ২৪৮ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। ১২ আগস্ট থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত এই বন্দরে ১ হাজার ৩১৩টি ট্রাকে ৪৮ হাজার ৫৩৭ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়। পাশাপাশি বন্দরে দিয়ে ভারতে পণ্য রপ্তানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দুই মাসে ২ হাজার ৯১ মেট্রিক টন পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৮ কোটি টাকা। 

আরো পড়ুন:

হিলি বন্দরে রপ্তানি আয় ১৮ কোটি টাকা

হিলি স্থলবন্দরে কাঁচা মরিচ ১১০ টাকা অথচ খুচরায় ১৬০

বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) সকালে হিলি বন্দর ঘুরে দেখা যায়, বন্দরে অসংখ্য ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক আর দেশি ট্রাকে অবস্থান করছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসছেন ব্যবসায়ীরা। ট্রাকে লোড-আনলোডে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন শ্রমিকরা। পাশাপাশি বন্দরের বাইরেও ব্যস্ততা বেড়েছে বন্দর কেন্দ্রীক সব কার্যক্রম।

একস্থান থেকে অন্য স্থানে পণ্য নিতে ব্যস্ত বন্দরের শ্রমিকরা 

বিগত দিনে এই বন্দরে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করতো ১০ থেকে ১৫টি। গত ১২ আগস্ট থেকে প্রতিদিন ১৩০ থেকে ১৫০টি ভারতীয় ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করছে।  

হিলি বন্দরের শ্রমিক রেজাওয়ান, জলিল ও আশরাফ জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই বন্দর একেবারে ফাঁকা ছিল। সারাদিনে তেমন গাড়ি আসতো না। বসে বসে দিন কাটতো। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তারা। গত কয়েকদিন ধরে বন্দরে প্রচুর কাজ। কাজ করতে পারায় ভালো আয় হওয়ায় সংসারও ভালোভাবে চালাতে পারছেন তারা।  

হিলি বন্দরের আমদানিকারক নুর-ইসলাম বলেন, “বর্তমান আমরা আমদানিকারক এবং ব্যবসায়ীরা অনেক ভালো আছি। আমরা চাহিদা অনুযায়ী ভারত থেকে পণ্য আমদানি করতে পারছি। দেশে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান আমি ভারত থেকে চাল আমদানি করছি।”

হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন শিল্পী বলেন, “হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত দিনে এই বন্দরে আমদানি-রপ্তানি একেবারে শূন্যের কোঠায় ছিল। বর্তমান বন্দরে চাল আমদানি বেশি হচ্ছে। বন্দরের শ্রমিকরা কাজেকর্মে ব্যস্ত আছেন, তাদের উপার্জনও ভালো হচ্ছে।”

হিলি কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো.

নিজাম উদ্দীন বলেন, “হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে। গত ১ আগস্ট থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত এই বন্দর ২২৯টি ভারতীয় ট্রাকে ৬ হাজার ২৪৮ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। আমদানি বৃদ্ধি পেয়ে ১২ আগস্ট থেকে। গতকাল ২৭ আগস্ট পর্যন্ত এই বন্দরে ১ হাজার ৩১৩টি ভারতীয় ট্রাকে ৪৮ হাজার ৫৩৭ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। এসবের মধ্যে অধিকাংশ কাঁচা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। এ কারণে কাস্টমসের সব কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করা হচ্ছে।” 

ঢাকা/মোসলেম/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আমদ ন ১২ আগস ট থ ক

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে

দুর্গাপূজা উপলক্ষে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ মাছ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। আজ বুধবার দেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান ১২ দশমিক ৫০ ডলার কেজিতে এই ইলিশ রপ্তানি করা হয়েছে, যা বাংলাদেশি টাকায় ১ হাজার ৫২৫ টাকা।

অথচ এদিন যশোর শহরের মাছের আড়তে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের প্রতি কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকায় পাইকারি বেচা–কেনা হয়েছে। খুচরা বাজারে সেই ইলিশ কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি দরে ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে; অর্থাৎ দেশের খুচরা বাজারের দামের চেয়ে কম দামে ইলিশ ভারতে রপ্তানি হচ্ছে।

দেশের চেয়ে কম দামে ইলিশ মাছ রপ্তানি কীভাবে সম্ভব হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রপ্তানিকারকদের ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ) এজেন্ট জুয়েল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘রপ্তানিকারকেরা ইলিশের জাহাজ থেকে সরাসরি মাছ কেনেন।‌ ছোট–বড় মিলিয়ে যখন কেনেন, তখন একটু কম দামে তাঁরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাঁদের পুষিয়ে যায়। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার জানা নেই।’

যশোর শহরের বড় বাজারের মাছ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছের সরবরাহ কম। যে কারণে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। খুচরা ইলিশ বিক্রেতা লিয়াকত আলী বলেন, ‘গত বছরের তুলনায় এ বছর ইলিশ মাছের দাম বাড়তি। বাজারে সরবরাহ কম। যে কারণে এ বছর ইলিশ মাছের দাম কমার সম্ভাবনা আর দেখছি না।’

যশোর বড় বাজার মৎস্যজীবী আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ পিয়ার মোহাম্মদ জানান, আজ যশোরের বাজারে ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম আকারের ইলিশ মাছ ১ হাজার ৪৫০ থেকে ১ হাজার ৫৫০ টাকা কেজি দরে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে। আর কেজি আকারের ইলিশ প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকার ওপরে বেচাকেনা হয়েছে। ভারতের রপ্তানির কারণে স্থানীয় বাজারে এখন ইলিশ মাছ সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, যে কারণে দাম বেশি। অথচ গত বছর এই সময়ে কেজি আকারের ইলিশ মাছের দাম ছিল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি। এবার প্রায় দ্বিগুণ দামে সেই ইলিশ কেনাবেচা হচ্ছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, এ বছর সরকার ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১ হাজার ২০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। আজ থেকে ইলিশ মাছ রপ্তানি শুরু হলো। গত বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমতি ছিল ২ হাজার ৪২০ টন। বেনাপোল বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়েছিল মাত্র ৫৩২ টন। এবারও অনুমোদনকৃত ইলিশ রপ্তানির কোটা পূরণ হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। ৫ অক্টোবরের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মাননিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের ফিশারিজ কোয়ারেন্টিন সজীব সাহা বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমোদিত ইলিশ রপ্তানির প্রথম চালানে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ১২ দশমিক ৫০ ডলার মূল্যে ৩৭ দশমিক ৪৬০ টন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। ছয়টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই ইলিশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। রপ্তানি করা ইলিশের একটি বাক্স খুলে দেখা গেছে, ৩৮টি ইলিশ মাছের ওজন ২১ কেজি; অর্থাৎ প্রতিটি ইলিশের ওজন ছিল ৫৫০ গ্রাম। এ ছাড়া ৭০০ থেকে ৮৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছও রপ্তানি হয়েছে। ৫৫০ গ্রাম থেকে ৮৫০ গ্রাম আকারের মধ্যে ইলিশ মাছ রপ্তানি হচ্ছে।

পদ্মার রুপালি ইলিশ স্বাদ আর গন্ধে অতুলনীয় হওয়ায় দুই বাংলায় এ মাছ বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে দুর্গাপূজায় অতিথি আপ্যায়নে খাবারের প্রধান তালিকায় ইলিশ রাখেন কলকাতার বাঙালিরা। আগে ইলিশ সাধারণ রপ্তানি পণ্যের তালিকায় উন্মুক্ত থাকলেও উৎপাদন সংকট দেখিয়ে ২০১২ সালে দেশের বাইরে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় তৎকালীন সরকার। তবে ২০১৯ সাল থেকে বিশেষ বিবেচনায় কেবল দুর্গাপূজা উপলক্ষে আবারও ইলিশ রপ্তানির সুযোগ দেয় সরকার।

আরও পড়ুনদুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতের ‘বিশেষ অনুরোধে’ ইলিশ রপ্তানির অনুমতি: মৎস্য উপদেষ্টা২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রথম চালানে ৩৭ হাজার ৪৬০ কেজি ইলিশ গেল ভারতে
  • আখাউড়া স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ