এবারও বিতর্ক এড়াতে পারল না বাংলা একাডেমি পুরস্কার। তালিকা ঘোষণার দুই দিন পর গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় তা স্থগিত করা হয়েছে। কয়েক বছর ধরে পুরস্কারটি নিয়ে বিতর্ক চলছে। গত বছর বিতর্কের জেরে কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার তাঁর পুরস্কার ফেরত দিয়েছেন।

বাংলা একাডেমি সূত্রে জানা যায়, উদ্ভূত সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং পুরস্কার-তালিকাভুক্ত কারও কারও সম্পর্কে কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় পূর্বঘোষিত ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’-এর পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন সম্পর্কে আলোচনা হয়। উত্থাপিত অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পূর্বঘোষিত তালিকা স্থগিত করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে পুনর্বিবেচনার পর তালিকাটি আবার প্রকাশ করা হবে।

শনিবার রাত ৮টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টেও একই তথ্য জানান সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি লেখেন, ‘বাংলা একাডেমি পুরস্কারের জন্য ঘোষিত নামের তালিকা স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি এটাও বলা প্রয়োজন, যে আজব নীতিমালা এ ধরনের উদ্ভট ও কোটারি পুরস্কারের সুযোগ করে দেয়, সেগুলা দ্রুত রিভিউ করা আমাদের প্রথম কাজ। পাশাপাশি বাংলা একাডেমি কীভাবে পরিচালিত হবে, কোন সব নীতিতে চলবে– এই সবকিছুই দেখতে হবে। একাডেমির আমূল সংস্কারের দিকে আমরা যাব এখন। দেশের সংস্কার হবে, বাংলা একাডেমির সংস্কার কেন নয়?’

গত বৃহস্পতিবার একাডেমির নির্বাহী পরিষদের অনুমোদনে মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারের তালিকা ঘোষণা করা হয়। তালিকায় নাম থাকা ব্যক্তিরা হলেন কবিতায় মাসুদ খান, কথাসাহিত্যে সেলিম মোরশেদ, নাটক ও নাট্যসাহিত্যে শুভাশিস সিনহা, প্রবন্ধ/গদ্যে সলিমুল্লাহ খান, শিশুসাহিত্যে ফারুক নওয়াজ, অনুবাদে জি এইচ হাবীব, গবেষণায় মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া, বিজ্ঞানে রেজাউর রহমান, মুক্তিযুদ্ধে মোহাম্মদ হাননান ও ফোকলোরে সৈয়দ জামিল আহমেদ।

পুরস্কারের তালিকা ঘোষণার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়।

 তালিকায় নাম থাকা কয়েকজনের বিষয়ে আপত্তি ওঠে। কোনো নারীর নাম তালিকায় না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট করেন কেউ কেউ।
অর্জয়িতা রিয়া নামে একজন লেখেন, ‘অনেকে বলেন যোগ্য লেখকদের সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়। এইটা ভুল কথা। সাহিত্যে পুরস্কার কেউ যোগ্যতার ভিত্তিতে দেয় না, দেয় গুরুত্ব বিবেচনায়। সেটা নোবেল বলেন, আর বাংলা একাডেমি বলেন। তবে দেখা যাচ্ছে গুরুত্ব বিবেচনার ক্ষেত্রে বারবার বাংলা একাডেমি একটা নির্দিষ্ট জেন্ডারকে বাদ দিচ্ছে, নারীদেরকে।’

‘বাংলা একাডেমি কি আওয়ামী লীগারদের পুনর্বাসন-পুরস্কার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে?’– এ প্রশ্ন তুলে গল্পকার ও ঔপন্যাসিক মাহবুব মোর্শেদ তাঁর ফেসবুকে অ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘শেখ মুজিবকে নিয়ে বইয়ের পর বই লেখা ফারুক নওয়াজ ও মোহাম্মদ হাননান কীভাবে পুরস্কার পেলেন, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে আমাদের। এ দুজন নিশ্চিতভাবেই আওয়ামী লীগার।’

তালিকায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদের নাম থাকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। মাহবুব মোর্শেদ লেখেন, ‘বাংলা একাডেমি ও শিল্পকলা একাডেমি একই মন্ত্রণালয়ের অধীন দুই প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান দুটি নানা সূত্রে পরস্পর সম্পর্কিত। এ রকম একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে পদে থাকা অবস্থায় পুরস্কার দেওয়া যায়?’

এর আগে শুক্রবার এক পোস্টে সংস্কৃতি উপদেষ্টা ফারুকী লেখেন, ‘মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসাবে আমি এই পুরস্কার নিয়ে যে সমালোচনাগুলা হচ্ছে, সেটা গ্রহণ করছি। একজনও নারী লেখক খুঁজে না পাওয়া বিস্ময়কর। এছাড়া কিছু ক্যাটাগরিতে যে প্রশ্ন উঠেছে, সেগুলাও অযৌক্তিক না। সময় এসেছে, এই পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন প্রক্রিয়া সংস্কারের। একই সাথে একাডেমিকে একটা বিশেষ গোষ্ঠীর মিলনমেলা না বানিয়ে কি করে ইনক্লুসিভ করা যায়, কি করে তরুণ মেধাকে এর চালিকাশক্তির অংশ করা যায়, সেটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।’

এদিকে পুরস্কারের জন্য ঘোষিত তালিকা স্থগিত করায় রসিকতাও করছেন কেউ কেউ। অনেকে আবার স্থগিত হওয়া তালিকায় নাম ওঠা ব্যক্তিদের ‘সম্মানহানি’র বিষয়টি নিয়ে কথা বলছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক শাতিল সিরাজ গত রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘এরপর কারো পুরস্কার প্রাপ্তির ঘোষণা বা নিয়োগ পাওয়ার খবর শুনে মিষ্টি খাওয়া বড্ড ঝুঁকির ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে!।’

তালিকা স্থগিতের বিষয়ে জানতে চাইলে কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার সমকালকে বলেন, ‘এটি একটি বাজে উদাহরণ। যদিও এর আগে অনেক বাজে উদাহরণ বাংলা একাডেমি তৈরি করেছে। আরেকটি যোগ হলো।’

তিনি জানান, যারা বিরোধিতা করেছেন, তাদের যুক্তি হলো, এর আগে রাজনৈতিক বিবেচনায় পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এবারও আগের সুবিধাভোগীরা পুরস্কার পাওয়ায় রাজনৈতিক কারণেই বাতিল করতে হবে। এর মাধ্যমে মূলত রাজনৈতিক অসুস্থতা বহাল থাকল। তিনি সাহিত্যিককে সাহিত্যের বিচারে দেখার আহ্বান জানান। 
জাকির তালুকদারের মতে, বাংলা একাডেমির ভেতর গণতন্ত্রহীনতা, আমলাতন্ত্র, অসুস্থ চর্চা রয়ে গেছে– এসবের প্রতিফলন হিসেবে এ রকম ঘটনা ঘটতে থাকবে, যতদিন না বাংলা একাডেমিকে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ঢেলে সাজানো হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ল এক ড ম র জন ত ক এক ড ম র ফ সব ক

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা

রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।

এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।

রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।

এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।

সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।

এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।

রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ