শেরপুরে কিশোরীকে উত্ত্যক্তের ঘটনায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে দু’দিন ধরে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। 
গত শুক্রবার রাতে শুরু হওয়া সংঘর্ষ থেমে থেমে চলে শনিবার বিকেল পর্যন্ত। এ সময় উভয় পক্ষ রামদা, টেঁটা, বল্লমসহ নানা অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এ ঘটনায় শেরপুর-জামালপুর সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ যানবাহন শেরপুর নতুন বাস টার্মিনাল দিয়ে কামারেরচর ও চরমোচারিয়া হয়ে জামালপুর যাতায়াত করছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেরপুর শহরের শেরীব্রিজ এলাকায় সাড়ে ৪ একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে একটি সূর্যমুখী ফুল বাগান। 

সেই বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করেন হাজারো মানুষ। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে বনভোজনের বাসসহ অনেক যানবাহন শেরীব্রিজ এলাকায় এসে যানজটের কবলে পড়ে। এ সময় বাসে থাকা এক কিশোরীকে উত্ত্যক্ত করে কৃষ্ণপুর দড়িপাড়া গ্রামের এক যুবক। এটি মেনে নিতে পারেনি কান্দাশেরীরচর গ্রামের লোকজন। তারা ওই যুবককে ধরে মারধর করে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কৃষ্ণপুর দড়িপাড়া গ্রামের লোকজন দলবেঁধে কান্দাশেরীরচর গ্রামে হামলা চালালে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। 

এতে আহত হন কান্দাশেরীরচরের হোসেন আলীর ছেলে ফারুক মিয়া, লাল মিয়ার ছেলে মজনু মিয়া, ইয়াসিন আলীর ছেলে আব্দুল আলিমসহ অন্তত ১০ জন। 

বিক্ষুব্ধ লোকজন লছমনপুর ইউনিয়নের শেরপুর-জামালপুর সড়কের কুসুমহাটি বাজারের রাস্তায় আগুন দিয়ে অবরোধ করে। এ সময় তারা কান্দাশেরীরচরের কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর চালায়। কুপিয়ে তছনছ করে ফেলে ঘরের টিনের বেড়া। পলাশ টেলিকম নামে একটি মোবাইলের দোকানে লুটপাটের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে। তারা উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। 

এক পর্যায়ে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু শনিবার সকাল থেকে আবার দুই পক্ষের মধ্যে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। দু’পক্ষই ধারালো অস্ত্র নিয়ে সড়কে নেমে আসে। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সংঘর্ষ শুরু হয় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে। এতে আরও পাঁচজন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতলে ভর্তি করা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, উত্ত্যক্তের ঘটনার জের ধরে দু’দিন ধরে সংঘর্ষ চলা দুঃখজনক। বেশ কিছু দোকানপাট ভেঙে তছনছ করে ফেলা হয়েছে। আহত হয়েছেন কয়েকজন।
প্রত্যক্ষদর্শী বিপ্লব কুমারের ভাষ্য, জামালপুর থেকে শেরপুর যাচ্ছিলেন তিনি। কুসুমহাটী বাজারে এলে দেখতে পান ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে। ভয়ে মানুষ ছোটাছুটি করছে। পরিস্থিতি খারাপ দেখে গাড়ি ঘুরিয়ে নন্দীর বাজার দিয়ে কামারেরচর হয়ে শেরপুর আসেন।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলামসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে লোকজন সরিয়ে দেয় এবং  কৃষি পর্যটনের সূর্যমুখীর বাগানে দর্শনার্থী প্রবেশ বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

শেরপুর সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন নাহিয়ান ইসলাম জানান, সেনাবাহিনীর টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এখন পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবায়দুল আলম বলেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী রয়েছে। পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। কোনো পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ন দ শ র রচর পর স থ ত স ঘর ষ ল কজন

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ