হলিউডে অ্যাকশন, থ্রিলার ও হরর মুভির পাশাপাশি বক্স অফিস কাঁপিয়ে বেড়ায় রোমান্টিক ছবিগুলোও। বহু ছবি যুগে যুগে ভালোবাসার বার্তা দিয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছে হলিউডে। এবারের বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো হলিউডের দর্শকনন্দিত কয়েকটি রোমান্টিক সিনেমার কথা…

কাসাব্ল্যাঙ্কা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। যুক্তরাষ্ট্র যদিও তখনও যুদ্ধে যোগ দেয়নি, কিন্তু ইউরোপ মোটামুটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধের বিভীষিকা থেকে বাঁচার আশায় দলে দলে মানুষ ইউরোপ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে সরাসরি যাওয়ার উপায় নেই। যেতে হয় প্যারিস, মার্সেই, ভূমধ্যসাগর, ওরান, কাসাব্ল্যাঙ্কা, লিসবন, যুক্তরাষ্ট্র অনুসরণ করে। এখন সমস্যা হচ্ছে কাসাব্ল্যাঙ্কা পর্যন্ত আসতে পারলেও এখান থেকে লিসবন যাওয়ার অনুমতিপত্র জোগাড় করা খুবি কঠিন। তাই কাসাব্ল্যাঙ্কায় দিন দিন বাড়ছে উদ্বাস্তুর সংখ্যা, যারা কিনা বৈধ-অবৈধ যেকোনো উপায়ে অনুমতিপত্র জোগাড় করতে ইচ্ছুক। আবার এটি জোগাড় করে দেওয়া নিয়ে কালোবাজারে চলছে রমরমা ব্যবসা। শুধু অর্থই নয়, সেই সঙ্গে উঁচু পর্যায়ের দহরম-মহরম ছাড়া এ অনুমতিপত্র জোগাড় করা মোটামুটি অসম্ভব। কাসাব্ল্যাঙ্কায় জনপ্রিয় ক্যাফে চালায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে নির্বাসিত রিক ব্লেইন। ঘটনাক্রমে ট্রানজিটের দুটো কাগজ পায় ব্লেইন। এই শহরেই সে আবিষ্কার করে সাবেক প্রেমিকা ইলসাকে। ইলসার স্বামী লাজলো চেকেস্লোভাকিয়ার বিদ্রোহী নেতা, জার্মানরা যাকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। ইলসা জানে, কেবল ব্লেইনই সাহায্য করতে পারবে তাদের। ঈর্ষাকাতর ব্লেইন কি সাহায্য করবে? সে কি ছিনিয়ে নেবে তাঁর ভালোবাসাকে, নাকি পালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবে তাকে। প্রেমিকার স্বামীর ব্যাপারে বা কি পদক্ষেপ নেবে সে? এ উত্তরগুলো পেতে আপনাকে দেখতে হবে সিনেমাটি। ১৯৪২ সালে মুক্তি পাওয়া এ সিনেমাটি পরিচালনা করেছেন মাইকেল কার্টিজ। এতে অভিনয় করেছেন হামফ্রি বোগার্ট, ইনগ্রিড বার্গম্যান প্রমুখ। ছবিটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম জনপ্রিয় চলচ্চিত্র হিসেবে গণ্য করা হয়।

গন উইথ দ্য উইন্ড
১৯৩৯ সালের ছবি। গৃহযুদ্ধ চলাকালীন জর্জিয়ার এক তুলা বাগানের প্রেক্ষাপটে এ ছবির গল্প গড়ে উঠেছে। খামার মালিকের চঞ্চল কন্যা স্কারলেট ভালোবাসে এসলে উইলকেসকে। ওদিকে এসলের সঙ্গে মেলানি হেমিল্টনের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। এসলের কাছে প্রশ্রয় না পেয়ে স্কারলেট নজর দেয় রেথ বাটলারের দিকে।  দুরন্ত রেথ বিয়েতে আগ্রহী নয়। এক রকম জেদের বশেই স্কারলেট অন্য আরেকজনকে বিয়ে করে। তবুও এসলের প্রতি তার টান যায় না। স্কারলেট দুটি বিয়ে করেও সুখী হতে পারে না। যুদ্ধের দামামায় সে রেথকে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালিয়ে যায়। রেথও শেষ পর্যন্ত তার কাছে ধরা দেয় না। গৃহযুদ্ধ আর স্কারলেটের অস্থিরতা পাশাপাশি চলে। নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছেও স্কারলেট দেখে তার বাবার বাড়ি-ঘর সব ভেঙে গেছে। খামারের একবিন্দু অংশও অবশিষ্ট নেই। ভিক্টর ফ্লেমিং পরিচালিত এ সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে মার্গারেট মিচেলের লেখা একই নামের উপন্যাস থেকে। ১০৩৭ পৃষ্ঠার ঢাউস উপন্যাস ‘গন উইথ দ্য উইন্ড’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ সালে। এ উপন্যাস পুলিৎজার পুরস্কারও পায়। প্রযোজক ডেভিড ও সেলজনিক উপন্যাস ছাপা হওয়ার পর পরই লেখকের কাছ থেকে এর চলচ্চিত্র কিনে নেন ৫০ হাজার ডলারে। তখন পর্যন্ত এটিই ছিল কোনো উপন্যাসের সর্বোচ্চ দাম। প্রায় ৫০ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এ ছবি ১৯৩৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর আটলান্টায় মুক্তি পায়। মুক্তির আগে ছবির প্রচারণা চলে তিন বছর ধরে। মুক্তি পাওয়ার পর শুধু হলিউডে নয়, সারা বিশ্বেই এ ছবি একটি ইতিহাস হয়ে ওঠে। অস্কারে ১৩ নমিনেশন ও ১০টি পুরস্কার পায় এ ছবি।

রোমান হলিডে

রাজকুমারী অ্যান বেরিয়েছেন ইউরোপ ভ্রমণে। ছুটিতেও শান্তি নেই। সব সময় নিরাপত্তারক্ষীদের বর্মের আড়ালে থাকলে কি আর ছুটি কাটানো যায়? এক রাতে হোটেল ছেড়ে পালিয়ে গেল অ্যান। তার সঙ্গে দেখা হলো রোমে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে আসা মার্কিন সাংবাদিক জোয়ের। অ্যান তখন ঘুমিয়ে ছিল বেঞ্চিতে। জো নিজের ঘরে নিয়ে এলো অ্যানকে। দু’জনের মনের কোণে উঁকি দিল প্রেমসূর্য।  জো আবিষ্কার করল, অ্যান আর কেউ নয়, মহামান্য রাজকন্যা! এমনই এক গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমা ‘রোমান হলিডে’। ১৯৫৩ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি পরিচালনা করেছেন উইলিয়াম ওয়াইলার। এ সিনেমাটি চলচ্চিত্রপ্রেমীর কাছে ভালোবাসার ছবি, আবেগের নাম। চলচ্চিত্রবোদ্ধাদের রায়ে ধ্রুপদি সিনেমা। এ সিনেমার শেষ দৃশ্য বুকের মধ্যে যেমন হাহাকার জাগায়, মন খারাপ করিয়ে দেয়। অড্র্রে হেপবার্ন ও গ্রেগরি পেক অভিনীত ‘রোমান হলিডে’ তিনটি অস্কারসহ, গোল্ডেন গ্লোব ও আমেরিকান রাইটার্স গিল্ডের পুরস্কারও পায়। এ ছাড়াও আরও অনেক পুরস্কার অর্জন করে সিনেমাটি। এছাড়াও অনেক পুরস্কারের জন্যে নমিনেশনও পায়। হয়তো এত অর্জন বলেই সিনেমাটি নিয়ে কাটাছেঁড়াও কম করেননি সুশীল সমাজ। বেলজিয়ান অভিনেত্রী অড্রে হেপবার্ন এ ছবির মাধ্যমে হলিউড এবং সারাবিশ্বের নজর কাড়েন। এর আগে রেইনি ডে ইন প্যারাডাইস জাংশন ছবিতে তিনি অভিনয় করলেও এটিই তাঁর প্রথম বড় চরিত্র। শুধু কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগই নয়, এ ছবির কল্যাণে তিনি অস্কার, নিউইয়র্ক ফিল্ম ক্রিটিক সার্কেল এবং বাফটায় সেরা অভিনেত্রীর ক্যাটেগরিতে পুরস্কার জেতেন। গ্রেগরি প্যাক এবং অড্রে হেপবার্ন দু’জনেই চেয়েছিলেন এ ছবির সিক্যুয়াল তৈরি হোক। ১৯৭০ সালে রানী অ্যানের মেয়ে এবং লেখক জোর ছেলেকে নিয়ে একটা গল্পও তৈরি করা হয়। শেষ পর্যন্ত সে ছবি আলোর মুখ দেখেনি। রোমান হলিডে সিনেমার পরে আরও অনেক সিনেমা হয়েছে কাছাকাছি কাহিনি নিয়ে। মেকিং, গল্পসহ জনপ্রিয়তায় এর ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারেনি একটিও। বিশেষ করে ১৯৪০ সালে হার হাইনেস অ্যান্ড দ্য বেলবয় এবং ১৯৪২ সালে প্রিন্সে ও’ রুকে উল্লেখযোগ্য। যত কথাই হোক না কেন, অসাধারণ সিনেমা সবসময়ে অসাধারণই থেকে যাবে।

ওয়েস্ট সাইড স্টোরি

শেক্সপিয়ারের অমর সৃষ্টি রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট-অনুপ্রাণিত এ ছবির গল্প। নিউইয়র্ক শহরে রাস্তার দুই মাস্তান দলের মধ্যে মহাবিরোধ। জেটস বনাম শার্কস একে অপরের ছায়াও সহ্য করতে নারাজ। দুই শত্রুগোষ্ঠীর দুই তরুণ-তরুণীর মধ্যে অলৌকিক প্রেম বাসা বাঁধে। জেটস দলের নেতা টনি প্রেমে পড়ে শার্কস দলনেতা বার্নার্ডোর বোন মারিয়ার। কী ভবিষ্যৎ এই প্রেমের? মিউজিক্যাল ধাঁচের এ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল ১৯৬১ সালে। ছবির পরিচালক রবার্ট ওয়াইজ ও জেরম রবিনস।

অ্যান অ্যাফেয়ার টু রিমেম্বার

নিকি হচ্ছে ‘প্লেবয়’, প্রেম তার কাছে ছেলেখেলাই। ইউরোপ থেকে নিউইয়র্কের জাহাজে করে যাওয়ার সময় নিকের সঙ্গে পরিচয় টেরির। দু’জনের মধ্যে হয়ে গেল প্রেম। কথা ছিল ছয় মাস পর এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের ছাদে আবার দেখা হবে দু’জনের। দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে টেরি যেতে পারল না নির্দিষ্ট দিনে। অপেক্ষা করে ভাঙা মন নিয়ে ফিরে এলো নিকি। ভাবল, হয়তো টেরি সত্যিই তাকে ভালোবাসেনি। হয়তো সে বিয়েথাও করে ফেলেছে। কখনোই কি দেখা হবে না নিকি-টেরির? পরিচালনা করেছেন লিও ম্যাকক্যারি। ১৯৫৭ সালে মুক্তি পায় ছবিটি। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন ক্যারি গ্র্যান্ট এবং ডেবরা কের। 

দ্য ওয়ে উই ওয়্যার

কেটি আর হাবেল পড়ত একই কলেজে। দু’জনের জীবনদর্শন একেবারে আলাদা। কেটি মনেপ্রাণে সাম্যবাদী। স্পেনের গৃহযুদ্ধ কিংবা ইউরোপে হিটলারের উন্মেষ কোনোটাই সে ভালো চোখে দেখে না। কঠোর পরিশ্রম করে তাকে খরচ মেটাতে হয় পড়াশোনার। হাবেল খেলাধুলা নিয়ে মেতে থাকে। রাজনীতির ধার ধারে না। দুই ভিন্ন জগতের দুই বাসিন্দার দেখা হয় বহু বছর পর। পরিচালক সিডনি পোলাক। ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭৩ সালে।

সিটি লাইটস

পথের ধারে ফুল বেচে অন্ধ এক মেয়ে। তার ফুল কিনতে গিয়ে এক ভবঘুরে আবিষ্কার করে, মেয়েটি নিজেই সদ্য ফোটা নিষ্পাপ এক ফুল যেন। মেয়েটার প্রেমে পড়ে যায় সেই হতদরিদ্র ভবঘুরে। মেয়েটি ভাবে, ছেলেটা বুঝি অনেক ধনী পরিবারের কেউ। ভবঘুরেটি চায়, মেয়েটি ফিরে পাক দৃষ্টি। এর জন্য চাই অনেক টাকা। সেই টাকা জোগাড়ের চেষ্টায় নামে ভবঘুরেটি। এমনকি এর জন্য জেলেও যেতে হয়। মেয়েটি চোখের দৃষ্টি ফিরে পায়। আবিষ্কার করে, তাঁর স্বপ্নের রাজপুত্র আসলে হতদরিদ্র একজন। চার্লি চ্যাপলিনের সেরা সৃষ্টিগুলোর একটি। ১৯৩১ সালে মুক্তি পাওয়া এ ছবিটি নির্বাক, কিন্তু বাঙময়!

টাইটানিক

মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিওনার্দো ডিকাপ্রিও এবং কেট উইন্সলেট। নর্থ আটলান্টিক সমুদ্রের বুকে সৃষ্টি একটি মানবিক প্রেম এবং তার করণ সমাপ্তি নিয়ে তৈরি টাইটানিক ছবিটি। ১৯৯৭ সালে নির্মিত একটি ট্র্যাজেডিক প্রেমকাহিনি টাইটানিক। বিপুল জনপ্রিয়তার সঙ্গে এই ছবিটি অস্কার জয় করে।

প্রিটি ওম্যান

মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিচার্ড গিয়ার এবং জুলিয়া রবার্ট। ভালোবাসা যেকোনো সময় মনের কোণে এসে উঁকি দিতে পারে। প্রিটি ওম্যান ছবিতে এক সম্পদশালী পুরুষের কাছে তাই প্রেম হয়ে এসেছিল বন্ধনহীন প্রেমহীন এক নিশীথচারিণী। ১৯৯০ সালে নির্মিত ভীষণ সাবলীল ও সুন্দর এক প্রেমের ছবি প্রিটি ওম্যান।

রোমিও জুলিয়েট

বিশ্ববিখ্যাত লেখক উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের কালজয়ী ট্র্যাজেডি গল্প অবলম্বনে ১৯৯৬ সালে নির্মিত হয় রোমিও জুলিয়েট। মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিওনার্দো ডিকাপ্রিও এবং ক্লেয়ার ডেনিস। এর আগেও অনেকবার এ প্রেমকাহিনি নিয়ে ছবি নির্মিত হয়েছে। দুটি ভিন্ন পরিবারের পূর্ববর্তী রেষারেষি এবং আভিজাত্যের অহংকারকে পেছনে ফেলে দু’জন মানুষ প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে যায়। নানা রকম টানাপোড়েনের পর তাদের বিয়ে হয় এবং তথ্যগত ভুলের কারণে জীবনে একসময় নেমে আসে প্রেম উপাখ্যানের ট্র্যাজেডি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ম ন হল ড ন র ম ত হয় চলচ চ ত র উপন য স ও অন ক ব ল ইন পর চ ল র জন য ইউর প জনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

পিডিবির ভুলে ২৪৫ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হলো বাংলাদেশকে

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) খামখেয়ালিজনিত এক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশকে দুই কোটি মার্কিন ডলার, অর্থাৎ ২৪৫ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হয়েছে।

খামখেয়ালিটি হলো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ২০০০ সালে হওয়া ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের (আইসিসি) আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে (বিরোধ নিষ্পত্তির আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা) একটি মামলায় পক্ষভুক্ত না হওয়া। পক্ষভুক্ত হতে গেলে বাংলাদেশকে ৬০ হাজার মার্কিন ডলার খরচ করতে হতো। তা করেনি পিডিবি। ফলে আইসিসি আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে একতরফা রায় হয়েছে। দুই যুগ পর এখন বাংলাদেশকে জরিমানা দিতে হয়েছে ৩৩৩ গুণ বেশি অর্থ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গত ১৯ মে পিডিবিকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে, এ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ঋণ হিসেবে পিডিবিকে দেওয়া হবে, যা তারা দেবে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি স্মিথ কো-জেনারেশন (বাংলাদেশ) প্রাইভেট লিমিটেডকে। হরিপুরে ১০০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের স্পনসর (পৃষ্ঠপোষক) ছিল এই স্মিথ কো-জেনারেশন।

আইনজীবী ও পিডিবির তৎকালীন পর্ষদের খামখেয়ালির কারণে আজ এত বড় অঙ্কের অর্থ গচ্চা দিতে হলো। আইসিসির আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ না করাটা ছিল মস্ত ভুল। ফলে একতরফা রায় হয়েছে, যা বাংলাদেশের বিপক্ষে গেছে।বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান

অবশ্য পিডিবি অর্থ বিভাগের ঋণ নেয়নি। সংস্থাটি নিজের তহবিল থেকে গত ২৩ মে ২৪৫ কোটি টাকা পরিশোধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে কোম্পানিটি।

এই পাওনা টাকাকে কেন্দ্র করেই ২০২৪ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। জটিলতা এড়াতে তাঁরা দুজন পরে হোটেল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের বাসায় (বাংলাদেশ হাউস) গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইনজীবী ও পিডিবির তৎকালীন পর্ষদের খামখেয়ালির কারণে আজ এত বড় অঙ্কের অর্থ গচ্চা দিতে হলো। আইসিসির আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ না করাটা ছিল মস্ত ভুল। ফলে একতরফা রায় হয়েছে, যা বাংলাদেশের বিপক্ষে গেছে।’

ঘটনা শুরু যেভাবে

মূল ঘটনা ১৯৯৭ সালের অক্টোবরের। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার হরিপুরে বেসরকারি খাতে ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথ কো-জেনারেশন ইন্টারন্যাশনালের সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্মিথ কো-জেনারেশন (বাংলাদেশ) প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে দুটি চুক্তি করে বাংলাদেশ। কোম্পানিটির সঙ্গে পিডিবির একটি চুক্তি হয় ১৯৯৭ সালের ১৪ অক্টোবর। দুই দিন পর ১৬ অক্টোবর সরকারের সঙ্গে আরেকটি চুক্তি হয় বিদ্যুৎ কেনার (পিপিএ)।

চুক্তি অনুযায়ী বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হওয়ার কথা ১৯৯৮ সালের ১৫ আগস্ট। কিন্তু কোম্পানিটি তা পারেনি। শর্ত ছিল নির্ধারিত দিন থেকে উৎপাদন করতে না পারলে দুই মাস মেয়াদ বাড়াবে সরকার, তবে প্রতিদিনের জন্য ১০ হাজার মার্কিন ডলার করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কোম্পানিটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন তো দূরের কথা, কোনো নির্মাণকাজ করতে পারেনি; বরং আরও ৬ মাস ২০ দিন সময় চায়। সরকার তা না মেনে ১৯৯৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি পিপিএ ও জমির ইজারা চুক্তি বাতিল করে দেয়। শুধু তা–ই নয়, ব্যাংক নিশ্চয়তার (পিজি) ১৫ লাখ ডলারও নিয়ে নেয় পিডিবি।

সচিবালয়ে গত ২৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক থেকে মার্কিন কোম্পানিটিকে ২ কোটি ডলার দেওয়ার জন্য যে প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে এ ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। বিদ্যুৎসচিব ফারজানা মমতাজ এ প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। এতে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার কথা আসেনি। যদিও সম্প্রতি আলাদা এক চিঠিতে অর্থ বিভাগ এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছে বিদ্যুৎ বিভাগকে।

বিদ্যুৎসচিবের সঙ্গে গত ১৫ মে তাঁর কার্যালয়ে দেখা করে জানতে চাওয়া হয় যে যাঁদের কারণে বাংলাদেশকে এখন ২৪৫ কোটি টাকা গচ্চা দিতে হচ্ছে, তাঁদের তিনি বাঁচিয়ে দিলেন কেন। তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা জানান।

ঘটনাটা শেষ হয়েছে। তবে পিডিবির ভুল ছিল অনেক বড়অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদবিষয়টি যেভাবে আদালতে গড়াল

অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটিতে পাঠানো বিদ্যুৎসচিবের প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে, চুক্তি বাতিলের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিটি ২০০০ সালে ঢাকার সাব জজ পঞ্চম আদালতে আরবিট্রেশন মিসকেইস (বিবিধ মামলা) এবং নারায়ণগঞ্জের সাব জজ প্রথম আদালতে আরেকটি আরবিট্রেশন বিবিধ মামলা করে। উভয় মামলাই আদালত খারিজ করে দেন। আদালতে মামলার পাশাপাশি কোম্পানিটি পরে পিপিএ বাতিল ও পিজি নগদায়নের বিরুদ্ধে আইসিসি আরবিট্রেশনে যেতে পিডিবিকে নোটিশ দেয়। নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবি যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিটিকে চিঠি দিয়ে জানায়, আইনজীবী আজমালুল হোসেন কিউসি হতে পারেন আরবিট্রেটর।

কিন্তু আইসিসি বিদেশে আরবিট্রেশন মামলায় অংশগ্রহণের জন্য ট্রাইব্যুনাল খরচ বাবদ নির্ধারণ করে ৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার, যা উভয় পক্ষকে সমানভাবে বহন করতে হবে। এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার ডলার দিতে হবে অগ্রিম। অর্ধেক হিসেবে তখন পিডিবির খরচ করতে হতো অগ্রিমের ৬০ হাজার ডলার।

তখনকার পিডিবির পরিচালনা পর্ষদ সিদ্ধান্ত নেয়, তারা ট্রাইব্যুনাল খরচের কোনো অর্থ দেবে না। পিডিবির তৎকালীন আইনজীবী প্যানেল একই পরামর্শ দেয়। আইনজীবীরা আরও মত দেন, দেশে আরবিট্রেশন আইন হয়েছে ২০০১ সালে। এর আগে আইসিসির আরবিট্রেশনের রায় বাংলাদেশের বাইরে কার্যকর হবে না। তাঁরা মামলায় পক্ষভুক্ত না হতে পিডিবিকে পরামর্শ দেন।

পরে একপক্ষীয় শুনানি শেষে আইসিসি আরবিট্রেশন আদালত ২০০৩ সালের ৩০ অক্টোবর রায় দেন। রায়ে বলা হয়, পিডিবি বছরে ৪ শতাংশ সুদসহ মোট ১ কোটি ৩০ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ দেবে স্মিথ কো-জেনারেশনকে।

রায় বাস্তবায়নের ছয় মামলা

আইসিসি আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালের রায় বাস্তবায়নে স্মিথ কো-জেনারেশন পরে ছয়টি মামলা করে। এগুলো হয় যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দ্য ডিস্ট্রিক্ট অব অব কলাম্বিয়া, ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দ্য নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্ক, সুপ্রিম কোর্ট অব নিউইয়র্ক, স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গের কোর্ট অব সেশন, সুইজারল্যান্ডের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট অব বাডেন এবং ঢাকার আদালতে।

আইসিসির রায় বাস্তবায়নে ২০০৭ সালের ২০ জুলাই রায় দেন যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট অব কলাম্বিয়া। স্মিথ কো-জেনারেশন এ আদালতে বিষয়টি আবার উত্থাপন করে। এরপর ২০২৪ সালের ১৯ মে পিডিবির বিরুদ্ধে সংশোধিত চূড়ান্ত রায় দেন আদালত। এবারের রায়ে বলা হয়, পিডিবি ৩ কোটি ১৭ লাখ ১০ হাজার ডলার পরিশোধ করবে স্মিথ কো-জেনারেশনকে। কোম্পানিটি তখন তার আইনি প্রতিষ্ঠান ডোয়ান মরিস এলএলপিকে বিষয়টি জানায়। কিন্তু রায় আর বাস্তবায়ন হচ্ছিল না।

বিষয়টি নিয়ে জানতে গত ২৮ মে পিডিবির চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনিও কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নর যে বিপদে পড়েছিলেন

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায় যোগ দিতে ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন যায় উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন একটি দল, যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরও ছিলেন। ২১-২৬ অক্টোবর (২০২৪) ছিল এ বার্ষিক সভা।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উপদেষ্টা ও গভর্নরের ওয়াশিংটন যাওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে স্মিথ কো-জেনারেশন আরেকটি মামলা করে ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ায়। আদালত তখন অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নরের জবানবন্দি নেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু যেহেতু অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নরের কূটনৈতিক অনাক্রম্যতা আছে এবং তাঁরা পিডিবির সঙ্গে সম্পর্কিত নন, তাই তাঁরা জবানবন্দি দেননি।

স্মিথ কো-জেনারেশন তখন আবার আদালতে (যুক্তরাষ্ট্র) যায়। আদালত ২৫ অক্টোবর (২০২৪) গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন এবং সালেহউদ্দিন আহমেদ ও আহসান এইচ মনসুরকে আটক করে আদালতে নিয়ে আসতে ইউএস মার্শাল সার্ভিসকে নির্দেশ দেন। গ্রেপ্তার এড়াতে তাঁরা দুজন তখন আশ্রয় নেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সরকারি বাসভবনে। তাঁরা ছিলেন ওয়াশিংটন ডিসির ১০ নম্বর সড়কে অবস্থিত অ্যাম্বাসি স্টু হোটেলে। দূতাবাসের গাড়িতে করে তাঁরা ম্যারিল্যান্ডে রাষ্ট্রদূতের বাসায় চলে যান।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাস ২০২৪ সালের ১৮ অক্টোবর এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করতে আইনি প্রতিষ্ঠান ফলি হোয়াগ এলএলপিকে নিয়োগ দেয়। তারা আপিল করলে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিত করেন এবং শুনানির দিন ধার্য করেন ২৮ অক্টোবর (২০২৪)। ফলি হোয়াগ এলএলপি বিষয়টি আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির জন্য মধ্যস্থতার আবেদন জানায় বিচারকের কাছে এবং বিচারক তা গ্রহণ করেন। এভাবেই অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নর ওই যাত্রায় রক্ষা পান।

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ গত ৩০ জুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটা শেষ হয়েছে। তবে পিডিবির ভুল ছিল অনেক বড়।’

বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে, ২ কোটি ডলারের বাইরে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করা আইনি প্রতিষ্ঠান ফলি হোয়াগকে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ডলার দিতে হয়েছে।নিষ্পত্তির পথ খুলল যেভাবে

মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের রায়কে ভিত্তি ধরে দেশে তখন গুরুত্বের সঙ্গে কাজ শুরু করেন বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। ২০২৪ সালের ৪ নভেম্বর এ বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

এরপর স্মিথ কো-জেনারেশনের মধ্যস্থতাকারী, বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির কর্মকর্তা এবং অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান অনলাইনে ৫টি বৈঠক করেন। শুরুতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, জব্দ করা ব্যাংক নিশ্চয়তার ১৫ লাখ ডলার ফেরত দেওয়ার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হোক। বিপরীতে স্মিথ কো-জেনারেশন দাবি করে ৩ কোটি ১৭ লাখ ১০ হাজার ডলার। আরও দাবি করে, মামলার খরচ বাবদ আরও ১ কোটি ৮০ লাখ ডলার তাদের দিতে হবে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাল্টা প্রস্তাবে কোম্পানিটিকে বলা হয়, ১৫ লাখ ডলার ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি দেশের বিদ্যমান আইনের আওতায় বিদ্যুৎ খাতে তাদের বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হবে। এতেও রাজি হয়নি স্মিথ কো–জেনারেশন। বাংলাদেশ পরে ১ কোটি ডলারে বিরোধ নিষ্পত্তির প্রস্তাব দেয়। স্মিথ কো-জেনারেশন তখন নতুন প্রস্তাব দেয়। সেটি হলো, এককালীন ২ কোটি ৫০ লাখ ডলারে বিরোধ নিষ্পত্তি হতে পারে। অথবা ২ কোটি ৪০ লাখ ডলার ও দুটি বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগের সুযোগ দিলে তারা মেনে নেবে।

বিষয়টি নিয়ে মধ্যস্ততায় থাকা বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের সঙ্গে গত ২৬ মে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনিও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অবশ্য অর্থ বিভাগ ও পিডিবি সূত্র জানায়, পরে স্মিথ কো-জেনারেশন ২ কোটি ডলারে রাজি হয়। বাংলাদেশ সরকারও সিদ্ধান্ত নেয়, এই পরিমাণ অর্থ ওই কোম্পানিকে দিয়ে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে আগেই সম্মতি দিয়ে রেখেছিলেন (গত ১৮ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টা। গত ২৮ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে এ বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে, ২ কোটি ডলারের বাইরে বাংলাদেশের পক্ষে কাজ করা আইনি প্রতিষ্ঠান ফলি হোয়াগকে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ডলার দিতে হয়েছে।

ঘটনা শুনে মনে হচ্ছে আইসিসি আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে অংশ নিলে বাংলাদেশেরই জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল, যেহেতু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটি তারা (যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি) পারেনি। অথচ আজ বড় অঙ্কের জরিমানা তো গুনতে হচ্ছেই, মাঝখানে বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হলো এবং দেশের বদনাম হলো।ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ‘দেশের বদনাম হলো’

১৯৯৬-৯৯ সময়ে পিডিবির চেয়ারম্যান ছিলেন নুরউদ্দিন মাহমুদ কামাল, তিনি ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর মারা যান। ১৯৯৯-০০ সময়ে চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক সচিব কামরুল ইসলাম সিদ্দিক, যিনি মারা যান ২০০৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর। ২০০০-০২ সময়ে চেয়ারম্যান ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম এ মালেক, যিনি মারা যান ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনা শুনে মনে হচ্ছে আইসিসি আরবিট্রেশন ট্রাইব্যুনালে অংশ নিলে বাংলাদেশেরই জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল, যেহেতু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটি তারা (যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি) পারেনি। অথচ আজ বড় অঙ্কের জরিমানা তো গুনতে হচ্ছেই, মাঝখানে বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হলো এবং দেশের বদনাম হলো।’

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দায়ী ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ জীবিত থাকলে শাস্তি দিতে হবে। এমনকি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পিডিবিরও শাস্তি পাওয়া উচিত। অর্থ বিভাগের পরামর্শ মেনে অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত করা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ