পাকিস্তান-ভারত মহারণ ঘিরে দুবাইয়ে উত্তাপ
Published: 23rd, February 2025 GMT
২৯ বছর পর ঘরের মাঠে আইসিসি টুর্নামেন্ট। ঐতিহাসিক এই আসর শুরু হতে না হতেই কি দর্শক হয়ে যাবে পাকিস্তান! প্রতিবেশীর এমন ঘোর বিপদের সময় আবার রানে ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন একজন। তিনি হলেন বিরাট কোহলি, যাঁর ব্যাটে রান মানেই পাকিস্তানের হার অবধারিত। তাই মিরাকল বলে যদি কিছু থাকে, সেটা ঘটানোর আজই মোক্ষম সময় বাবর-রিজওয়ানদের। মরুর বুকে আবারও কি ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ হয়ে উঠবে পাকিস্তান!
অনুশীলনে ঘাম ঝরানোর ব্যাপারে কোহলির জুড়ি মেলা ভার। ফিটনেস-পরিশ্রমের বেলায় তাঁর ধারেকাছে কেউ নেই। সেই কোহলি গতকাল যা করলেন, তা দেখে ভারতীয় টিমের পিছু ধাওয়া করা সাংবাদিকদেরও চোখ ছানাবড়া। গতকাল ভারতের অনুশীলন শুরু হয়েছে দুপুর ১টায়। কোহলি মাঠে আসেন তারও দেড় ঘণ্টা আগে। তারকা এ ব্যাটারের সঙ্গে ছিলেন ব্যাটিং কোচ সীতাংশু কোটাক, থ্রো-ডাউন বিশেষজ্ঞ নুয়ান সেনাবীরত্নে ও ডি রাঘবেন্দ্র। নেটে স্থানীয় বোলারদের বিপক্ষে ব্যাট করেন তিনি। তখন ড্রাইভ, পুল, কাটের মতো শটগুলো বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই খেলেন। নেট থেকে বেরিয়েও ড্রেসিংরুমে যাননি তিনি। প্যাড খুলে সীমানা দড়ির ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে থ্রো-ডাউনে লম্বা সময় ধরে নক করেন। এ সময় তাঁকে বেশ ফুরফুরে মেজাজে দেখা যায়। সতীর্থদের সঙ্গে হাসিঠাট্টায়ও মেতেছিলেন কোহলি। মানসিক এই চাঙ্গাভাবই তাঁকে রানে ফিরতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। রোহিত শর্মা, শুভমান গিলরা দারুণ ফর্মে আছেন। কোহলিও রানে ফিরলে ভারতকে আটকানো কঠিন হয়ে যাবে।
অনুশীলনে পাকিস্তানও বেশ সিরিয়াস ছিল। দুবাই স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইটের আলোয় বেসবল খেলে অনুশীলন শুরু করে তারা। এর পর কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে পুরো স্টেডিয়ামজুড়ে ফিল্ডিং অনুশীলন করে। তার পরও পাকিস্তান যে চাপে আছে, সেটা সংবাদ সম্মেলনে কোচ আকিভ জাবেদকে দেখে বোঝা গেছে। খেলোয়াড়দের চাপ থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করছেন তিনি। চাইছেন, মুক্তভাবে যেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে ম্যাচটা খেলতে পারেন। তার পরও বাদ পড়ার শঙ্কা কি মন থেকে সরাতে পারবেন তারা! নিউজিল্যান্ডের কাছে প্রথম ম্যাচ হারায় আজ ভারতের কাছে পরাজিত হলেই বিদায়। আসরে টিকে থাকার এ লড়াইয়ে পাকিস্তান দলে একটি পরিবর্তন আসছে নিশ্চিত। ফখর জামানের বদলে ডাক পাওয়া ওপেনার ইমাম-উল হকের আজ মাঠে নামা নিশ্চিত। বাবর আজমের সঙ্গে ওপেন করতে পারেন তিনি। স্কোয়াডের আরেক রিজার্ভ ব্যাটার হলেন উসমান খান। ফর্মে না থাকা সৌদ শাকিলের জায়গায় দেখা যেতে পারে উসমানকে। তিনি চারে ব্যাট করতে পারেন। ভারতীয় দলে অবশ্য কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। জ্বরের কারণে ঋষভ পন্ত গতকাল মাঠেই আসতে পারেননি, অনুশীলন তো দূরের বিষয়। তাই আজও লোকেশ রাহুলই গ্লাভস হাতে দাঁড়াবেন।
আসরের উদ্বোধনী দিনের আগের দিন দুবাইয়ে ভালো বৃষ্টি হলেও এর পর থেকে দুবাইয়ের আকাশ পরিষ্কার। আজও এখানে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তবে সন্ধ্যার পর আকাশ কিছুটা মেঘলা হতে পারে। তখন যদি বাতাস থাকে, তাহলে পেসাররা সুবিধা পাবেন। এ ছাড়া এখানে স্লো বোলাররা বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে গত ম্যাচে তো বটেই, কয়েক দিন আগে এখানে আয়োজিত আইএল টি২০তেও মন্থর উইকেটের দেখা মিলেছে। এ ধরনের উইকেটের সদ্ব্যবহার করার জন্য ভারতীয়রা তাদের স্কোয়াডে পাঁচজন স্পিনার রেখেছে। পাকিস্তানের লেগি আবরার আহমেদও কার্যকর হয়ে উঠতে পারেন। মন্থর উইকেটের কারণে পরে ব্যাট করা দল চাপে থাকবে বলে জানিয়েছেন ভারতীয় সহ-অধিনায়ক শুভমান গিল।
আইসিসি ইভেন্টে প্রায় একচ্ছত্র আধিপত্য ভারতের। এখন পর্যন্ত ২০-৩-এ এগিয়ে তারা। তবে এই অসম প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ও একমাত্র চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সমানে সমানে আছে পাকিস্তান। এই একটা মাত্র কারণেই আশায় বুক বাঁধছে পাকিস্তান।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বাণিজ্যবিরোধ: ভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার ভারতের বাণিজ্যনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ভারতীয় পণ্যের ওপর হোয়াইট হাউসের শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তুতি নেওয়ার পর থেকেই এ আক্রমণের মাত্রা বেড়েছে।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর প্রশাসন আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করছে এবং এর পাশাপাশি অতিরিক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ট্রাম্প যখন বিশ্বের বহু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই ভারতকে উদ্দেশ করে তাঁর এমন কঠোর অবস্থান সামনে উঠে আসে।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
‘ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ’, গত বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন মন্তব্য করেন ট্রাম্প। জবাবে ভারত সরকার জানিয়েছে, তারা ট্রাম্পের বক্তব্য ‘লক্ষ্য করেছে’ এবং এর ‘প্রভাব মূল্যায়ন’ করবে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্যবিরোধ: পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে
আজ থেকে ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্রাম্পের ধার্য করা ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে ঘোষিত সম্ভাব্য শুল্ক থেকে মাত্র ১ শতাংশ কম।
এ হার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ শুল্কের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের চেয়ে কিছুটা কম।
হোয়াইট হাউসের অভিযোগ, ভারত মার্কিন পণ্যকে বাজারে ঠেকাতে অতিমাত্রায় শুল্ক আরোপ করছে। সম্প্রতি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।এ শুল্ক ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা আরও জটিল করে তুলতে পারে। একাধিক দফা আলোচনার মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষ একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ১২তম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার ভারত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নেওয়া অনেক কোম্পানির নতুন গন্তব্য হয়েছে দেশটি। মে মাসে অ্যাপলের সিইও টিম কুক জানান, যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য আইফোন এখন ভারতে উৎপাদিত হচ্ছে; যাতে উচ্চ শুল্ক এড়ানো যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয়ের (ওটিআর) তথ্যমতে, গত বছর ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য বাণিজ্যের মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৯ বিলিয়ন (১২ হাজার ৯০০ কোটি) ডলার। ভারতের রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে পোশাক, রাসায়নিক, যন্ত্রপাতি ও কৃষিপণ্য।
ট্রাম্প কেন ভারতকে নিশানা করছেন
সম্প্রতি ট্রাম্প একাধিকবার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভারতের ‘অতি উচ্চ’ শুল্ক আরোপের সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাত পণ্যও রয়েছে।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রাম্প লেখেন, ‘বছরের পর বছর আমরা ভারতের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে খুব কম ব্যবসা করেছি। কারণ, তাদের শুল্ক অত্যন্ত বেশি।’
এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টদেশীয় শিল্পকে রক্ষা করতে ভারত কিছু পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ করেছে।
ওটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে পণ্যবাণিজ্যে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন (৪ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের ঘাটতি দেখেছে। এটি আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি। তুলনামূলকভাবে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে প্রায় ২৯৫ বিলিয়ন (২৯ হাজার ৫০০ কোটি) ডলারের বাণিজ্যঘাটতিতে ছিল।
আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫ট্রাম্প আরও ক্ষুব্ধ যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলাকালে ভারত রুশ তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
‘এ মুহূর্তে যখন সবাই চায় ইউক্রেনে হত্যা বন্ধ হোক, তখন ভারত চীনের সঙ্গে রাশিয়ার জ্বালানির সর্ববৃহৎ ক্রেতা’, বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন ট্রাম্প।
ভারতের প্রতিক্রিয়া
এ সপ্তাহে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ভারত সরকার ট্রাম্পের ওই বক্তব্যে তুলনামূলকভাবে মৃদু, তবে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ভারতের ওপর ধার্য করা শুল্কহার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও জাপানের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশের চেয়ে বেশি। তবে গত মে মাসে চীনের ওপর আরোপিত ৩০ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম।বুধবার দেওয়া এ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাস ধরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র একটি ন্যায্য, ভারসাম্যপূর্ণ ও পারস্পরিকভাবে লাভজনক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘সরকার জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’
আগস্টের শেষ দিকে দুই দেশের মধ্যে আরেক দফা বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’৩০ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কী বলছেন অর্থনীতিবিদেরা১৪ ঘণ্টা আগে