জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ডে প্রত্যেকটি হত্যার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, শহীদ আবু সাঈদসহ জুলাই বিপ্লবে শহীদদের চাওয়া ইনসাফ, ন্যায় শান্তিপূর্ণ পরিচ্ছন্ন সমাজ উপহার দিতে কাজ করবে জামায়াতে ইসলামী।

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) রাতে রংপুরের শহীদ আবু সাঈদ চত্বরে জামায়াতের মহানগর যুব বিভাগের আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

পথসভায় তিনি বলেন, “শহীদ আবু সাঈদের আত্মত্যাগের ঋণ এ জাতি কোনদিন শোধ করতে পারবে না। সারাজীবন শহীদ আবু সাঈদ চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে ইতিহাসের পাতায়। কারণ আবু সাঈদের জীবন দানের ফলে আন্দোলনে বারুদ জ্বলেছিল।”  

ডা.

শফিক বলেন, “শহীদরা এমন একটি সমাজ চেয়েছিলেন যেখানে চুরি-চামারি, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ বা লুণ্ঠন থাকবে না। নতুন কোনো অন্যায়ের ইতিহাস রচনা হবে না। তারা মানবিক ও সাম্যের একটি বাংলাদেশ চেয়েছিলেন।” 

তিনি আরও বলেন, “সহিংসতায় ৩৪ হাজারের মতো মানুষ পঙ্গু হয়েছেন। অনেকে গুলিতে দুই চোখ হারিয়েছেন। এ ছাড়াও প্রায় আড়াইশোর বেশি মানুষের মেরুদণ্ডে গুলি লেগেছে, তারা এখন স্থায়ীভাবে অক্ষম। এই সমস্ত মানুষ শুধুমাত্র অন্যায় পূর্ণ সমাজ ভেঙে শান্তিপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণে আশায় ২৪’র বিপ্লবে নিঃস্বার্থভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সেই পরিবারগুলোর পাশে এখন দাঁড়াতে হবে।” 

জামায়াতের আমির বলেন, “সহিংসতার পরও দেশবাসী ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। কেউ জীবন বা সম্পদের ওপর আঘাত করেনি। অথচ যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা বলেছিল, ক্ষমতা হারালে দুই দিনে ৫ লাখ মানুষ খুন হবে। কিন্তু আমাদের জাতি এমন হত্যাকারী নয়। তৎকালীন স্বৈরাচারী ক্ষমতাসীনরা নিজেদের গদি রক্ষায় সহিংসতা চালিয়েছে এবং দেশের সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে।”

রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “শহীদদের ত্যাগের প্রতি সম্মান দেখান। সমাজবিরোধী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি বন্ধ করে ন্যায়ের পথে চলে আলোকিত সমাজ গড়ে তুলুন।”  

সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, মহানগর আমির এটিএম আজম খান ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

ঢাকা/আমিরুল/টিপু 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

খাদি কাপড়ের জিআই স্বীকৃতিতে আনন্দে ভাসছেন কুমিল্লাবাসী

কুমিল্লার ঐতিহ্যের স্মারক খাদি কাপড় ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় আনন্দিত জেলার মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন, অবশেষে পেয়েছেন সেই সুখবর। গতকাল বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে স্বীকৃতির এই সনদ দেওয়া হয়।

কুমিল্লা নগরের কান্দিরপাড় এলাকার রামঘাটলা থেকে শুরু করে রাজগঞ্জ পর্যন্ত অন্তত ৩০০ খাদি পোশাকের দোকান। কান্দিরপাড়ের খাদি বসুন্ধরা দোকানের স্বত্বাধিকারী জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, শৈল্পিক ছোঁয়ায় কুমিল্লার খাদি এখন দেশ-বিদেশে বেশ সমাদৃত। ঐতিহ্যের খাদিতে এখন লেগেছে আধুনিকতা ও নান্দনিকতার ছোঁয়া। শত বছরের বেশি পুরোনো খাদির আরও অনেক আগেই জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়া উচিত ছিল। অবশেষে স্বীকৃতি মিলেছে, এতেই আনন্দিত সবাই।

একই এলাকার খাদি জ্যোৎস্না স্টোরের মালিক তপন পাল বলেন, ‘কুমিল্লার প্রতিটি মানুষ খাদির এমন স্বীকৃতিতে আনন্দিত। শত বছর পার হলেও এখনো দেশ-বিদেশে খাদি কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা।’

কুমিল্লার ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ১৯২১ সালে মহাত্মা গান্ধীর ডাকে সমগ্র ভারতবর্ষে অসহযোগ আন্দোলনের সময় কুমিল্লায় খাদিশিল্প প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ওই সময় বিদেশি পণ্য বর্জন করার জন্য আওয়াজ ওঠে। সর্বত্র এক আওয়াজ ‘মোটা কাপড়-মোটা ভাত’। সে সময় ভারতবর্ষের মানুষ দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে খাদি পোশাক ব্যবহার শুরু করেছিলেন। খাদের (গর্তে) চরকায় বসে এ কাপড় তৈরি করা হয় বলে এর নামকরণ হয় ‘খাদি’। শুরুতে মহাত্মা গান্ধী নিজেও কুমিল্লায় এসে খাদের চরকায় বসে খাদি কাপড় তৈরিতে উৎসাহ দেন।

এই গবেষক আরও বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ভারত পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাহার করে নিলে কুমিল্লার খাদিশিল্প সংকটে পড়ে। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হাল ধরেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমির (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা আখতার হামিদ খান।

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, জেলা প্রশাসনের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় গত বছর কুমিল্লার রসমালাই জিআই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কুমিল্লার খাদি ও বিজয়পুরের মৃৎশিল্পের জিআই স্বীকৃতির জন্য তখন থেকেই কাজ শুরু হয়। কুমিল্লার ‘ব্র্যান্ড’ হিসেবে পরিচিত তিনটি পণ্যের মধ্যে দুটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। যে একটি বাকি আছে, সেটিও দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বীকৃতি পাবে বলে তিনি আশাবাদী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ