ফরিদপুরের ভাঙ্গায় এক মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছে আনোয়ার হোসেন নামের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বলাৎকারের ঘটনা ধামাচাপা দিতে সাবেক স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ভাগনেসহ একটি চক্র অভিযুক্তকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিজেদের জিম্মায় নিয়েছে বলে জানা গেছে।

গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের মালীগ্রামের নুরুল কুরআন ইন্টারন্যাশনাল ক্যাডেট মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে।

অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন ওই মাদ্রাসায় হিফজ বিভাগের শিক্ষক। তিনি ফরিদপুরের বোয়ালমারীর চিতারবাজার গ্রামের বাসিন্দা।

অভিযোগ উঠেছে, ওই শিক্ষককে বাঁচাতে ও ঘটনা ধামাচাপা দিতে সাবেক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক মোল্লার ভাগনে সালাউদ্দিন খাঁন ও তার সহযোগী পাঁচকুল গ্রামের বাসিন্দা আসমত খাঁন, সাহাদাৎ মাতুব্বর ও গোয়ালবেড়া গ্রামের জামাল মোল্লা মাদ্রাসায় আসেন। সেখানে মাদ্রাসা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দফারফা করে অভিযুক্ত শিক্ষককে তাদের জিম্মায় নেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মাদ্রাসা পরিচালক মাওলানা নজরুল ইসলাম খান সমকালকে বলেন, গতকাল বিকেলে হিফজ বিভাগের ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীকে একটি কক্ষে আটকে বলাৎকার করেন আনোয়ার হোসেন। একপর্যায়ে শিশুটির চিৎকার শুনে অন্যরা দৌড়ে গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করেন এবং অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করা হয়। বিষয়টি মীমাংসা করে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি ও সালাউদ্দিন খাঁন নামের এক ব্যক্তি ওই রাতেই শিক্ষককে তাদের জিম্মায় নিয়ে যান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়দের কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযুক্তের মুখে আলকাতরা মেখে চুল কেটে দিয়েছে স্থানীয়রা। ঘটনাটি ধামাচাপার দেওয়ার চেষ্টা করেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের ভাগনে সালাউদ্দিন খাঁন ও তার একটি প্রভাবশালী চক্র। অভিযুক্ত শিক্ষককে পুলিশের কাছে সোপর্দ না করে প্রায় ১ লাখ টাকার বিনিময়ে তাকে মাদ্রাসা থেকে পালাতে সহযোগিতা করেন তারা। এতে মাদ্রাসা পরিচালক নজরুল ইসলাম ও মামুন রহমান ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

মাদ্রাসার পাশের কয়েকজন দোকানি জানান, ঘটনার পর মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষককে পুলিশের কাছে সোপর্দ না করে বরং তাকে সেখান থেকে গোপনে অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা বলেন, ঘটনার পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে শিশুরা। তাই ওই মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকসহ বিষয়টি ধামাচাপায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত বিচারের দাবি জানাই।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে কলে পাওয়া যায়নি।

চান্দ্রার সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক মোল্লার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, কোনো দফারফার বিষয়ে অবগত নন তিনি। এ বিষয়ে তার ভাগনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।

অন্যদিকে চেয়ারম্যানের ভাগনে সালাউদ্দিন খাঁন বলেন, গতকাল রাতে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা মাদ্রাসায় গিয়ে হট্টগোল সৃষ্টি করলে সেখানে যাই। পরে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ভিকটিমের পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় ওই রাতেই মাদ্রাসার পরিচালকদের নিয়ে ঘটনাটি মীমাংসা করি। তবে, এতে কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি।

ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকছেদুর রহমান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। ভুক্তভোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে পুলিশ। ভুক্তভোগী ও তার পরিবার থানায় অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য গ য গ কর ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

পটুয়াখালীতে সালিস বৈঠকে অংশ নিলে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিএনপি

পটুয়াখালীতে স্থানীয় পর্যায়ে সালিস বৈঠকে অংশ নিলে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে ওই বিজ্ঞপ্তির কপি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

সম্প্রতি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী সালিস বৈঠকে অংশ নিয়ে আর্থিক লেনদেনে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা এ বিষয়ে ফেসবুকে নানা মন্তব্য তুলে ধরে ক্ষোভ জানিয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার দলীয় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে জেলা বিএনপি এই বিজ্ঞপ্তি দেয়।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান টোটন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামনে জাতীয় নির্বাচন। সংকটময় মুহূর্ত আসছে, তাই দলীয় নেতা-কর্মীরা যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনায় না জড়ান, তাই তাঁদের সতর্ক করা হয়েছে।’

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিএনপি জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামী সংগঠন। এই দলের প্রত্যেক কর্মী জনগণের আস্থার প্রতীক এবং আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রণী সৈনিক। তাই দলের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন রাখা ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে জেলা বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কোনো নেতা-কর্মী স্থানীয় পর্যায়ে কোনো প্রকার সালিস, দাঙ্গা-ফ্যাসাদ বা পক্ষপাতদুষ্ট এবং মধ্যস্থতাকারী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে না।

একই সঙ্গে ওই বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মসূচি এবং জনগণের পাশে থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া নেতা-কর্মীদের সদা হাস্যোজ্জ্বল, ভদ্র ও অমায়িক আচরণমুখী হতে বলা হয়েছে। এ নির্দেশনা অমান্য করলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ