বিশ্বের উন্নত দেশগুলোয় প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার প্রসার অনেক দ্রুত ঘটেছে, যেখানে প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও সহজেই অনলাইনে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। এসব দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভার্চ্যুয়াল ক্লাসরুম, ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্ম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষার মানোন্নয়ন করছে এবং শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়াচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি খাত একযোগে কাজ করছে, যেন প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষা আরও সহজলভ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হয়। অনেক দেশে ডিজিটাল শিক্ষাকে আইনের মাধ্যমে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যাতে সব স্তরের শিক্ষার্থী প্রযুক্তির সুফল পায় এবং পিছিয়ে না পড়ে। ইউরোপ ও আমেরিকার স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন শিক্ষাকে মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, ফলে সেখানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা দ্রুত বেড়ে চলেছে। যদিও আফ্রিকার অনেক দেশে ইন্টারনেট–সংযোগ ও অবকাঠামো এখনো দুর্বল, এরপরও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান সেখানে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাকে বিস্তৃত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে, যেখানে সরকার বিশেষ বাজেট ও নীতিমালা গ্রহণ করেছে এই খাতকে এগিয়ে নিতে। উন্নত বিশ্বের পাশাপাশি উন্নয়নশীল অনেক দেশ এখন অনলাইন শিক্ষার জন্য নিজস্ব অ্যাপ, প্ল্যাটফর্ম ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচি চালু করছে। এসব প্রচেষ্টার ফলে বৈশ্বিকভাবে প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা যেমন এক নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে, তেমনি নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জও তৈরি হচ্ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার একদিকে উন্নয়নের প্রতীক হয়ে উঠেছে, অন্যদিকে কিছু অঞ্চলে ‘ডিজিটাল বিভাজন’ এখনো একটি বড় সংকট হিসেবে রয়ে গেছে।

বাংলাদেশ সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য প্রশংসনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে উচ্চশিক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে জানার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সব শিক্ষকের জন্য আইসিটি প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, ডিজিটাল কনটেন্ট, ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর সরবরাহ করার মধ্য দিয়ে শিক্ষার ডিজিটালীকরণের প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুনইতালির বিশ্ববিদ্যালয়ে আইইএলটিএস ছাড়াই ডিএসইউ স্কলারশিপ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

তবে নীতিমালার এই অগ্রগতির বাস্তব চিত্র গ্রামীণ কলেজগুলোয় অনেকটাই ভিন্ন। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নানা সীমাবদ্ধতা, অব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের অভাবে সরকারি উদ্যোগগুলো কাঙ্ক্ষিত সফলতা পাচ্ছে না।

অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামীণ কলেজগুলোরও অধিকাংশ শিক্ষার্থী প্রযুক্তিতে যথেষ্ট দক্ষ। প্রায় ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা ল্যাপটপ ব্যবহার করে। তারা ইউটিউব, গুগল, ফেসবুক গ্রুপ, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারসহ বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে শিক্ষাবিষয়ক তথ্য আদান-প্রদান করে। কোচিং বা অনলাইন টিউটোরিয়ালেও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। তারা মনে করে, শ্রেণিকক্ষে ডিজিটাল কনটেন্ট ব্যবহারে পাঠ আরও আকর্ষণীয় হয় এবং বিষয়বস্তুকে সহজে বোঝা যায়। শিক্ষার্থীরা এই বিশ্বাসও রাখে যে প্রযুক্তি শিক্ষককে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না বা এটি শিক্ষকদের বিকল্প হবে না; বরং শিক্ষকের দক্ষতাকে সমৃদ্ধ করতে পারে।

তবে দুঃখজনকভাবে এসব কলেজে ডিজিটাল লাইব্রেরি, উচ্চগতির ইন্টারনেট, পর্যাপ্ত মাল্টিমিডিয়া কক্ষ ও সুনির্দিষ্ট পাঠপরিকল্পনার অভাব রয়েছে। শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও চেষ্টা থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানিক কাঠামোর দুর্বলতার কারণে তারা তাদের সেই আগ্রহ ও সক্ষমতাকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারছে না।

গৌরনদীতে বসেই বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের কাছে অনলাইনে পড়তে পারছে এই ছাত্রীরা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র অন ক দ র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’

নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রান্তিক চরের মানুষের জীবনযাপন, মানবিকতা ও ধর্মীয় সহাবস্থানের চিত্র নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’। প্রশংসিত এই চলচ্চিত্র জায়গা করে নিয়েছে ‘কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর পঞ্চম আসরে। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে আজ থেকে শুরু হওয়া এই উৎসবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের এই আলোচিত চলচ্চিত্রটি। 

৭ দিনব্যাপী এ উৎসবে মিসর, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান ও ভারতের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রদর্শিত হবে ‘নয়া মানুষ’, যা বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিচ্ছে উৎসবে। 

আরো পড়ুন:

দুই গায়িকার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দ্বন্দ্ব চরমে

সমালোচনা নিয়ে মুখ খুললেন ভাবনা

২০২৪ সালের ৬ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়া ‘নয়া মানুষ’ দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকে প্রশংসা কুড়ায়। আ. মা. ম. হাসানুজ্জমানের লেখা ‘বেদনার বালুচরে’ উপন্যাস অবলম্বনে চলচ্চিত্রটির সংলাপ ও চিত্রনাট্য লিখেন মাসুম রেজা। 

চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন রওনক হাসান, মৌসুমী হামিদ, আশীষ খন্দকার, ঝুনা চৌধুরী, শিখা কর্মকার, নিলুফার ওয়াহিদ, বদরুদ্দোজা, মাহিন রহমান, নাজমুল হোসেন, স্মরণ সাহা, সানজানা মেহরান ও শিশুশিল্পী ঊষশী। 

উৎসবে অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গল্পকার ও অভিনেতা আ. মা. ম. হাসানুজ্জমান বলেন, “আমি যখন গল্পটি লিখি, তখন এত কিছু ভাবিনি। কিন্তু চলচ্চিত্রটি দর্শক দেখার পর যে ভালোবাসা পাচ্ছি, তা সত্যিই অকল্পনীয়। ‘নয়া মানুষ’ ধর্মীয় উন্মাদনার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করছে, শান্তির বার্তা দিচ্ছে, ধর্মের প্রকৃত দর্শন তুলে ধরছে—এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।” 

চলচ্চিত্রটির নির্মাতা সোহেল রানা বয়াতি বলেন, “আমার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘নয়া মানুষ’ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎসবে অংশ নিচ্ছে—এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। কাশ্মীর ফেস্টিভ্যালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ‘নয়া মানুষ’ অংশ নিচ্ছে, যা দেশের চলচ্চিত্রের জন্যও একটি বড় সাফল্য।” 

চাঁদপুরের দুর্গম কানুদীর চরে চিত্রগ্রহণ করা হয়েছে চলচ্চিত্রটির। চিত্রগ্রহণ পরিচালনা করেছেন কমল চন্দ্র দাস। সিনেমাটির সংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন বাউল শফি মণ্ডল, চন্দনা মজুমদার, বেলাল খান, অনিমেষ রয়, মাসা ইসলাম ও খাইরুল ওয়াসী। সংগীত পরিচালনা করেছেন ইমন চৌধুরী, মুশফিক লিটু ও শোভন রয়। 

মানবতার বার্তা, ধর্মীয় সহনশীলতা ও জীবনবোধের অনন্য মেলবন্ধন নিয়ে ‘নয়া মানুষ’ এবার বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে দিচ্ছে শান্তি ও সহমর্মিতার বার্তা।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ