গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় এক শিক্ষককে ধরে এনে মারধরের ঘটনায় জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম ওরফে রনিকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল রোববার দিবাগত রাতে যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

অন্যদিকে এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বসির উদ্দিনের স্ত্রী সিফাত-ই মনোয়ার বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় ৬ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ৭ থেকে ৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকালে চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকার বঙ্গবন্ধু সরকারি বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে সহকারী শিক্ষক বসির উদ্দিন ও প্রধান শিক্ষক আনন্দ কুমার সাহা গল্প করছিলেন। এ সময় উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রিপন আহমেদ, যুবদল কর্মী রাকিব হাসানসহ কয়েকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে ঢোকেন। পরে সহকারী শিক্ষক বসির উদ্দিনকে জোর করে ধরে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক যুবদল নেতা রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০-১২ জন যুবদল কর্মী এলোপাতাড়ি মারধর করেন। এ সময় বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী রিজভী আহামেদ দেখতে পেয়ে রক্ষা করতে গেলে তাঁকেও এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করেন হামলাকারীরা। পরে বিদ্যালয়ের দপ্তরিসহ আশপাশের লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

স্কুলশিক্ষকসহ দুজনকে পিটিয়ে জখম করার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে রাতেই জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলামকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে দলের সিদ্ধান্তে রাশেদুলকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্যদের বিরুদ্ধেও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কালিয়াকৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জামিল হোসেন বলেন, শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।

আরও পড়ুনগাজীপুরে বিদ্যালয়ের অফিস থেকে শিক্ষককে ধরে এনে যুবদল নেতার মারধর১৯ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ

বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।

এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।

৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।

এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্‌ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।

কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ