বাঁধের কাজ ৮১ ভাগ সম্পন্ন তিন প্রকল্পে মাটি সংকট
Published: 22nd, February 2025 GMT
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) অধীনে তাহিরপুর উপজেলার হাওরাঞ্চলে চলছে ফসল রক্ষা বাঁধের শেষ মুহূর্তের কাজ। এ কারণে অধিকাংশ বাঁধের কাজই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। কয়েকটি বাঁধের কাজ দেরিতে শুরু করায় এবং শেষ মুহূর্তে মাটির সংকটের কারণে শেষ হতে সময় বেশি লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সদস্যরা।
জানা গেছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির প্রত্যক্ষ তদারকির আওতায় এ উপজেলায় ৭৪টি প্রকল্পের মাধ্যমে চলছে বাঁধ সংস্কার ও নির্মাণের কাজ। এর মধ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছে বনুয়া হাওরের তিনটি প্রকল্পের কাজে। মাটি সংকটের কারণে প্রকল্পগুলোর কাজ থমকে রয়েছে। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা না হলে নির্ধারিত সময়ের মাঝে প্রকল্প সম্পন্ন হওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন সবাই। এসব প্রকল্পের কাজ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন করার কথা রয়েছে।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, শনি, মাটিয়ান, মহালিয়া ও বর্ধিত গুরমা হাওরের প্রায় ৮১ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাঁধের উভয় দিকে ঘাস লাগানো ও ফিনিশিং চলছে। বনুয়া হাওরের ৫৩ নম্বর প্রকল্প সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রকল্পটি নিয়ে তিনি সমস্যায় রয়েছেন। এ পর্যন্ত বাঁধের কাজের ৬০ ভাগ মাটি কিনেছেন নিজের টাকায়। মাটির জোগানেও সংকট রয়েছে। তারপরও চেষ্টা করছেন, যেন কৃষকের ভোগান্তি না হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন বলেন, বনুয়া হাওরের তিনটি প্রকল্পের উভয় পাশের জলাবদ্ধতার কারণে নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করা যায়নি। জটিলতা দূরীকরণে এলাকাবাসীর পরামর্শে বাঁধ কেটে হাওরের পানি সরানোর পর কাজ শুরু করা হয়েছে। বিষয়টি পাউবোর জেলা কমিটি অবগত আছে। কাজ দেরিতে শুরু করায় শেষ করতে কিছু সময় বেশি লাগবে।
তাহিরপুরের সব হাওরে গড়ে ৮১ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হাসেম বলেন, বনুয়া হাওরের তিনটি প্রকল্পের কাজ ৬০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। মাটি সংকটের কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এ কাজও ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন পিআইসির লোকজন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’
আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫