খুব শিগগির ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কড়া হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আশু যুদ্ধ বন্ধ না করলে রাশিয়ার ওপর শুল্ক, কর ও নিষেধাজ্ঞার খগ্ড় চালাবেন বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তিনি।

বিবিসি লিখেছে, বুধবার (২২ জানুয়ারি) ট্রাম্প তার নিজের সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে পুতিনকে এই হুমকি দেন।

“রুশ জনগণের প্রতি তার ‘ভালোবাসা’ ও পুতিনের সঙ্গে তার ‘ভালো সম্পর্কের’ কথা তুলে ধরে শুরু করা পোস্টে ট্রাম্প প্রকাশ্য হুমকি দিয়ে বলেছেন, “এখনই এই হাস্যকর যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।”

ট্রাম্প লিখেছেন, “এটি কেবল আরো খারাপ হতে চলেছে। আমরা যদি ‘চুক্তি’ না করি এবং শিগগির সেটি না করি; তাহলে রাশিয়ার কাছে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ থেকে বিক্রি করা সব কিছুর ওপর উচ্চমাত্রার কর, শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছাড়া আমার আর কোনো বিকল্প থাকবে না।”

“এখনই ‘একটি চুক্তি’ করার সময়। আর কোনো জীবন হারানো উচিত নয়,” পোস্টে যোগ করেন ট্রাম্প।

এরই মধ্যে রাশিয়া বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা দেশ; যার খুবই কম সম্পদ বা ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে; যেগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েনি।

অবশ্য রাশিয়ার ব্যাংকগুলো এবং সামরিক-শিল্প কারখানাগুলো নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্য এরই মধ্যে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

নির্বাচনি প্রচারে ট্রাম্প ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে যেকোনো উপায় অবলম্বনের কথা বলেছিলেন। তিনি আরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় বসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই যুদ্ধের ইতি টানবেন। অবশ্য তেমনটি না হলেও রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছেন তিনি।

ট্রাম্পের আগ্রহ দেখে বোঝা যাচ্ছে, শিগগিরই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলোনস্কির বক্তব্যেও তার পরিষ্কার আভাস রয়েছে।

২১ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে দেওয়া ভাষণে জেলোনস্কি বলেন, মস্কোর সঙ্গে যেকোনো ধরনের যুদ্ধবিরতির পর নতুন কোনো রুশ আক্রমণ ঠেকাতে ইউক্রেইনের অন্তত দুই লাখ ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী লাগবে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জানিয়ে শান্তিরক্ষী মোতায়েনের বিষয়ে তিনি বলেন, “পুরো ইউরোপ থেকে। অন্তত দুই লাখ। এটা লাগবেই, না হলে কিছুই হবে না।” 

ট্রাম্পের শপথ নেওয়ার এক দিন পর জেলেনস্কিও যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে কথা বললেন। তিনি ইউরোপ মহাদেশের সুরক্ষায় ইউরোপীয় নেতাদের আরো বেশি কিছু করারও তাগিদ দিয়ে বলেন, এখনই কিছু করার সময়।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইউক্রেন অস্ত্র ও অর্থ সহায়তা পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর কাছ থেকে। তবে যুদ্ধের মাঠে নিজ দেশের সেনাবাহিনী ও জনযোদ্ধাদের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে জেলোনস্কিকে। সামরিক শক্তির বিচারে রাশিয়ার বহু দূরে ইউক্রেন।

রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ১৫ লাখের বেশি। এই সংখ্যার অর্ধেক নিয়েই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন। সৈন্য সংখ্যার এই পার্থক্য তুলে ধরে যুদ্ধবিরতির পর নিরাপত্তা বজায় রাখতে শান্তিরক্ষী মোতায়েনের ওপর জোর দিচ্ছেন জেলোনস্কি।

এ অবস্থায় দ্রুত যুদ্ধ বন্ধের পথ খুঁজছেন ট্রাম্পও। ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের দিনও যুদ্ধটি যেকোনোভাবে বন্ধ করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। সেই লক্ষ্য অর্জনের পথে পুতিনকে প্রকাশ্য হুমকি দিতেও পিছপা হচ্ছে না ট্রাম্প।

হুমকিই শুধু নয়, ট্রাম্প অবশ্য বলেছেন, পুতিনের সঙ্গে শিগগির তিনি বৈঠক করবেন। সেই বৈঠক হবে যুদ্ধ বন্ধের জন্য।

ঢাকা/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইউক র ন ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

এখনই কেন ইরানের এ অপূরণীয় ক্ষতি করল ইসরায়েল

ইরানে এবার চালানো ইসরায়েলের হামলা আগের দুটি সামরিক অভিযানের তুলনায় শুধু বিস্তৃত ও তীব্রই ছিল না, এতে গত নভেম্বরে লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আক্রমণে ব্যবহৃত কিছু কৌশলও ব্যবহার করা হয়েছে। এ কৌশল হলো– শুধু ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে আঘাত করা নয়, বরং দেশটির গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বকে হত্যা করতেও হামলা চালানো।

গতকাল শুক্রবার বিবিসির বিশ্লেষণে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ নেতাদের হত্যার কৌশল ওই সংগঠনের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি নিয়ে আসে। একটি টেকসই পাল্টা আক্রমণ চালানোর ক্ষমতার ওপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলেছিল। তেহরানে হামলার ফুটেজে দেখা গেছে, নির্দিষ্ট ভবনগুলোতে আঘাত হানার দৃশ্য অনেকটা বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠে ইসরায়েলের আক্রমণের চিত্রের মতো, যার পরিণতিতে হিজবুল্লাহর শীর্ষ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হন। 

ইরানে এত বড় কোনো ব্যক্তি নিহত হননি বলে মনে হচ্ছে। সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। কিন্তু অভিযানের প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের সামরিকপ্রধান, শক্তিশালী বিপ্লবী গার্ডের কমান্ডার হোসেইন সালামি এবং বেশ কয়েকজন পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করে দেশটির অভিজাতদের অভূতপূর্ব ক্ষতি করা হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এ অভিযান আরও কয়েকদিন ধরে চলতে পারে।

গত বছর ইসরায়েলে দুইবার হামলা চালায় ইরান। এবার তারা আরও তীব্র হামলা চালাতে পারে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু তেহরানের পক্ষে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানো এতটা সহজ হবে না। সম্ভবত নেতানিয়াহু হিসাবনিকাশ করেই এ বিরোধে উস্কানি দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো, কেন তিনি এখনই আক্রমণ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিলেন– যেটা তিনি এতদিন ধরে সমর্থন করে আসছিলেন। অভিযান শুরুর কিছুক্ষণ পর প্রকাশিত এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, এটি ইসরায়েলের অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়। 

নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরে যুক্তি দিয়ে আসছেন, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করলে ইসরায়েলের অস্তিত্বের হুমকিতে পড়বে। সম্প্রতি ইসরায়েলের এক ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা জানান, তারা জানতে পেরেছেন– ইরানের কাছে কয়েক দিনের মধ্যে ১৫টি পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত উপকরণ রয়েছে। 

ইরানে এ হামলার পেছনে ভিন্ন একটি কারণও থাকতে পারে। তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচির একটি চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আগামীকাল রোববার ষষ্ঠ দফায় আলোচনা শুরু হতে চলেছে। এতে কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় নেতানিয়াহুর কাছে মনে হতে পারে, সম্ভাব্য ‘অগ্রহণযোগ্য’ চুক্তি বন্ধের এটাই উপযুক্ত সময়। 

সামরিক দিক থেকে তিনি ও তাঁর উপদেষ্টারা হয়তো বুঝতে পারছেন– শুধু ইরানই নয়, বরং এ অঞ্চলে তার সহযোগী, বিশেষ করে হিজবুল্লাহ এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে, তারা আগের  মতো আর হুমকি নয়। আগামী কয়েক ঘণ্টা ও দিনে প্রমাণ হবে– এটি সঠিক, নাকি একটি বিপজ্জনক ভুল গণনা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েল ঠিক এখনই কেন ইরানে হামলা করল
  • এখনই কেন ইরানের এ অপূরণীয় ক্ষতি করল ইসরায়েল