সোনারগাঁয়ে জমি দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১১ জন আহত হয়েছেন। শনিবার দিবাগত রাতে উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের পাকুন্দা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এলাকাবাসী জানায়,  পাকুন্দা এলাকার  এশিয়ান হাইওয়ে রাস্তার পাশে একটি জমি দখলকে কেন্দ্র করে এই ঘটনার সূত্রপাত হয়।এই ঘটনায় ৩১ শে ডিসেম্বর  সোনারগাঁ থানায়  একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী মকবুল হোসেন ভূইয়া। 

অভিযোগ পেয়ে  ঘটনাস্থলে তালতলা তদন্ত কেন্দ্রের এসআই সোহেল রানা ঘটনান্থল পরিদর্শন করে দুই পক্ষকে সমাধানের জন্য  ১৭  জানুয়ারি তালতলা তদন্ত কেন্দ্রে বসার আহ্বান জানালে , দুই পক্ষ এতে রাজী হন। 

পরবর্তীতে মকবুল হোসেন এর বিবাদী পক্ষ প্রশাসনের কথা অমান্য করে এবং ১৪৫ দ্বারা লঙ্ঘন করে ৯ জানুয়ারি ১নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ইব্রাহীম মিয়ার নেতৃত্বে জমি দখলে গেলে সংঘর্ষ বাঁধে। এতে আহত হন  মুকুল হোসেন এবং সামির হোসেন।

তাঁরই জের ধরে ১১ জানুয়ারি (শনিবার) সন্ধ্যায় আবার দুই গ্রুপের সংঘর্ষ বাঁধে, এতে দুই দুই গ্রুপের প্রায় ১১জন আহত হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এই বিষয়ে মুকবুল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে মুকবুল হোসেন বলেন, আমবাগ গ্রামে প্রয়াত আবু সিদ্দিক মোল্লা স্মৃতি নাইট ডিগবার টুর্নামেন্টে আমাদের ফাইনাল খেলা ছিল।

সেখানে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান, সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন, জামপুর ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি মুজাহিদ মল্লিক সহ উপজেলা বিএনপির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ছিলেন। 

আমরা খেলায় জয়লাভ করি পরে আনন্দ মিছিল করে বাড়ি ফিরছিলাম। পথে  ওৎ পেতে থাকা একদল সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের দালাল ইব্রাহীম মেম্বারের নেতৃত্বে ইসমাইল, মোহাম্মদ আলী, সাকিব, নিজাম সরকার, কাজীন, সাব্বিরসহ অজ্ঞাত ১০/১৫ জনের একটি সন্ত্রাসী দল, রাম দা, চাইনিজ কুড়াল ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। 

এতে আমাদের মেহেদী হাসান, উজ্জ্বল, মুকবুল হোসেন ভূঁইয়া, মোহাম্মদ হোসেন, আওলাদ হোসেন, আঁখি বেগম, মুকুল ভূঁইয়া, সামির হোসেনসহ প্রায় ৮ জন আহত হয়। পরে সন্ত্রাসী দল আমার বাড়িতে গিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে তবে মুকুল ভূঁইয়া এবং উজ্জ্বল ভূঁইয়ার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তালতলা পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ ফেরদৌস আহমেদ বলেন, অভিযোগ পাওয়া হয়ছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে, তদন্ত পূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ