রাশিয়া–ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে গতকাল শুক্রবার জাতিসংঘে ৬৫ শব্দের একটি নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে রাশিয়ার অধিকৃত ইউক্রেনের ভূখণ্ড নিয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। রাশিয়ার হামলারও নিন্দা জানানো হয়নি। একই দিন ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররাও জাতিসংঘে আলাদা আরেকটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছে।

আগামী সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এই প্রস্তাব দুটি নিয়ে আলোচনা শেষে ভোটাভুটি হবে। এই দিনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের তিন বছর পূর্ণ হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও নিজেদের প্রস্তাবকে ‘সাদামাটা ও ঐতিহাসিক’ বলে উল্লেখ করে এটাকে সমর্থন জানাতে জাতিসংঘের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে সম্প্রতি রিয়াদে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শীর্ষ কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ইউক্রেনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, শান্তি আলোচনায় ইউক্রেনের প্রতিনিধির উপস্থিতি ‘গুরুত্বপূর্ণ নয়’। এ নিয়ে ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করেছে।

আরও পড়ুনশান্তি আলোচনায় ‘কার্ড’ রাশিয়ার হাতে: বিবিসিকে ট্রাম্প২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ওয়াশিংটনের ৬৫ শব্দের বিবৃতিতে ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা’ হয়েছে। পাশাপাশি ‘সংঘাত দ্রুত শেষ’ করতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

জাতিসংঘে নিয়োজিত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবকে ‘ভালো পদক্ষেপ’ বলে মন্তব্য করেছেন। তবে, এতে সংঘাতের ‘মূল কারণ’ উল্লেখ করা হয়নি বলে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান উল্টে দিয়ে ট্রাম্পের মুখে রাশিয়ার প্রতিধ্বনি১৮ ঘণ্টা আগে

ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের প্রস্তাবে চলতি বছরের মধ্যে যুদ্ধ শেষ করতে কূটনৈতিক চেষ্টা দ্বিগুণ করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এটা শেষ করতে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে, সেগুলোর কিছু বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবটিতে রাশিয়ার নিন্দা জানানো এবং ইউক্রেনের ভূখণ্ডের অখণ্ডতার কথা বলা হয়েছে।

প্রস্তাবটিতে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ২০২২ সালের অক্টোবরে ১৪৩ ভোটে পাস হওয়া ইউক্রেন যুদ্ধ-সংক্রান্ত একটি পুরোনো প্রস্তাবের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। প্রস্তাবটিতে অধিকৃত ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে কালবিলম্ব না করে সব রুশ সেনা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছিল।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন উত্তেজনার জেরে জেলেনস্কি ও ট্রাম্পের দূতের সংবাদ সম্মেলন বাতিল২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউক র ন য দ ধ ইউক র ন র

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ