চট্টগ্রামে মেহজাবীন চৌধুরী, টাঙ্গাইলে পরীমণির পর বাধার মুখে রেস্তোরাঁ উদ্বোধন করতে পারেননি চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস। গত ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর কামরাঙ্গীচরের একটি রেস্তোরাঁ উদ্বোধনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও মুসল্লিদের আপত্তির মুখে যেতে পারেননি এই অভিনেত্রী।

পরীমণি থেকে অপু বিশ্বাস— দুটো ঘটনা কয়েক দিনের ব্যবধানে ঘটেছে। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি চাপা ক্ষোভ রয়েছে শিল্পীদের মনেও। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম। শিক্ষার্থীদের নানাভাবে উৎসাহ যুগিয়েছেন, পাশে থেকেছেন। মেহজাবীন, পরীমণি ও অপু বিশ্বাসের সঙ্গে ঘটা ঘটনা নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন এই অভিনেত্রী।

অকপটে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে জাকিয়া বারী মম বলেন, “এ ধরনের ঘটনা ঘটবে কেন? এ ধরনের ঘটনা ঘটাই অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত। এ ধরনের ঘটনা আর ঘটতে দেওয়া যাবে না। সমাজ যদি সজাগ থাকে, তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না।”

আরো পড়ুন:

ট্রেনে হার্ট অ্যাটাকে পরিচালকের মৃত্যু

রাজের নায়িকা ফারিণ!

একগুচ্ছ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে জাকিয়া বারী মম বলেন, “আমি আমার কাজ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। ফলে সোশ্যাল মিডিয়াতে নেই; অনেক কিছুই দেখাও হয়নি। সুতরাং আমার মন্তব্য করাও অনুচিত। তবে লোকমুখে শুনেছি। এ ঘটনা নিয়ে কী বলব? এগুলো কি কোনোভাবে কাঙ্ক্ষিত? অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার পর কোনো শব্দ আমার নাই। এগুলো কাঙ্ক্ষিত, আশাব্যঞ্জক কোনো ঘটনা না। যে বাংলাদেশে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন হলো, তারপর এই ধরনের কার্যকলাপ কি সহনীয়? এসব কি মেনে নেওয়া যায়? গ্রহণযোগ্য? সত্যি আমার কিছু বলার নাই।”

একজন শিল্পী হিসেবে আপনার জায়গা থেকে আপনার ভাবনা জানতে চাই। প্রশ্নটি রাখার পর জাকিয়া বারী মম বলেন, “আমার কোনো জায়গা নাই, আমি কোথাও নাই। এসব খবর শুনে আমার মন খারাপ হয়ে গেছে। আমি আসলে নিজের মতো নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাই। আমি কোনো জায়গায় থাকতেই চাই না! আমি ছোট মানুষ, পৃথিবীতে ক্ষুদ্র একটা কণিকা মাত্র। সার্বিক পরিস্থিতি দেখে আমি ভাষাহীন। এসব কোন শব্দে ব্যাখ্যা করা যায়, তা আমার অভিধানে নাই।”

শিল্পীরা দলছুট? এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে খানিকটা ব্যাখ্যা করেছেন জাকিয়া বারী মম। তার ভাষায়, “দলছুট ঠিক না। আমার একটাই দল— সেটা বাংলাদেশ। কিন্তু এ দলে কি আমরা থাকতে পারছি? এই ঘটনাগুলো কি আমাদেরকে আশা দিচ্ছে? আমার-আপনার কাজের মাধ্যমে রাষ্ট্রের প্রতিচ্ছবি তৈরি হয়। এটা বেসিক নিডের জায়গা। আর্ট-কালচার বা আপনার-আমার অঙ্গণের কোনো ব্যাপার না। সমাজে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে সেটা, একদম বেসিক। সমাজের পরিবর্তনের জন্য, সমাজের সুস্থতার জন্য প্রত্যেক নাগরিক দায়ী। আমরা দেশকে তো ভালোবাসি না! যদি ভালোইবাসতাম তবে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না। দেশকে ভালোবাসলে ইতিবাচক অনেক কিছু হতে পারে।”

এসব ঘটনার জন্য শিল্পী একা দায়ী নন। জাকিয়া বারী মমর মতে, “এখানে শিল্পী একা কী করবে? যে ব্যক্তি শোরুম উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন, তিনি তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলেন। উনি যে বিব্রত হয়ে ফিরে আসলেন, এজন্য চারপাশের মানুষ দায়ী, এই সমাজ দায়ী। সমাজকে এটা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে হবে, সমাজকেই প্রতিরোধটা করতে হবে। শিল্পী তো এই সমাজেরই মানুষ; শিল্পী তো আকাশ ফুড়ে বের হয় নাই।”

এসব সমস্যা সমাধের জন্য সমাজকে সচেতন হতে হবে। একজনের প্রতি আরেকজনের সম্মান থাকতে হবে। দেশের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। অন্যথায় সম্ভব না। এসব তথ্য উল্লেখ করে জাকিয়া বারী মম বলেন, “আমরা মূল জায়গায় ঠিক নাই। এখানে সবাইকেই কথা বলতে হবে। আমি-আপনি কথা বললে মনে হবে, আমরা কেবল পেশাদারভাবে কথা বলছি। যাদের আমন্ত্রণে গিয়েছিলেন, তারা কেন দায় নেন নাই?”

গত মঙ্গলবার ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের ‘সোনার থালা’ নামে একটি রেস্টুরেন্ট উদ্বোধন করার কথা ছিল অপু বিশ্বাসের। কিন্তু আপত্তি জানায় স্থানীয় ‘হুজুররা’। আপত্তির মুখে রেস্তোরাঁটির মালিক কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমীরুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলেন। তারা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বলেন, “অপু বিশ্বাসকে আনলে যদি হুজুররা বিশৃঙ্খলা করেন, আপত্তি জানান, তাহলে আমরা অপু বিশ্বাসকে আনব না। আমরা ব্যবসা করব। লোকজন নিয়ে চলতে হবে।”

রেস্তোরাঁ মালিকের এই বক্তব্য তুলে ধরা হলে জাকিয়া বারী মম বলেন, “ব্যবসা করলে তো সততার সঙ্গে করতে হবে। অন্যকে অসম্মান করে ব্যবসা করা যায় নাকি! এটা তো হয় না। হয়তো তারা ব্যবসা করবেন, টাকার ওপরে ঘুমিয়ে থাকবেন। কিন্তু বরকত হবে না। সে টাকা অন্য কোনোভাবে চলে যাবে। ব্যবসায় সততা খুবই জরুরি। আপনি একজন শিল্পীকে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে সঠিক নিরাপত্তা, সম্মান না দিতে পারা আপনার ব্যর্থতা। শিল্পী তার প্রতিশ্রুতির জায়গা থেকে কাজ করতে গিয়েছেন। আপনার শোরুম উদ্বোধন করতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। সুতরাং দায়টা আপনার। আশেপাশের আরো দশটা শোরুমের মালিক দায়ী! তারা কেন প্রতিবাদ করেন নাই? অনেস্টি ইজ দ্য বেস্ট পলিসি! এই মুহূর্তে আমাদের যেটা নাই, সেটা হলো— সততা।”

সমাজে নারীর গুরুত্বের ব্যাপার স্মরণ করে জাকিয়া বারী মম বলেন, “যে সমাজ নারীকে সম্মান করে, সেই সমাজের উন্নতি হয়। যে সমাজ নারীকে সম্মান করে না, সেই সমাজ কখনো মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবে না। এটা আমার পর্যবেক্ষণ। একজন নারী মা, বোন, দোকানদার, চা বিক্রেতা কিংবা প্রেমিকা হতে পারেন— অন্য যেকোনো কিছুই হতে পারেন। কিন্তু সে নারী। নারীর সম্মান ও নিরাপত্তা যে সমাজ দিতে পারবে সেই বড় হবে। এটার কোনো ব্যত্যয় নেই।”

ব্যাখ্যা করে জাকিয়া বারী মম বলেন, “মানুষ মাত্রই সম্মান করা উচিত। আপনার ধারণা কী, আপনার ধর্ম কি, আপনার পেশা কি— এসব কিছুর আগে আপনি একজন মানুষ। আপনার প্রাপ্য সম্মান আপনাকে দিতে হবে। নারী সমাজের সেই প্রতীক, যাকে সম্মান করলে বোঝা যাবে সেই জাতির ভবিষ্যৎ আছে। যে জাতি নারীকে সম্মান করে না, সেই জাতির ভবিষ্যৎ নাই।”  

এ পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরে জাকিয়া বারী মম বলেন, “সমাজকে পরিবর্তন করতে হলে পড়াশোনা করতে হবে, আর্ট-কালচার করতে হবে। বাংলাদেশের দায়িত্বটা নিতে হবে। এসব দায়িত্ব কে নিবে? এই দায়িত্ব কার কাছে! পরিস্থিতি এমন কাউকে দায়ী করতে পারবনে না, অভিযোগ করতে পারবেন না। এজন্য নির্বাচনটা খুব বেশি প্রয়োজন।”

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র এ ধরন র ঘটন র জন য ন করত ব যবস আপন র আপত ত

এছাড়াও পড়ুন:

সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ

অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি ঘিরে উত্তেজনা এখন চূড়ান্তে। ২-১ ব্যবধানে সিরিজে ইংল্যান্ড এগিয়ে থাকলেও পঞ্চম ও শেষ টেস্টটি একটি পরিণতির লড়াই হিসেবে সমাসন্ন। তবে ঠিক এই সময়েই বড় দুঃসংবাদ এসে আঘাত হেনেছে ইংলিশ ড্রেসিংরুমে। ইনজুরিতে পড়ে সিরিজ নির্ধারণী ওভাল টেস্ট থেকে ছিটকে গেছেন অধিনায়ক বেন স্টোকস।

বুধবার (৩০ জুলাই) ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, ওভালে মাঠে নামা হচ্ছে না স্টোকসের। ম্যানচেস্টারে চতুর্থ টেস্টে দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের মাধ্যমে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন তিনি। ব্যাটে-বলে সমান পারদর্শী স্টোকস ছিলেন দলের ভারসাম্য ধরে রাখার অন্যতম স্তম্ভ। তার অনুপস্থিতি তাই শুধু একজন খেলোয়াড়কে হারানো নয়, বরং একটি জয়ের প্রত্যয়ের বড় চ্যাপ্টারও হারানো।

এই ম্যাচে অধিনায়কের দায়িত্ব সামলাবেন ওলি পোপ। যিনি প্রথমবারের মতো সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে নেতৃত্ব দেবেন জাতীয় দলের।

আরো পড়ুন:

শেষ ম্যাচের আগে ভারতের শিবিরে ধাক্কা, বিশ্রামে বুমরাহ

ওভাল টেস্টের ইংল্যান্ড দল ঘোষণা, ওভারটনের প্রত্যাবর্তন

স্টোকস ছাড়াও ওভাল টেস্টে দেখা যাবে না জোফরা আর্চার, ব্রাইডন কার্স ও লিয়াম ডসনকে। চোট ও ফিটনেস ইস্যুর কারণে তারা বাদ পড়েছেন স্কোয়াড থেকে।

অবশ্য একাদশে ফিরেছেন দুই পরিচিত মুখ জশ টাঙ ও জেমি ওভারটন। বিশেষ নজর কেড়েছেন গাস অ্যাটকিনসন। যিনি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মে মাসে খেলার পর হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে ছিলেন মাঠের বাইরে। সারে কাউন্টির হয়ে ফের মাঠে ফিরে জায়গা পেয়েছেন জাতীয় দলে। ইংল্যান্ডের পেস বিভাগে তার উপস্থিতি বাড়াবে গতি ও ধার।

চলতি সিরিজে ইংল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেট নিয়েছেন বেন স্টোকস। চার ম্যাচে তার ঝুলিতে ১৭ উইকেট। ম্যানচেস্টার টেস্টে ভারতের প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার ও ব্যাটে সেঞ্চুরি করে একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়েছিলেন। লর্ডসেও দুই ইনিংস মিলিয়ে রান করেছেন ৭৭, নিয়েছেন আরও পাঁচ উইকেট।

তাই ইংলিশ শিবির শুধু একজন ব্যাটার বা একজন বোলার হারায়নি, তারা হারিয়েছে একজন পূর্ণাঙ্গ ম্যাচ উইনারকে। স্টোকসের মতো একজন অলরাউন্ডার যিনি প্রয়োজনের সময় ছায়ার মতো আক্রমণে নেতৃত্ব দেন এবং ব্যাট হাতে গড়েন ম্যাচের ভিত, তার অভাব যে দলকে নাড়া দেবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের সম্ভাব্য একাদশ:
জ্যাক ক্রাউলি, বেন ডাকেট, ওলি পোপ (অধিনায়ক), জো রুট, হ্যারি ব্রুক, জ্যাকব বেথেল, জেমি স্মিথ (উইকেটকিপার), ক্রিস ওকস, গাস অ্যাটকিনসন, জেমি ওভারটন ও জশ টাঙ।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারীরা কেন পুরুষদের তুলনায় বেশিবার প্রস্রাব করেন?
  • গঙ্গাচড়ায় হিন্দুবাড়িতে হামলা ঠেকাতে ‘পর্যাপ্ত’ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি
  • নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-আ.লীগ নেতা–কর্মীদের ‘গোপন বৈঠক’ ঘিরে গ্রেপ্তার ২২, সেনা হেফাজতে মেজর
  • দেশের চারজনের একজন বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার
  • ফ্যাসিবাদ, উগ্রবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে
  • ডেঙ্গুতে দুজনের, করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু
  • জাওয়াইদেহ বেদুইনদের মৌখিক সাহিত্য
  • রাবিতে আ.লীগ ট্যাগ দিয়ে চিকিৎসা কর্মীকে বিবস্ত্র করে মারধর
  • ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
  • সিরিজের শেষ ম্যাচে নেই স্টোকস, দায়িত্বে পোপ