শিল্প প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ
Published: 12th, January 2025 GMT
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে শিল্প প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কমেছে। ঋণের উচ্চ সুদহার এবং বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি সবকিছু মিলিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান তার পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে পারছে না। উৎপাদন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। চাহিদামতো এলসি খোলা যাচ্ছে না। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি মাত্র ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এ অবস্থায় নতুন সংযোগে গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। আবার আইএমএফের সুপারিশে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর কর ও ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড.
সভায় বিসিআই সভাপতি বলেন, বাংলাদেশে কোম্পানিগুলোর জন্য কোনো এক্সিট পলিসি বা প্রস্থান নীতি নেই। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে ‘এক্সিট পলিসি’ থাকা দরকার। তিনি প্রস্থান নীতির জন্য বড় শিল্পের জন্য ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট, এক বছরের স্থগিতাদেশসহ ১২ বছর মেয়াদে ঋণ পরিশোধের প্রস্তাব করেন। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ১ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট, এক বছরের স্থগিতাদেশসহ ১৫ বছরের মেয়াদ, প্রস্থান নীতির জন্য পৃথক সার্কুলার এবং ঋণ পরিশোধের জন্য বন্ধকি সম্পত্তি বিক্রি করার অনুমতির সুপারিশ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, তারাও মনে করেন এক্সিট পলিসি থাকা দরকার। এ জন্য ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে করা নীতি করা সম্ভব হবে।
সভায় শিল্প খাতের সমস্যা তুলে ধরেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, উত্তরা মোটরসের চেয়ারম্যান ও ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান, বিজিএমইএ প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি নাজমুল হাসান সোহেল, সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হাসান, বারভিডা সভাপতি আব্দুল হক, কোকা-কোলা বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাদাব আহমেদ, বিসিআইর ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি প্রীতি চক্রবর্তী প্রমুখ।
বিসিআই সভাপতি বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্পে নগদ সহায়তা পেতে আবেদনের পর ৯ মাস থেকে ১ বছর সময় লাগছে। যার ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠান সময়মতো তাদের পরিচালন ব্যয় মেটানো এবং কর্মীদের বেতনাদি পরিশোধ করতে পারছে না। নগদ সহায়তা প্রদানের সময়সীমা ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে নামিয়ে আনা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ব্যাংকে একক গ্রাহকের ঋণসীমা ফান্ডেড ১৫ শতাংশ এবং নন-ফান্ডেড ১০ শতাংশ রয়েছে। এখানে টাকার অবমূল্যায়নকে আমলে নেওয়া হচ্ছে না। ফান্ডেড অংশ ২৫ শতাংশে রাখা উচিত। এ ছাড়া তিনি ঋণ শ্রেণীকরণের সময়সীমা আগের মতো ৬ মাস রাখার প্রস্তাব করেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে সিএমএসই খাত সব থেকে ক্ষতির মুখে পড়েছে। সিএমএসই খাতকে টিকিয়ে রাখতে ব্যবস্থা নিতে হবে। সিএমএসই খাতের বিশেষ তহবিল এবং নিম্ন সুদে সুদের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ খাতে একটি জেলা বা একটি ক্লাস্টার পাইলট ধরে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অর্থায়ন করা যেতে পারে।
গভর্নর ব্যবসায়ীদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল লক্ষ্য এখন মূল্যস্ফীতি কমানো। আশা করা যায়, আগামী জুন নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে থাকবে। বেসরকারি খাতে অর্থ প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। কিন্তু আমানত তেমন বাড়ছে না। আমানতের প্রবৃদ্ধি মাত্র ৭ শতাংশ। অর্থ প্রবাহ বাড়াতে হলে আমানত বাড়াতে হবে।
আহসান মনসুর বলেন, ‘বর্তমানে ডলারের সংকট নেই। অর্থনীতি স্বাভাবিক হচ্ছে; কিন্তু একটু সময় লাগবে। আগামী রমজানে যাতে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে আমাদের লক্ষ্য আছে এবং আমরা সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমি মনে করি, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের জন্য বন্ড মার্কেটে যেতে হবে। আমাদের করপোরেট বন্ডের জন্য কাজ করতে হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে হামলা: ট্রাম্প ৬০ দিনের সময়সীমার কথা বলছেন, সেটি কী?
ইরানকে ৬০ দিনের সময় বেঁধে (আলটিমেটাম) দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সময়সীমা শেষ হওয়ার পরদিনই দেশটিতে ভয়াবহ হামলা চালাল যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েল। আজ শুক্রবার ট্রাম্প নিজেই ওই সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার কথা জানান।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চলতি বছরের শুরুর দিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। সেই চিঠিতে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসার বিষয়ে একটি চুক্তিতে রাজি হতে চাপ দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। চুক্তিতে পৌঁছাতে ওয়াশিংটন–তেহরান আলোচনা সফল করতে ৬০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল সেই চিঠিতে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ইরান চুক্তি নিয়ে প্রথম দফার আলোচনা ১২ এপ্রিল শুরু হয়েছিল। সেদিন থেকেই এই ৬০ দিনের সময়সীমা গণনা শুরু হয়। সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার পরদিন গতকাল বৃহস্পতিবার ১২ জুন ইসরায়েল হামলা চালাল ইরানের অন্তত ৮টি শহরে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আজ সিএনএনের সাংবাদিক ডানা বাসকে বলেন, ‘আমার কথা শোনা উচিত ছিল ইরানের। যখন আমি বলেছিলাম—আপনি জানেন, আমি ওদের ৬০ দিনের এক সতর্কবার্তা দিয়েছিলাম, আপনি জানেন কি না, জানি না, কিন্তু আমি ওদের ৬০ দিনের সময়সীমা দিয়েছিলাম, আর আজ ৬১তম দিন।’
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনির উদ্দেশে পাঠানো চিঠির প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ট্রাম্প ইরানকে সম্ভাব্য সামরিক অভিযানের বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।
বছরের শুরুর দিকে ফক্সনিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চিঠির প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমি আশা করি, ইরান আলোচনায় আসবে—আমি তাদের চিঠি লিখে জানিয়েছি, আমি আশা করি, তোমরা আলোচনা করবে। কারণ, আমাদের যদি সামরিকভাবে হস্তক্ষেপ করতে হয়, তাহলে সেটা ইরানের জন্য ভয়াবহ হবে।’
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, আমি আশা করি, তোমরা আলোচনা করবে। কারণ, সেটা ইরানের জন্য অনেক ভালো হবে।’
ইরানের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা এবং আলোচনায় জড়িত ব্যক্তিরা জানতেন যে সময়সীমা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য চাপ ক্রমেই বাড়ছিল। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা আগে বলেছিলেন, ৬০ দিনের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও আলোচনা চলবে। কিন্তু এখন ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর হামলা চালানোর পর এই আলোচনার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে—যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে জোর দিচ্ছেন।