বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার
Published: 17th, January 2025 GMT
বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। গতকাল বৃহস্পতিবার সংস্থাটির ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট ২০২৫-এ এই কথা বলা হয়েছে। ৫৪৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ১০০টির বেশি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক তিরানা হাসান তাঁর সূচনা নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে সরকারগুলো রাজনৈতিক বিরোধী কর্মী এবং সাংবাদিকদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার ও কারারুদ্ধ
করেছে। সশস্ত্র গোষ্ঠী ও সরকারি বাহিনী বেআইনিভাবে বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করেছে। অনেককে তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করেছে এবং মানবিক সহায়তা পাওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, নোবেলজয়ী ড.
২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে তিন সপ্তাহব্যাপী ছাত্র আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত বল প্রয়োগ ও নির্বিচারে গুলিবর্ষণে শতাধিক শিশুসহ এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং কয়েক হাজার আহত হয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারসম্মত ভবিষ্যতের দিকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। তবে আন্তর্জাতিক সহায়তা ও ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ছাড়া এ অগ্রগতি স্থায়ী নাও হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, গুমের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত ও ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর নাগরিক তত্ত্বাবধান প্রতিষ্ঠা অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের মানবাধিকার ইস্যুতে কয়েকটি বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে– অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার, তাদের আইনি অধিকার ও সঠিক বিচার প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ, বেআইনিভাবে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি বা তাদের পরিবারের কাছে তথ্য সরবরাহ করতে নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যর্থতা এবং মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে সশস্ত্র গোষ্ঠী ও সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের সহিংসতার শিকার হচ্ছে।
এইচআরডব্লিউ অন্তর্বর্তী সরকারকে মানবাধিকার মান অনুযায়ী সংস্থাগুলোকে সংস্কার করার আহ্বান জানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে– র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বাতিল, নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য স্বাধীন তত্ত্বাবধান ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা এবং রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার সঙ্গে কাজ করা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন শ চ ত কর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।