ফতুল্লায় দুটি গার্মেন্টস কারখানায় হামলা, ভাংচুর
Published: 19th, January 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় দুুটি গার্মেন্টস কারখানায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করেছে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। রোববার (১৯ জানুয়ারি) দুপুরে তুচ্ছ ঘটনা জের ধরে শাসনগাঁ এলাকায় মাদার কলার ও আরএস গার্মেন্টস কারখানায় এ হামলা ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ও বিজিবি এসে শ্রমিকদের ধাওয়া দিলে শ্রমিকরা দ্রুত চলে যায়।
মাদারকালার গার্মেন্টস কারখানার অ্যাসিস্ট্যান্ট এডমিন ম্যানেজার শাহনেওয়াজ জানান, তাদের কারখানার রিপন নামের একজন অপারেটর চার দিন অনুপস্থিত ছিল। এ কারণে ১৮ জানুয়ারি শনিবার কারখানা লাইন সুপারভাইজার মিজান তাকে ধমক দেয়।
এতে ক্ষুব্ধ রিপন সুপারভাইজার মিজানকে মারধর করে। মিজান ও রিপনের সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ওইদিন সন্ধ্যা ছয়টার দিকে অপারেটর রিপন অন্য শ্রমিকদের সাথে নিয়ে পুনরায় সুপারভাইজার মিজানকে মারধর করে।
এই বিষয়টি নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষ দুই শ্রমিকে ডেকে নিয়ে তাদের সাথে কথা বলে। এ সময় অন্য শ্রমিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে অপারেটর রিপনকে মালিক পক্ষ মারধর করে আটকে রাখা হয়েছে। এতে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে উঠলে গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ ছুটি দিয়ে দেয়।
রোববার সকালে মাদার কলার গার্মেন্টস কারখানার কিছু শ্রমিক ভেতরে প্রবেশ করল অধিকাংশ শ্রমিক বাইরে অবস্থান করে এবং ঘটনার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করে।
এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পাশের বেস্ট স্টাইল গার্মেন্টসের শ্রমিকদের বের করে নিয়ে যায়। পরে তারা মাদার কালারের পাশের অপর ফ্যাক্টরি আরএস গার্মেন্টসের শ্রমিকদের বের করে নিয়ে এসে তাদের আন্দোলনের যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানায়।
কিন্তু আরএস গার্মেন্টসের শ্রমিকরা তাদের সাথে যোগ না দিয়ে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এতে দুই পক্ষের শ্রমিকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা দেওয়ার মাঝখানে মাদারকালার ফ্যাক্টরিতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
এদিকে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেস্ট স্টাইলিস্ট মাদারকালারসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি কারখানা ছুটির ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
ঘটনার পরপরই একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিজিবি সেনাবাহিনী পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গার্মেন্টস কারখানা আশপাশে অবস্থান করছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিল্প পুলিশের এসপি আসাদুজ্জামান।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ গ র ম ন টস
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ