‘গণবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে পুরস্কারের তালিকা থেকে বাদ’
Published: 26th, January 2025 GMT
বাংলা একাডেমির পুরস্কার স্থগিত করার পর বাংলা একাডেমি সংস্কার কমিশন গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
তিনি বলেন, “যদি কেউ গণবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে এবং সেটা প্রমাণিত হয়, তাহলে পুরস্কারের তালিকা হতে তার নাম বাদ যাবে।”
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) সচিবালয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
আরো পড়ুন:
বাংলা একাডেমি পুরস্কার স্থগিত
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন ১০ জন
নাম প্রকাশের আগে যাচাই-বাছাই নিয়ে মহাপরিচালক বলেন, “আমরা কোনো প্রক্রিয়ায় ভুল করতে চাইনি। কিন্তু আসলে আমাদের ভুল হয়ে গেছে। আমরা পুরো প্রক্রিয়াটি মেইনটেইন করতে চেষ্টা করেছি। এ কারণেই আমরা তিন কার্যদিবসের জন্য এগুলো সাময়িক স্থগিত করেছি।”
তিনি বলেন, “যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তাদের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে আমরা রিভিউ কমিটিতে উঠিয়েছি। কমিটি সেটা বিবেচনা করে পুনরায় সিদ্ধান্ত নেবেন।”
যাচাই প্রক্রিয়া নিয়ে মহাপরিচালক বলেন, “গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনি ভিত্তি পায় তাদের সমন্বয়ে এই যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।”
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের সই করা এক নোটিশে তালিকা স্থগিত করা হয়।
এতে বলা হয়, ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার কমিটি ২০২৪’ এর এক সভা শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উদ্ভূত সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং পুরস্কার-তালিকাভুক্ত কারো কারো সম্পর্কে কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় পূর্বঘোষিত ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪’ এর পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন সম্পর্কে আলোচনা হয়। উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক বলেন, “সম্প্রতি পুরস্কার ঘোষণা করা হলে নানা মহল থেকে আলোচনা হয়। এরপর বিষয়টি আমরা আমলে নিয়ে তালিকাটি সাময়িক স্থগিত করেছি। তালিকাটি আমরা রিভিউ করব। যদি কারো বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ড বা ইন্ধনের অভিযোগ প্রমাণিত হয় বা গণবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে বা অপরাধমূলক কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে তাহলে তার নাম তালিকা থেকে বাদ যাবে।”
মহাপরিচালক বলেন, “বাংলা একাডেমির জন্য ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি খুব ব্যস্ত সময়। আমরা একটি বাংলা একাডেমি সংস্কার কমিটি করতে চাই। যে কমিটিতে বিষেজ্ঞরা সংস্কারের নানা বিষয় নিয়ে পরামর্শ দেবেন।”
এ সময় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মো.
ঢাকা/এএএম/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ল এক ড ম এক ড ম র র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
দলগুলো একমত হলে বর্ষপূর্তিতেই ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ
ছাত্র গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪-এর উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হবে। বিশেষ করে নির্বাচিত সরকারের সংস্কার করা সংবিধানের প্রস্তাবনায় এই স্বীকৃতির উল্লেখ থাকবে। এ ছাড়া সংবিধানের তফসিলেও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ সংযুক্ত থাকবে। এ ঘোষণাপত্র ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হবে।
বহুল আলোচিত জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় এ কথাগুলো বলা হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে অন্যতম আলোচিত বিষয় এই ঘোষণাপত্র। অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি সামনে রেখে সম্প্রতি জুলাই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত খসড়া বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন দলকে পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। দলগুলোর সবুজ সংকেত পেলে অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতেই ঘোষণা করা হতে পারে জুলাই ঘোষণাপত্র।
ঘোষণাপত্রের খসড়ায় ২৬টি দফা রয়েছে। প্রথম ২১ দফায় মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের মানুষের অতীতের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম থেকে শুরু করে জুলাই অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট মোকাবিলায় গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত জনগণের সার্বভৌমত্বের প্রত্যয় ও প্রয়োগ রাজনৈতিক এবং আইনি উভয় দিক থেকে যুক্তিসংগত, বৈধ ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।’
আরও পড়ুনমৌলিক সংস্কারের সব বিষয়ে মতৈক্য হয়নি ৫ ঘণ্টা আগেপরের পাঁচটি দফায় রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা, আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম-খুন, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও সব ধরনের নির্যাতন-নিপীড়ন এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুণ্ঠনের অপরাধের দ্রুত উপযুক্ত বিচার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, দুর্নীতি, শোষণমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে।
খসড়া ঘোষণাপত্রে শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের প্রতিষ্ঠিত বাকশাল বা একদলীয় শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করা হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর দেশে সিপাহি জনতার ঐক্যবদ্ধ বিপ্লব সংঘটিত হয় বলে ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়। নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের কথা যেমন এতে উল্লেখ রয়েছে, পাশাপাশি এক-এগারোর ‘ষড়যন্ত্রমূলক বন্দোবস্তের’ কড়া সমালোচনাও ঘোষণাপত্রে আছে।
জনগণের লড়াইকে সমর্থন দেয় সামরিক বাহিনীঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, পিলখানা ট্র্যাজেডি, শাপলা চত্বরে গণহত্যার মতো আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, একদলীয় স্বার্থে সংবিধান সংশোধন ও পরিবর্তন বাংলাদেশের সব রাষ্ট্রীয় এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি চরম গণবিরোধী, একনায়কতান্ত্রিক ও মানবাধিকার হরণকারী শক্তি বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদী, মাফিয়া ও ব্যর্থ রাষ্ট্রের রূপ দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে।
অবৈধভাবে ক্ষমতা অব্যাহত রাখতে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার তিনটি প্রহসনের নির্বাচনে (২০১৪, ’১৮ ও ’২৪) দেশের মানুষকে ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত করে বলেও জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়, তথাকথিত উন্নয়নের নামে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সরকারের নেতৃত্বে সীমাহীন দুর্নীতি, ব্যাংক লুট, অর্থ পাচার ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিগত পতিত দুর্নীতিবাজ আওয়ামী সরকার বাংলাদেশ ও এর অমিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং এর পরিবেশ-জলবায়ু ও প্রাণবৈচিত্র্য বিপন্ন করে।
খসড়া ঘোষণাপত্রে আরও বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবি ঘোষণা করে, যা পরে ১ দফায় রূপান্তরিত হয়। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা জনগণের গণতান্ত্রিক লড়াইকে সমর্থন দেন। তীব্র আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণভবনমুখী জনতার উত্তাল যাত্রার মুখে অবৈধ, অনির্বাচিত, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট (২০২৪) পদত্যাগ করেন এবং তিনি মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।