ইউরোপ ‘ট্রাম্প সংকট’ থেকে বের হবে কী করে
Published: 18th, February 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেন নিয়ে ‘শান্তি আলোচনা’ করতে চান। বৈঠকটি সৌদি আরবের রিয়াদে হতে পারে। এই দুই নেতার বৈঠক থেকে কিছু ফল আসতে পারে। আবার এটি ২০১৮ সালের হেলসিঙ্কি সম্মেলনের মতো সম্পূর্ণ ব্যর্থও হতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ট্রাম্পের এই বিস্ফোরক ঘোষণা ইউরোপে এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা উসকে দিয়েছে। সেটি হলো ক্রমে অনির্ভরযোগ্য হয়ে ওঠা একজন মিত্রকে (অর্থাৎ ট্রাম্পকে) নিয়ে ইউরোপ কী করবে? একজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউরোপের ভবিষ্যৎ নিয়ে ইউরোপীয়দের অগ্রাহ্য করে এত বড় ভূরাজনৈতিক সমঝোতার কথা ভাবতে পারেন—এটাই অনেকের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে।
আরেকটি আতঙ্কের বিষয় হলো, যদি আমেরিকা ইউরোপকে পরিত্যাগ করে, তাহলে তাদের একা একাই আক্রমণাত্মক রাশিয়াকে মোকাবিলা করতে হবে। এই সংকটের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ইউরোপে দুটি ভিন্নমত গড়ে উঠেছে।
এক দল বলছে, এ অবস্থা সামাল দেওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো আমেরিকার আরও ঘনিষ্ঠ হওয়া, যাতে তারা ইউরোপকে ছেড়ে না যায়। এর মানে হলো ট্রাম্পের উল্টাপাল্টা কথাবার্তা গায়ে না মাখানো এবং প্রয়োজনে তাঁর অহংবোধকে সমঝে চলা ও কিছু দাবি মেনে নেওয়া। ট্রাম্পকে খুশি করতে ইউরোপের কিছু দেশ আমেরিকায় তৈরি গাড়ির শুল্ক কমানোর বা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি তরল গ্যাস কেনার কথা ভাবছে।
তারা মনে করছে, ইউরোপকে প্রতিরক্ষা খাতে, বিশেষ করে আমেরিকার তৈরি অস্ত্র কেনার ক্ষেত্রে আরও বেশি খরচ করতে হবে। ইউরোপের পূর্বাঞ্চলের দেশগুলো এতে বেশি আগ্রহী। এরই মধ্যে পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র ও রোমানিয়া যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার জন্য তালিকায় নাম লিখিয়েছে।
ইউক্রেনও এই গ্রুপের সদস্য। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ট্রাম্পকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার আগেই নিজের দিকে টানতে শুরু করেছিলেন। মনে হচ্ছে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হস্তান্তর করার তাঁর প্রস্তাব ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ (মাগা) সমর্থকদের এবং খোদ ট্রাম্পের কাছে আকর্ষণীয় হয়েছে।
তবে জেলেনস্কি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং মার্কো রুবিও ও মাইক ওয়াল্টজের মতো পুরোনো ধাঁচের রিপাবলিকান কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাবেন, যাতে ইউক্রেনের জন্য মার্কিন অবস্থানকে প্রভাবিত করা যায়। ক্রেমলিন এবং মাগা দলের লোকেরা মনে করেন, ইউক্রেনীয়দের নিজেদের ব্যাপারে নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার মুরোদ নেই।
এ কারণে ইউরোপে আরেকটি মত রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর তাদের নির্ভরশীলতা কমানোর পক্ষে। এই মতামতের অন্যতম সমর্থক ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। সম্প্রতি তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইউরোপকে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে (যেমন প্রতিরক্ষা এবং প্রযুক্তি) স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে। প্যারিসে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এআই সম্মেলন এবং ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্কযুদ্ধের প্রস্তুতির মধ্যে ইউরোপের এই দিকটি এগিয়ে চলেছে।
মাখোঁ প্রথম ইউরোপীয় নেতা হিসেবে ইউক্রেনে ইউরোপীয় সেনা পাঠানোর ধারণাটি সামনে এনেছেন। যদিও তিনি বিশ্বাস করেন না, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্য মিলে দুই লাখ সেনা পাঠানোর সক্ষমতা রাখে। তবে তাঁর দৃষ্টিতে বিকল্পটি এখনো আলোচনার টেবিলে রয়েছে। মাখোঁ ট্রাম্পের উদ্যোগকে ইউরোপীয়দের জন্য একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন, যাতে তারা নিজেদের শক্তিশালী করে তুলতে পারে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকারী হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। এর মাধ্যমে ইউক্রেন ইউরোপের জন্য বৈশ্বিক গুরুত্ব অর্জনের অনুঘটক
হয়ে উঠতে পারে।
মাখোঁ ইউরোপের নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন বটে, কিন্তু তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি কিছু ঝুঁকিও নিয়ে আসে। তিনি ফ্রান্সের নেতৃত্বে ইউরোপকে আরও শক্তিশালী এবং নিরাপত্তা দেওয়ার পক্ষে। কিন্তু বাস্তবতা হলো ফ্রান্সের ভেতরেই তাঁর জনপ্রিয়তা কমছে এবং ভবিষ্যতে তাঁর জায়গায় পরবর্তী নেতা কে হবেন, সেটি এখনো স্পষ্ট নয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জার্মানির আগামী নির্বাচনের (২৩ ফেব্রুয়ারি) পর সম্ভবত মধ্য-ডানপন্থী খ্রিষ্টান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) দেশ শাসন করবে। তারা ইউরোপের নিরাপত্তা ও আক্রমণাত্মক নীতি নিয়ে মাখোঁর সঙ্গে সহমত না–ও হতে পারে।
ইউরোপীয় দেশগুলোর সামরিক বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অনেক নির্ভরশীল এবং তাদের সামরিক খাতে অতিরিক্ত ব্যয় করার ক্ষমতাও কম। তাদের বাজেটও সীমিত। এটি তাদের সামরিক সক্ষমতার উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে। বিশেষ করে জার্মানির জন্য তাদের ‘ডেট ব্রেক’ নীতি অর্থনৈতিক খরচ সীমিত করার চেষ্টা করছে। এটি সামরিক খাতে অতিরিক্ত ব্যয়ের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। ইউরোপের আরেক সমস্যা হচ্ছে উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নে পিছিয়ে থাকা। এটি তাদের চীনা এবং আমেরিকার তুলনায় দুর্বল করে তুলছে।
ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি ইউরোপকে জানান দিচ্ছে, ইউরোপকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। ফলে ইউরোপকে নিজের স্বার্থেই বদলাতে হবে, যাতে তারা নিজেদের মতো করে নীতি গ্রহণ করতে পারে এবং সব প্রতিকূল অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য ছাড়াই সামাল দিতে পারে।
● দিমিতার বেচেভ কার্নেগি ইউরোপের সিনিয়র ফেলো
আল–জাজিরা থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্ত আকারে অনূদিত
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউর প য় ইউর প র ইউক র ন র জন য আম র ক
এছাড়াও পড়ুন:
আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান
এশিয়া কাপ-২০২৫ এর সুপার ফোরে জায়গা করে নিলো আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান। বুধবার দিবাগত রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে ভারতের সঙ্গী হলো সালমান-শাহীনরা।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আলো-ঝলমলে রাতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভার পর্যন্ত টিকেছিল আমিরাত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। সেই সুবাদে সহজ জয় নিয়ে শেষ চারে জায়গা নিশ্চিত করে পাকিস্তান।
আরো পড়ুন:
আরব আমিরাতকে ১৪৭ রানের টার্গেট দিল পাকিস্তান
বেথেলের ইতিহাস গড়া দিনে ইংল্যান্ডের দাপুটে জয়
এই জয়ের নায়ক নিঃসন্দেহে শাহীন শাহ আফ্রিদি। বিপদের মুহূর্তে নামতে হয় তাকে ব্যাট হাতে। সেখানে ১৪ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কার ঝড়ে অপরাজিত ২৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি, যা পাকিস্তানের সংগ্রহকে দাঁড় করায় লড়াইযোগ্য অবস্থানে। শুধু ব্যাটেই নয়, বল হাতেও ছিলেন সমান কার্যকর। ৩ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচ করে তুলে নেন ২টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। এমন সর্বাঙ্গীন পারফরম্যান্সে স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠে যায় তার ঝুলিতে।
তবু শুরুটা বেশ আশাব্যঞ্জক ছিল আমিরাতের। ১৩.৫ ওভার পর্যন্ত তারা প্রতিযোগিতায় টিকে ছিল দারুণভাবে। তিন উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করেছিল ৮৫ রান। কিন্তু এরপর যেন ধস নামে। মাত্র ২০ রানের ব্যবধানে বাকি সাত উইকেট হারিয়ে পুরো দল অলআউট হয়ে যায় ১০৫ রানে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন রাহুল চোপড়া, যার ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ১টি ছক্কা। ধ্রুব পারাশার যোগ করেন ২০, মুহাম্মদ ওয়াসিম ১৪ এবং আলিশান শারাফু করেন ১২ রান।
পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণে শাহীনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুটি করে উইকেট নেন হারিস রউফ ও আবরার আহমেদ।
এর আগে ব্যাট হাতে পাকিস্তানও ভুগেছে। চারজন ছাড়া কেউ দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি। ফখর জামান খেলেন ৩৬ বলে ৫০ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস, যেখানে ছিল ২টি চার ও ৩টি ছক্কা। শাহীন আফ্রিদির অপরাজিত ২৯ রান ছাড়া অধিনায়ক সালমান আলি আগা ২০ এবং মোহাম্মদ হারিস যোগ করেন ১৮ রান।
আমিরাতের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন জুনায়েদ সিদ্দিকী। তিনি ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে তুলে নেন ৪টি উইকেট। সিমরানজিত সিংয়ের বোলিং ফিগারও কম চমকপ্রদ নয়, ৪ ওভারে ২৬ রান খরচ করে শিকার করেন ৩ উইকেট।
এই জয়ে পাকিস্তান-ভারত দ্বৈরথের আরেকটি অধ্যায় লেখার সুযোগ তৈরি হলো। শুধু তাই নয়, ভাগ্য যদি সহায় হয়, তবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ফাইনাল লড়াইও দেখা যেতে পারে এবারের এশিয়া কাপে।
ঢাকা/আমিনুল