ব্যাংকের শাখা খুলে সেবা দিতে যে পরিমাণ খরচ হয়, তাতে সব জায়গায় পোষানো যায় না। যে কারণে নানা উদ্যোগের পরও ব্যাংকগুলোর মধ্যে গ্রামমুখী প্রবণতা কম ছিল। এতে করে ব্যাংকিং সেবার বাইরেই ছিল প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক মানুষ। আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে ১১ বছর আগে চালু হয় এজেন্ট ব্যাংকিং। গ্রাম অঞ্চলকে কেন্দ্র করেই এ সেবা বড় হচ্ছে। 

এজেন্ট ব্যবস্থায় এখন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ২ কোটি ৩৯ লাখ। এর মধ্যে ২ কোটি ৫ লাখই গ্রামীণ এলাকায়। আর সারাদেশে যে ২১ হাজার এজেন্ট আউটলেট খোলা হয়েছে, এর ৮৬ শতাংশই গ্রামে। মোট আমানতের ৮১ শতাংশ এসেছে গ্রাম থেকে। ঋণেরও বেশির ভাগ বিতরণ হয়েছে সেখানে। সবচেয়ে আশার বিষয় হলো, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মোট অ্যাকাউন্টের ৫০ শতাংশের বেশি নারীর।
ইউএনডিপির সহায়তায় বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর উদ্যোগ শুরু হয় ২০১৩ সালে। ওই বছর পরীক্ষামূলকভাবে বিশেষায়িত ব্যাংকিং সেবা হিসেবে এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর অনুমোদন পায় বেসরকারি খাতের ব্যাংক এশিয়া। এর পর ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর একটি নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নীতিমালা জারির কিছু দিনের মধ্যে ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে ব্যাংক এশিয়া। যে কারণে দিনটি এখন এজেন্ট ব্যাংকিং দিবস হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী মুন্সীগঞ্জ জেলার জৈনসার ইউনিয়নে প্রথম এজেন্ট আউটলেট খোলা হয়। 
১১ বছর আগে বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু হলেও ১৯৯৯ সালে বিশ্বে প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করে ব্রাজিল। এ ছাড়া কলম্বিয়া, পেরু, মালয়েশিয়া, কেনিয়া, মেক্সিকো, ভেনেজুয়েলা, ইকুয়েডর, আর্জেন্টিনাসহ কয়েকটি দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু আছে। এসব দেশেও কম খরচের এ সেবার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো।

যে কারণে এজেন্ট ব্যাংকিং 
শাখা খুলে ব্যাংকিং সেবা দেওয়া অনেক ব্যয়বহুল। বিশেষ করে লোকবল, জায়গা ভাড়া, সাজসজ্জা, নিরাপত্তাসহ সব মিলিয়ে শাখার পেছনে যে পরিচালন ব্যয় হয়, তা পুষিয়ে মুনাফা করা অনেক ক্ষেত্রে কঠিন। যে কারণে ব্যাংকগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে শাখা খুলতে আগ্রহ দেখায় না। এরকম বাস্তবতা মাথায় রেখে প্রত্যন্ত গ্রাম, চর, দ্বীপসহ সুবিধাবঞ্চিত এলাকার মানুষকে সেবার আওতায় আনতে এজেন্ট ব্যাংকিং বা প্রতিনিধি ব্যাংকিংয়ের ধারণা এসেছে। ব্যাংকের পক্ষে একজন উদ্যোক্তা এজেন্ট হিসেবে নির্ধারিত কমিশনের বিনিময়ে সেবা দিয়ে থাকেন। প্রায় সব ধরনের ব্যাংকিং সেবা পাওয়া যায় এখান থেকে। ব্যাংকের নির্ধারিত একটি শাখার তত্ত্বাবধানে প্রতিটি এজেন্ট আউটলেট পরিচালিত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সাধারণত ব্যাংকের শাখা নেই– এরকম এলাকায় এজেন্ট অনুমোদন দিয়ে থাকে। যে কারণে গ্রামকে কেন্দ্র করেই এজেন্ট ব্যাংকিং বেড়ে উঠেছে।

দ্রুত বাড়ছে সেবা
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর পর্যন্ত ৩১টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন নিয়েছে। সারাদেশের ১৫ হাজার ৯৫৭ জন এজেন্টের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে ২১ হাজার ১৮৬ এজেন্ট আউটলেট। এর মধ্যে ১৮ হাজার ১৩১টি গ্রামে। গত নভেম্বর পর্যন্ত দেশে যেখানে ব্যাংকের শাখা রয়েছে ১১ হাজার ৩৩৭টি। এর মানে গত ১১ বছরে ব্যাংক শাখার প্রায় দ্বিগুণ এজেন্ট আউটলেট প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মোট এজেন্ট আউটলেটের মধ্যে প্রথম শুরু করা ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট এখন ৫ হাজার ৪৯টি। বিভাগ ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি এজেন্ট রয়েছে ঢাকা বিভাগে। ঢাকার ৪ হাজার ৭৪৯ এজেন্টের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে ৫ হাজার ৩৩৩টি আউটলেট। আর সর্বনিম্ন ময়মনসিংহ বিভাগে ৮৫৭ এজেন্ট পরিচালনা করছেন ১ হাজার ২০৩টি আউটলেট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চট্টগ্রামের ৩ হাজার ৭১১ এজেন্ট ৪ হাজার ৭৪৯টি আউটলেট পরিচালনা করছেন। পর্যায়ক্রমে খুলনার ১ হাজার ৯৮৭ এজেন্ট ২ হাজার ৬২৫টি, রাজশাহীর ১ হাজার ৮৭৮ এজেন্ট ২ হাজার ৫৪২টি, বরিশালের ১ হাজার ৭৬ এজেন্ট ১ হাজার ৪০২টি, রংপুরের ১ হাজার ৪৪২ এজেন্ট ২ হাজার ১৩০টি এবং সিলেটে ৯১৯ এজেন্ট ১ হাজার ২০২টি আউটলেট পরিচালনা করছেন।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে এখন গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৩৮ লাখ ৮৬ হাজার। এর মধ্যে ২ কোটি ৫ হাজার বা ৮৫ দশমিক ৬৫ শতাংই গ্রামীণ এলাকায়। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অর্ধেকের বেশি অ্যাকাউন্ট নারীদের। গত নভেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি ১৮ লাখ ২১ হাজার অ্যাকাউন্ট নারীর। পুরুষের যেখানে ১ কোটি ১৬ লাখ ৮৭ হাজার অ্যাকাউন্ট। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ৪০ হাজার ২২৪ কোটি টাকার আমানত স্থিতি রয়েছে। এই আমানতের মধ্যে ৩২ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা গ্রামে। মোট আমানতের যা ৮১ দশমিক ১৪ শতাংশ। গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণ দাঁড়িয়েছে ৯৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬২৩ কোটি টাকা বা ৬৪ দশমিক ২৭ শতাংশই পেয়েছে গ্রামের মানুষ। নভেম্বর মাসে এ ব্যবস্থায় ২ হাজার ১৯১ কোটি টাকার রেমিট্যান্স বিতরণ হয়েছে। ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা হয়েছে ১০৬ কোটি টাকা।

এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে সাধারণ জিজ্ঞাসা
এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ১১ বছর পার হলেও এ নিয়ে নানা সাধারণ জিজ্ঞাসা রয়েছে। এজেন্টের মাধ্যমে টাকা জমা দিলে মার যাবে কিনা, সুদ কম পাওয়া যাবে কিনা বা বাড়তি চার্জ লাগবে কিনা– এসব নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেন। ব্যাংকের সাধারণ শাখা ও এজেন্টের মধ্যে সেবার ধরন, নিরাপত্তা এবং সেবার মাশুলে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। কোনো কারণে এজেন্ট পালিয়ে গেলেও ব্যাংক গ্রাহকের জমানো টাকা দিতে বাধ্য। 

এজেন্ট থেকে প্রায় সব ধরনের সেবা পাওয়া যায়। বৈদেশিক বাণিজ্যিক লেনদেন করা যায় না। দেশের বাইরে থেকে রেমিট্যান্স পাঠালে তা গ্রহণ করা যায়। অবশ্য এজেন্ট আউটলেটগুলো বড় ঋণ দিতে পারে না। নিরাপত্তার স্বার্থে জমা ও উত্তোলনের একটি সীমা আছে। তবে এজেন্ট আউটলেট থেকে সঞ্চয়ী, চলতি বা মেয়াদি আমানত হিসাব খোলা যায়। দেশের যে কোনো প্রান্তে টাকা পাঠানো বা গ্রহণ করা যায়। বিভিন্ন ধরনের বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা পরিশোধ এবং অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তরের সুযোগ তো আছেই। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লেনদেন নিরাপদ ও স্বচ্ছ করতে বায়োমেট্রিক তথা আঙুলের ছাপ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। শুধু গ্রাহক নয়, একজন এজেন্ট দৈনিক সর্বোচ্চ কী পরিমাণ লেনদেন করতে পারবেন, ব্যাংক থেকে তার একটি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
ব্যাংক শাখার মতোই যে কোনো এজেন্ট আউটলেটে গিয়ে আপনি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। এ জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা অন্য যে কোনো গ্রহণযোগ্য পরিচয়পত্রের কপি দিতে হবে। সঙ্গে নিতে হবে নিজের ও নমিনির ছবি। এর পর এজেন্টের মনোনীত প্রতিনিধি প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে বায়োমেট্রিক মেশিনে লগ ইন করে আপনার আঙুলের ছাপ নেবে। অ্যাকাউন্ট খোলা সম্পন্ন হয়ে হওয়ার পর আপনি ব্যাংক থেকে একটি এসএমএস পাবেন। এর পর সাধারণ শাখার মতোই টাকা জমা, উত্তোলন করতে পারবেন। এজেন্টের মাধ্যমেই আপনি এটিএম কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সাধারণভাবে এজেন্ট আউটলেটে খোলা অ্যাকাউন্টে দিনে দুইবার সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা জমা ও ৩ লাখ টাকা উত্তোলন করা যায়।

কারা এজেন্ট হতে পারেন
এজেন্ট ব্যাংকিং হলো সমঝোতা স্মারক চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগকৃত এজেন্টের মাধ্যমে ব্যাংকের গ্রাহকদের ব্যাংকিং সেবা দেওয়া। নিজস্ব বিক্রয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে– এমন ব্যক্তি ব্যাংকের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে পারেন। এজেন্ট হওয়ার জন্য ট্রেড লাইসেন্সসহ যে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকতে হবে। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি বা এমআরএতে নিবন্ধিত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান, সমাজসেবা অধিদপ্তরে নিবন্ধিত এনজিও বা সমবায় সমিতি আইন অনুযায়ী নিবন্ধিত সমিতি এজেন্ট হতে পারে। এ ছাড়া কোম্পানি, কুরিয়ার বা মেইলিং সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, এমএফএস এজেন্ট বা বীমা কোম্পানির এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট হতে পারে। অবশ্য আবেদনকারীর ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে এসএসসি বা সমমান। ঋণখেলাপি ব্যক্তি এজেন্ট হতে পারেন না। কোনো ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিকেও এজেন্ট নিয়োগ দিতে পারে না ব্যাংক। ব্যাংকগুলো নিয়ম মেনে কার্যক্রম করছে কিনা, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা তদারক করে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আউটল ট প ট পর চ ল

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ