সরকারি দপ্তর-অধিদপ্তরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় ছয় লাখ কর্মচারী রয়েছেন। যেকোনো সময় ছাঁটাই থেকে শুরু করে মাতৃত্বকালীন ছুটি, উৎসব ভাতাসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন এসব কর্মচারীরা। এদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিয়োগের পদ্ধতি বাতিল করে এসব আউটসোর্সিং কর্মচারীর স্থায়ীকরণ জরুরি বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশিষ্টজনরা। সরকারের স্থায়ী পদে অস্থায়ী কর্মচারীদের পদায়নের বন্ধের পক্ষে মত দেন আলোচকরা।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী ঐক্য পরিষদ আয়োজিত ‘আউটসোর্সিংয়ের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

শ্রম সংস্কার কমিশন প্রধান ও বিলস’র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি কমরেড রাজেকুজ্জামান রতন ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেকুজ্জামান লিপন এবং সাংবাদিক মাসুদ কামাল গতকালের সেমিনারে বক্তব্য দেন।
শ্রম সংস্কার কমিশন প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন বলেন, আউটসোর্সিং পরিষদের সঙ্গে এ নিয়ে তিনবার বসলাম। শ্রম সংস্কার কমিশনের কাছে প্রত্যাশা অনেক বেশি। আট কোটি মানুষের আট শতাধিক সমস্যা সামনে এসেছে। কমিশন তো সমস্যার সমাধান করতে পারবে না, আমরা সুপারিশ করতে পারব। তবে আপনাদের সঙ্গে থাকার অধিকার আছে একজন নাগরিক হিসেবে।

সৈয়দ সুলতান উদ্দিন বলেন, ছয় লাখ পরিবার তার সন্তানের শিক্ষার ভাল কোনো পরিকল্পনা করতে পারে না। নাগরিক হিসেবে আমি যেভাবেই নিযুক্ত হই না কেন, আমার জীবিকা, আমার মর্যাদার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। ঠিক আছে আমি অস্থায়ীভাবে নিযুক্ত, আমি একদিনের জন্যেও যদি নিযুক্ত হই আমার মর্যাদা ও জীবিকার নিরাপত্তা দিতে হবে।

সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আরও বলেন, দয়াদাক্ষিণ্য চাওয়া বা দুঃখ-কষ্ট দেখানোটা শ্রমজীবী মানুষের কাজ না। দক্ষতা ও শ্রমের বিনিময়ে আপনি জীবিকা নির্বাহ করছেন, এখানে অধিকারের প্রশ্ন সহানুভূতি অর্জনের কোনো প্রয়োজন নেই। নিজের অধিকারের কথা শক্তভাবে বলতে হবে। কমিশন প্রধান হিসেবে নয়, সংগ্রামের সাথী হিসেবে বলছি।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ড.

মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দাবি করে থাকে বৈষম্য দূর করার কাজটি তাদের দায়িত্ব। তাহলে একইরকম জিনিসের দুইরকম দর কেন হবে। ছয় লাখ স্থায়ী শ্রমিকের জন্য সরকার যা বরাদ্দ দেয় ছয় লাখ অস্থায়ী কর্মচারীর জন্যও সে পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া দরকার। অস্থায়ী কর্মচারীর জন্য বরাদ্দ করা টাকা মধ্যস্বত্বভোগীরা যেন না খেতে পারে, এ ব্যবস্থাটা সরকার করুক। একজন উৎসব ভাতা পাবে একজন কেন পাবে না, একজন মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবে আরেকজন কেন তা পাবে না।

সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১২০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আমরা সচিবালয়ে গিয়েছিলাম সচিব বললেন, আর ছাঁটাই করা হবে না। কিন্তু কদিন আগে খুলনায় ছাঁটাই হলো, আজ বরিশালে আগামীকাল ঢাকার মুগদায় ছাঁটাই হবে। তাহলে সচিবের ওপরও সচিব আছে, সরকারের ওপরও সরকার আছে। ৮৬ হাজার টাকা দামের মাফলার পরছেন কেউ কেউ। ছয় লাখ কর্মচারীর জন্য শ্রম মন্ত্রণালয়ের ১৩০০ এনলিস্টেড প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ এক কোটির বেশি প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানোর জন্য সরকার নিবন্ধিত এজেন্সি ১৬০০টি। তার মানে এখানে মধু আছে। এখানকার মধুখোরদের বিদায় করতে হবে।

রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, দেশের শ্রম আইনে ৮ ঘণ্টার কথা বলা আছে, কিন্তু আউটসোর্সিংয়ের কর্মচারীদের বেলায় তা মানা হয় না তাহলে এদের ক্ষেত্রে ৮ ঘণ্টার আইন গেল কোথয়।

মো. সাফিউল ইসলাম উজ্জল ও সোহেল রানার সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারী ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় প্রধান প্রতিনিধি মো. রফিকুল ইসলাম। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারী ইয়াসমিন আক্তার, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মচারী নুরুন নাহার বেগম, নির্বাচন কমিশনের ডাটাবেজ কার্যক্রমে কর্মরত সাহাব উদ্দীন, ডাক বিভাগের রুপা হক ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা মো. শাহাদাত ইসলাম।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র কর ম র জন য ছয় ল খ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা

চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।

কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।

এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।

অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।

একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।

এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।

যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনে দুবলার চরে রাস উৎসব শুরু আজ, এবারও নেই মেলার আয়োজন
  • শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত
  • ‘মবের’ পিটুনিতে নিহত রূপলাল দাসের মেয়ের বিয়ে আজ
  • এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ
  • ডাইনির সাজে শাবনূর!
  • প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব 
  • ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
  • টগি ফান ওয়ার্ল্ডে উদযাপিত হলো হ্যালোইন উৎসব
  • উদ্ভাবন–আনন্দে বিজ্ঞান উৎসব
  • নবীনদের নতুন চিন্তার ঝলক