পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সম্পর্ক কি সহজে জোড়া লাগবে
Published: 20th, October 2025 GMT
২০২১ সালের আগস্টে যখন পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা কাবুলে তালেবানের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনকে স্বাগত জানিয়েছিলেন, তখন আফগানিস্তান-পাকিস্তান সম্পর্কের এমন নিম্নমুখী পরিস্থিতি কল্পনা করাও কঠিন ছিল। অন্তত তালেবান জামানায় এমন হবে, সেটা ভাবা যায়নি।
ইসলামাবাদের বিশ্বাস ছিল, তালেবান সরকার পাকিস্তানের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ হবে। তাদের নিরাপত্তার জন্য যেকোনো হুমকির বিরুদ্ধে একটি রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে। সর্বোপরি, পাকিস্তানের সামরিক ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দুই দশকের বেশি সময় ধরে আফগান তালেবান আন্দোলনকে সমর্থন দিয়েছিল।
২০০১ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে আক্ষরিক অর্থেই পাকিস্তানের বিপরীতমুখী একটা পররাষ্ট্রনীতি ছিল। একদিকে, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপে সমর্থন দিয়ে পাকিস্তান দেশ শাসনকারী মার্কিন-সমর্থিত সরকারগুলোকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। একই সময়ে, গোপনে পাকিস্তানি ভূখণ্ডের অভ্যন্তরে তালেবানের পুনরুত্থানকে সমর্থন দিয়েছে ইসলামাবাদ, এমনকি নানাভাবে সুযোগও করে দিয়েছে।
এ সময় অন্যান্য পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে তালেবানের সহাবস্থানও উল্লেখ করার মতো বিষয় ছিল। তবে এই সপ্তাহে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানি বিমানবাহিনী কাবুলে নির্দিষ্ট নিশানায় হামলা চালানোর পর সেই সম্পর্ক এখন ভেঙে পড়েছে।
পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের পারস্পরিক প্রত্যাশার মধ্যে স্পষ্ট অমিল এবং একে অপরের সক্ষমতাকে অবজ্ঞা করার কারণে একসময়ের সেই সম্পর্ক জোড়া লাগানো আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
দুই দেশের ঝুঁকির মধ্যে কী আছেপাকিস্তানের নিরাপত্তা সংস্থা বিশেষ করে সেনাবাহিনী এবং দেশের শক্তিশালী সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই), দেশের আফগান নীতি প্রণয়ন ও পরিচালনা এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। ঐতিহাসিকভাবে, পাকিস্তানে যখন সামরিক শাসন ছিল না, তখনো বেসামরিক প্রশাসনের ওপর সেনাবাহিনী উল্লেখযোগ্য প্রভাব বজায় রেখেছে।
২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে পাকিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর নজিরবিহীন একের পর এক হামলা হচ্ছে। সেসব হামলা মোকাবিলা করতে হচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনীকে। ২০২৫ সালের প্রথম তিন প্রান্তিকে ২ হাজার ৪০০ জনের বেশি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যের মৃত্যুর ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। এটি গত বছর পাকিস্তানজুড়ে হামলায় নিহত প্রায় ২ হাজার ৫০০ জনের মোট সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার পথে।
বেশির ভাগ হামলার জন্য তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) নামে পরিচিত পাকিস্তানি তালেবানকে দায়ী করেছে পাকিস্তান। এই গোষ্ঠীর নেতারা এখন আফগানিস্তানে অবস্থান করছেন। টিটিপির সদস্যরা মূলত আফগান সীমান্তের কাছে পাকিস্তানের উপজাতীয় এলাকার বাসিন্দা।
পাকিস্তান আশা করেছিল, কাবুলে পাকিস্তানপন্থী তালেবান সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে টিটিপি নেতারা আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যাবেন। কিছু টিটিপি যোদ্ধা পাকিস্তানে ফিরেও এসেছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু তাতে সহিংসতার কোনো কমতি হয়নি।
টিটিপি ওই অঞ্চলে ইসলামী আইনের বাস্তবায়ন এবং আফগানিস্তান সীমান্তবর্তী উপজাতীয় এলাকাগুলোর আধা-স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের দাবি করে আসছে।
দেশের অভ্যন্তরে পাকিস্তানের জন্য মারাত্মক ও ক্রমাগত বিদ্রোহ মোকাবিলা করা বড় এক জাতীয় নিরাপত্তাসংকটে পরিণত হয়েছে। দেশটি আরও কয়েকটি সংকটে জর্জরিত। যেমন—খুঁড়িয়ে চলা অর্থনীতি, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের সঙ্গে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সে সঙ্গে ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অসন্তোষ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
আফগানিস্তানের তালেবান নেতারা জোর দিয়ে বলছেন, টিটিপি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, যা তাদেরই সমাধান করতে হবে। ২০২২ সালে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠনের পরপরই তালেবান সরকার কাবুলে টিটিপি নেতা এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মধ্যে আলোচনার মধ্যস্থতা করেছিল। একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে অগ্রগতির প্রাথমিক ইঙ্গিতের পর সেই আলোচনা ব্যর্থ হয়।
কঠোর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে অত্যন্ত অনুন্নত ও অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্র একটি দেশ শাসনের বাস্তবতা তালেবান সরকারের জন্য বেশ নির্মম এক অভিজ্ঞতা। কাবুলে ক্ষমতা দখলের চার বছরের বেশি সময় পর একমাত্র রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবান প্রশাসনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
চীন, ভারত ও ইরানসহ বেশ কিছু দেশ এই গোষ্ঠীকে আফগানিস্তানের শাসক হিসেবে স্বীকার করেছে এবং তাদের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের আতিথেয়তা দিচ্ছে। তবে এখনো কেউ আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি।
অর্থনীতির দুরবস্থার কারণে আফগানরা ভুগছেন। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা পরিষেবার মতো সরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার দ্বারপ্রান্তে। মারাত্মক খাদ্যঘাটতি এবং মানবিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে আফগানরা কষ্ট পাচ্ছেন। কারণ, জাতিসংঘ-পরিচালিত সাহায্য সংস্থাগুলো তহবিল সংকটে পড়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত এসব চ্যালেঞ্জকে আরও গভীর করতে পারে।
পাকিস্তান বন্ধ করে দেওয়ায় আফগানিস্তানের নাগরিকেরা তাদের জিনিসপত্রসহ গাড়ি পার্ক করে রেখেছে। ১২ অক্টোবর ২০২৫, পাকিস্তানের চামন সীমান্তের উল্টোদিকে আফগান ভূখণ্ড.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন র ত ল ব ন সরক র র জন য সমর থ ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
বিএসআরএমের দুই কোম্পানির ১,১৩২ কোটি টাকার রেকর্ড মুনাফা
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইস্পাত খাতের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বিএসআরএম গ্রুপের দুই কোম্পানির মুনাফা হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। কোম্পানি দুটি হলো বিএসআরএম লিমিটেড ও বিএসআরএম স্টিল। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই দুটি কোম্পানি সম্মিলিতভাবে ১ হাজার ১৩২ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এর মধ্যে বিএসআরএম লিমিটেডের মুনাফা ৬১৪ কোটি টাকা এবং বিএসআরএম স্টিলের মুনাফা ৫১৮ কোটি টাকা।
গত শনিবার কোম্পানি দুটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে মুনাফার এই হিসাব চূড়ান্ত করা হয়। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে গতকাল রোববার মুনাফার এই তথ্য শেয়ারধারীদের জানানো হয়। একই সভায় গত অর্থবছর শেষে শেয়ারধারীদের জন্য লভ্যাংশও ঘোষণা করা হয়েছে। দুটি কোম্পানি প্রতি শেয়ারের বিপরীতে শেয়ারধারীদের রেকর্ড ৫০ শতাংশ বা ৫ টাকা করে নগদ লভ্যাংশ দেবে।
আগের অর্থবছরের চেয়ে গত অর্থবছরে কোম্পানি দুটির সম্মিলিত মুনাফা বেড়েছে ৩২০ কোটি টাকা বা ৪০ শতাংশ।বিএসআরএম কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, এই প্রথমবার কোম্পানি দুটির সম্মিলিত মুনাফা ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত অর্থবছরে সম্মিলিতভাবে রেকর্ড ১ হাজার ১৩২ কোটি টাকার মুনাফা করেছে কোম্পানি দুটি। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কোম্পানি দুটির সম্মিলিত মুনাফা ছিল ৮১২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে বিএসআরএম লিমিটেড ও বিএসআরএম স্টিলের সম্মিলিত মুনাফা ৩২০ কোটি টাকা বা প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। কোম্পানি দুটির মধ্যে মুনাফা বেশি বেড়েছে বিএসআরএম লিমিটেডের। এক বছরের ব্যবধানে এই কোম্পানিটির মুনাফা ১৮২ কোটি টাকা বা ৪২ শতাংশ বেড়েছে। আর বিএসআরএম স্টিলের মুনাফা বেড়েছে ১৩৮ কোটি টাকা বা ৩৬ শতাংশ।
এদিকে কোম্পানি দুটি গত অর্থবছরের জন্য যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তাতে লভ্যাংশবাবদ বিএসআরএম লিমিটেড শেয়ারধারীদের দেবে ১৪৯ কোটি টাকা। আর বিএসআরএম স্টিল লভ্যাংশবাবদ গত অর্থবছরের জন্য শেয়ারধারীদের দেবে ১৮৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে দুই কোম্পানি মিলে শেয়ারধারীদের মধ্যে লভ্যাংশবাবদ বিতরণ করবে ৩৩৭ কোটি টাকা।
ডিএসইর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, হাজার কোটি টাকার বেশি রেকর্ড মুনাফার পর কোম্পানি দুটির মধ্যে একটি কোম্পানি শেয়ারধারীদের জন্য রেকর্ড লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। বিএসআরএম স্টিল সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল ২০২১ সালে। ডিএসইর ওয়েবসাইটে ২০০৯ সাল থেকে কোম্পানিটির লভ্যাংশের তথ্য রয়েছে। সেই তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে কখনোই বিএসআরএম স্টিল শেয়ারধারীদের ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ দেয়নি। তবে বিএসআরএম লিমিটেড ২০২১ সালে শেয়ারধারীদের ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। ২০২১ সালের পর এ বছর আবারও শেয়ারধারীদের ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে কোম্পানিটি।
জানতে চাইলে বিএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছরজুড়ে আমরা উৎপাদন খরচ কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি বিক্রিও বেড়েছে। এই দুই উদ্যোগের ফলে বছর শেষে কোম্পানি দুটি রেকর্ড মুনাফা করেছে। এর আগে কখনো এই দুই কোম্পানির সম্মিলিত মুনাফা হাজার কোটি টাকা ছাড়ায়নি।’
এদিকে গত অর্থবছরে রেকর্ড মুনাফার পর বিএসআরএম গ্রুপ ২০০ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগেরও ঘোষণা দিয়েছে। গত শনিবার কোম্পানিটির পর্ষদ সভায় বিনিয়োগের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কোম্পানিটি গতকাল ডিএসইর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে, বিএসআরএম ওয়্যারস লিমিটেড নামে নতুন কোম্পানির মাধ্যমে এই বিনিয়োগ করা হবে। এই বিনিয়োগের বিপরীতে নতুন কোম্পানির শেয়ারের মালিকানা পাবে বিএসআরএম লিমিটেড। দীর্ঘমেয়াদি মূল্য সংযোজনের লক্ষ্যে কৌশলগত এই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটি। এই বিনিয়োগে গঠিত কোম্পানিটি উচ্চমানের তারজাতীয় পণ্য উৎপাদন করবে।