সম্রাট স্বপ্ন দেখছেন মমতাজের স্মৃতিকে অমর করে রাখতে তাজমহল তৈরি করবেন। যত টাকা লাগে, খরচ করার জন্য টাঁকশাল খুলে দিলেন। অথচ তাজমহলের টেন্ডার করার জন্য সম্রাটের প্রধান প্রকৌশলী, সরকারি আমলা ও ঠিকাদারেরা একের পর এক প্রকল্প বানাতে বানাতে ২০ বছর পার করে দেন। টেন্ডারই হয় না। সম্রাট বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। এদিকে স্বপ্নে মমতাজ এসে সম্রাটকে দেখা দেয়। এসে গলা জড়িয়ে ধরে। যাওয়ার সময় বলে যায়, তুমি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে তাজমহল তৈরি করবে। সেই প্রতিশ্রুতি তো রক্ষা করলে না। সম্রাট প্রচণ্ড আঘাত পান। অবশেষে যখন ঠিকাদার তাজমহলের টেন্ডার নোটিশ দেখাতে আসেন, ততক্ষণে সম্রাট সিংহাসনে বসে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। তখন ঠিকাদার বলছেন, টেন্ডারের কী হবে, প্রকৌশলীর চামচা বলছেন, ফাইলের কী হবে। প্রকৌশলী বলছেন, আবার কেউ আসবেন। তাজমহলের স্বপ্ন দেখবেন। তখন আবার আমাদের ডাকা হবে। তখন আবার এই ফাইল কাজে লাগবে। সম্রাটের মৃত্যুকে পাশে রেখে তারা ফাইলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যস্ত রইল। ‘তাজমহলের টেন্ডার’ নাটকে চলমান প্রকল্প-বাণিজ্যকে কটাক্ষ হানতে তাজমহল এসেছে মানুষের স্বপ্নের প্রতীক হয়ে।  
জুলাই বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে সব জেলায় প্রযোজনাকেন্দ্রিক নাট্যকর্মশালা ও শহীদ মুনীর চৌধুরীকে স্মরণ করে প্রথমবারের মতো মুনীর চৌধুরী জাতীয় নাট্যোৎসবের সমাপনী দিনে গত বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে নাটোর জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনায় রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নাট্যকার অজয় শুক্লা রচিত এ নাটক মঞ্চস্থ হয়। হিন্দি থেকে নাটকটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী। নাটকের নির্দেশক ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক কাজী শুসমিন আফসানা। সহকারী নির্দেশক ছিলেন নিশুতি সরকার।

প্রথম দৃশ্যে সমবেত স্বরে নৃত্যদলের কণ্ঠে শোনা যায়, ‘দেখাতে এসছি রঙ্গমঞ্চে আজকে সেই কাহিনি/ কেমনভাবে পেরেশান হলেন মোগল শিরোমণি।’ নাটকে সার্থকভবে উঠে এসেছে একজন মানুষের স্বপ্নকে সত্য করে তোলার প্রলোভন দিয়ে তাঁকে কীভাবে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া যায়, তা নাটকের শ্লেষাত্মক সংলাপেই উঠে এসেছে। শুরুর দিকে একজন নর্তকের গানের কথাতেই বোঝা যায়, ‘শাহানশাহ করেন হুকুম গর্জনে, হোক নকশা তৈয়ার গুনে সাত দিনে, অষ্টম দিনে লেগে যাবে নির্মাণে, খুলে দেওয়া হোক বাদশাহি কোষাগার, যেন মুখোমুখি না হয় কোনো বাধার।’ বাস্তবে এই কাজ ২০ বছরেও হয় না।

যখন তাজমহলের টেন্ডার নোটিশ এল, তখন সিংহাসনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন সম্রাট শাহজাহান। তাজমহলের টেন্ডার নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: প্রথম আলো।.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ