জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘আয়নাঘরসহ সব নিষ্ঠুরতার মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনার ১৭ বছরের কালো যুগে দেওয়া সব মিথ্যা মামলা ও কথিত রায়ে অনেকেই মুক্তি পেলেও জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলাম কেন এখনো কারাবন্দী?’ তিনি এ টি এম আজহারুল ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেন, স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী এখনো বৈষম্যের শিকার।

মঙ্গলবার বিকেলে খুলনার শহীদ হাদিস পার্কে সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন। কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে খুলনা মহানগর ও জেলা জামায়াত আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর জামায়াতের আমির মাহফুজুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ।

২০১০ সালের ৩০ জুনের পর এটি খুলনায় প্রথম প্রকাশ্য কোনো সমাবেশ উল্লেখ করে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘৫ আগস্টের পরের দিন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হলেও জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারকে কেন এখনো কারাগারে থাকতে হবে? জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের আমরাও তো শরিক। এমনকি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে জামায়াতও ছিল রাজপথে।’ তিনি বর্তমান রাষ্ট্রপতিকে ফ্যাসিবাদের প্রতীক আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের জুলুম থেকে রক্ষার জন্য অন্তত একটি সুবিচার করুন, এ টি এম আজহারের দণ্ডকে বাতিল ঘোষণা করুন।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের উদ্দেশে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা মওকুফের সুযোগ রয়েছে। অবিলম্বে সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এ টি এম আজহারকে মুক্তি দিন।’ ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে বিচারিক কার্যক্রম সারা বিশ্বে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্বৈরাচারের আমলে গ্রেপ্তার এ টি এম আজহারুল ইসলামকে কারাগারে আটক রাখা তাঁর প্রতি চরম জুলুম ও অন্যায় ছাড়া আর কিছুই নয়।

খুলনা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান ও মহানগরের সহকারী সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা আমির মাওলানা এমরান হুসাইন, জেলার নায়েবে আমির মাওলানা কবিরুল ইসলাম, মহানগরের সেক্রেটারি শেখ জাহাঙ্গীর হোসাইন, বটিয়াঘাটা উপজেলা আমির মাওলানা শেখ মো.

আবু ইউসুফ, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের খুলনা জেলার সভাপতি অধ্যক্ষ গাউসুল আজম হাদী, মহানগরের সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের খুলনা মহানগরের সভাপতি আরাফাত হোসেন, খুলনা উত্তর জেলার সভাপতি আবু ইউসুফ ফকির ও দক্ষিণের সভাপতি আবু জার আল গিফারী।

বক্তারা বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর দেশবাসী আশা করেছিলেন তাঁরা সব ধরনের জুলুম-নির্যাতন থেকে মুক্তি পাবেন। যারা মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক, তাঁরা মুক্তি পাবেন। কিন্তু এ টি এম আজহারুল ইসলামকে এখনো কারাগারে বন্দী রাখায় দেশবাসী বিস্মিত ও হতবাক।

সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর শহীদ পার্ক থেকে শুরু হয়ে পিকচার প্যালেস মোড়, ডাকবাংলো মোড়, ফেরিঘাট, পাওয়ার হাউস মোড় হয়ে শিববাড়ী মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।

মিছিলে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের অভিযোগ

এদিকে সমাবেশ শেষে জামায়াতের মিছিলের সময় পেট্রলবোমা ছোড়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে সেটি বিস্ফোরিত হয়নি। সন্ধ্যায় নগরের শিববাড়ী মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযোগ করেন, আজকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জামায়াত মহানগর ও জেলা শাখার একটি বিশাল মিছিল বের হয়। মিছিলটি শিববাড়ী মোড় অতিক্রম করার সময় মিছিলের শেষ অংশে একটি পেট্রলবোমা ছোড়া হয়। সেটা তাঁদের এক ব্যক্তির গায়ে লাগে। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে সেটা বিস্ফোরিত হয়নি। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে।

জানতে চাইলে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা পুরোনো বোতলে সামান্য পেট্রল ছিল। কোনো বোমাজাতীয় কিছু না। বিষয়টি নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানো হয়েছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ ল ম পরওয় র আম র ম

এছাড়াও পড়ুন:

মানুষ বলছে, সব দলের শাসন দেখা হয়েছে, বাকি শুধু ইসলামি শাসন দেখার: গোলাম পরওয়ার

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আপনারা বিগত ৫৪ বছরে বিভিন্ন দলের শাসন দেখেছেন। সেখানে জনগণের কাঙ্ক্ষিত কল্যাণ সাধিত হয়নি। বিগত সরকারগুলো হত্যা, লুটপাট, দুর্নীতি, অন্যায়, অত্যাচার, অবিচারের মাধ্যমে দেশকে একটি অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। দেশের মানুষ এখন বলতে শুরু করেছে, সব দলের শাসন দেখা হয়েছে, শুধু বাকি রয়েছে ইসলামি শাসন দেখার। তাই তো আমিরে জামায়াত শফিকুর রহমান একটি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের ডাক দিয়েছেন। একটি জনমুখী ও কল্যাণকর রাষ্ট্রের রূপরেখা ঘোষণা করেছেন। যেখানে লুটপাট-দুর্নীতির মাধ্যমে দেশ তলাবিহীন ঝুড়ি হবে না, বেকারত্বের অভিশাপ কোনো যুবককে বয়ে বেড়াতে হবে না, সকল বৈষম্য দূর হবে। মানুষ সত্যিকার একটি কল্যাণরাষ্ট্র দেখতে পাবে।’

আজ রোববার সকালে পবিত্র হজ পালন শেষে মিয়া গোলাম পরওয়ার নিজ বাড়িতে আসার পথে খুলনার সিকিরহাট, ফুলতলা বাজার ও শিরোমনি শহীদ মিনার চত্বরে স্থানীয় জামায়াত আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরের কথা অনুযায়ী হয়তো আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন হতে পারে। জামায়াতে ইসলামী একটি নির্বাচনমুখী দল। মহামান্য হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ও প্রতীক দাড়িপাল্লা ফিরিয়ে দিয়েছে। সুতরাং আগামী নির্বাচনে দাড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টির জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

সকাল ১০টায় ফুলতলা ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মফিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সিকিরহাট খেয়াঘাট চত্বরে, সকাল সাড়ে ১০টায় ফুলতলা উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবদুল আলীম মোল্যার সভাপতিত্বে ফুলতলা বাসস্ট্যান্ড চত্বরে ও খানজাহান আলী থানা জামায়াতের আমির সৈয়দ হাসান মাহমুদের সভাপতিত্বে শিরোমনি শহীদ মিনার চত্বরে অনুষ্ঠিত পৃথক পৃথক পথসভা হয়। এসব পথসভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মিয়া গোলাম কুদ্দুস, জেলা অফিস সেক্রেটারি আশরাফুল ইসলাম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য শেখ সিরাজুল ইসলাম, জেলা যুব বিভাগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা আল মুজাহিদ, জেলা ছাত্রশিবির সভাপতি ইউসুফ ফকির প্রমুখ।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মনে করেন, কল্যাণকর ও জনমুখী রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হলে সৎ মানুষের প্রয়োজন। জামায়াত নির্বাচিত হলে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কী কী করা হবে, বক্তব্যে সেসব তিনি তুলে ধরেন।

অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ আসনে জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য ছিলেন গোলাম পরওয়ার। বক্তব্যে নিজের সংসদীয় এলাকায় ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বর্ণনাও তুলে ধরেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মানুষ বলছে, সব দলের শাসন দেখা হয়েছে, বাকি শুধু ইসলামি শাসন দেখার: গোলাম পরওয়ার
  • সাতকানিয়ায় প্রার্থী হয়েই পদ হারালেন শাহজাহান চৌধুরী