গাজীপুরে শিক্ষককে মারধর, যুবদল নেতা বহিষ্কার, বহাল রিপন, রাকিব
Published: 13th, January 2025 GMT
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় এক শিক্ষককে ধরে এনে মারধরের ঘটনায় জেলা যুবদলের এক নেতাকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে অভিযোগ উঠেছে, একই ধরনের অপরাধ করে বহালে রয়েছেন উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রিপন আহমেদ ও যুবদল কর্মী রাকিব হাসান।
রবিবার দিবাগত রাতে রাশেদুল ইসলাম ওরফে রনিকে বহিষ্কার করে পত্র দিয়েছেন বিএনপির যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া।
অপরদিকে ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষকের স্ত্রী সিফাত-ই মনোয়ার বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকার বঙ্গবন্ধু সরকারি বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে প্রধান শিক্ষক আনন্দ কুমার সাহার সঙ্গে সহকারী শিক্ষক বশির উদ্দিন গল্প করছিলেন। এ সময় কালিয়াকৈর উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রিপন আহমেদ, যুবদল কর্মী রাকিব হাসানসহ কয়েকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে প্রবেশ করেন। তারা বশির উদ্দিনকে জোর করে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে নিয়ে যান। সেখানে জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল ইসলাম ওরফে রনির নেতৃত্বে কয়েকজন যুবদলকর্মী তাকে মারধর করে। এ সময় বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রিজভী আহমেদ শিক্ষককে উদ্ধার করতে গেলে তাকেও পিটিয়ে জখম করে হামলাকারীরা। পরে বিদ্যালয়ের দপ্তরিসহ আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
ওই ঘটনায় রাতেই সিফাত-ই মনোয়ার বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত সাত-আট জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ দিকে যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক পত্রে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগে রনিকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করে যুবদলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আতাউর রহমান বলেন, ‘‘তাৎক্ষণিকভাবে দলের সিদ্ধান্তে রনিকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্যদের বিরুদ্ধেও গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’’
কালিয়াকৈর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জামিল হোসেন বলেন, ‘‘শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।’’
রেজাউল//
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
হবিগঞ্জে ছোট-বড় মিলেয়ে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।
চা বাগানে একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়। এর বিনিময়ে মজুরি পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো বাগানে নিয়মিত এই মজুরিও দেওয়া হয় না।
শ্রমিকদের দাবি, দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করতে হবে। বর্তমানে যে মজুরি পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলে না। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে চা শ্রমিকদের নৈমিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।
আরো পড়ুন:
বৈষম্য কেন? নারী শ্রমিকেরা পান না সমান মজুরি
ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা
সরেজমিনে কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা ছোট্ট কুঠুরিতে গাদাগাদি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করেন। পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, দু-বেলা পেটভরে খেতে পারেন না।
শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘‘দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠনের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধির বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে বৈঠক হয়েছে। সে সময় ৮ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে মজুরি ১৭৮ টাকা ৫০ নির্ধারিত হয়েছে।’’
শ্রমিকদের কষ্টের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই টাকায় চলা যায় না। দেশের কোথাও এতো সস্তা শ্রমের দাম নেই। বর্তমানে একজন কৃষিশ্রমিক দিনে ৫০০-১০০০ টাকা আয় করেন, একজন রিকশাচালকের প্রতিদিনের আয় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে একজন চা শ্রমিক পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। এজন্য তাকে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়।’’
চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নাটক ও গানের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসা জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘দৈনিক ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরিতে শ্রমিকদের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অচিরেই মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। এছাড়া, শ্রমিকদের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’’
ঢাকা/রাজীব