মেঘনায় নৌ দুর্ঘটনায় ৪ জন নিহতের ঘটনায় একজনের স্ত্রীর মামলা
Published: 12th, January 2025 GMT
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় মেঘনা নদীতে স্পিডবোট ও কাঠের নৌকার মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত ৯টার দিকে অজ্ঞাত স্পিডবোটের চালককে আসামি করে গজারিয়া থানায় মামলাটি করেন নিহত অদুদ ব্যাপারীর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসী।
মামলার বিষয়টি আজ রোববার সকালে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার আলম আজাদ। তিনি বলেন, নিহত অদুদ ব্যাপারী ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকায় ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ, ওদুদসহ দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা রাতের আধারে নৌকায় করে মেঘনা নদী পার হচ্ছিলেন। সে সময় স্পিডবোট তাঁদের নৌকায় উঠে যায়। এতে কাঠের নৌকার চার যাত্রী মারা যান। ওই স্পিডবোটের অজ্ঞাত চালককে আসামি করে মামলাটি করা হয়।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি রাতে গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নে মেঘনা নদী থেকে নয়ন ও পিয়াসের লোকজন খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু লুট করে আসছিলেন। বালু উত্তোলনের সময় তাঁরা নিজস্ব কয়েকটি স্পিডবোট ও কাঠের ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে মেঘনা নদীর বিভিন্ন অংশে মহড়া দেন। গত শুক্রবার রাতে দুর্ঘটনাকবলিত স্পিডবোট ও নৌকাটি বালুমহালের অবৈধ বালু উত্তোলনে মহড়া ও বালু নিতে আসা বাল্কহেডগুলো নিয়ন্ত্রণের কাজ করছিল। রাতে অন্ধকার ও কুয়াশার কারণে স্পিডবোট ও ট্রলার একটি অন্যটিকে দেখতে না পাওয়ার কারণে সংঘর্ষ হয়। পরে স্থানীয় লোকজন ও জেলেরা সংঘর্ষের শব্দ পেয়ে ঘটনাস্থলে থেকে হতাহতদের উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান।
দুর্ঘটনার পরপরই পিয়াসের বড় ভাই গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের অদুদ ব্যাপারী (৩৫), মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চর ঝাপটা এলাকার মো.
গজারিয়া থানা সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় যাঁরা হতাহত হয়েছেন, তাঁরা সবাই অবৈধভাবে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ঘটনার সময় তাঁরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বাল্কহেডের মাধ্যমে বিক্রির কাজে সহযোগিতা করছিলেন। নিহত অদুদ ব্যাপারী বিরুদ্ধে গজারিয়া থানায় মাদক, মারামারি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ঘটনায় ১০টি মামলা আছে। কয়েকটি মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া নিহত মো. বাবুল পাঁচটি মামলার আসামি ছিলেন।
আরও পড়ুনমেঘনা নদীতে দুই স্পিডবোটের সংঘর্ষে নিহত ৩১১ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনমেঘনায় নৌ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ যুবকের লাশ উদ্ধার, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪১৬ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫