যাত্রী ওঠানোর জন্য দীর্ঘক্ষণ বাস দাঁড় করিয়ে রাখার প্রতিবাদ করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বাসের চালক ও সহকারীর বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষকের নাম আদীব শাহরিয়ার জামান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রভাষক। আজ শুক্রবার বেলা তিনটার পর রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বর এলাকায় বাংলা স্কুলের বিপরীত পাশের সড়কে এ ঘটনা ঘটে।

আদীব শাহরিয়ার জামান ফেসবুকের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরেছেন। পরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথম আলোকে হামলার বিষয়ে বিস্তারিত জানান তিনি। এই শিক্ষক বলেন, মিরপুর সুপার লিংক (৩৬ নম্বর) পরিবহনের বাসের চালক ও সহকারী মিলে লোকজনের সামনেই তাঁকে মারধর করেছেন।

এদিকে এ ঘটনার পর আজ বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মিরপুর সুপার লিংকের অন্তত পাঁচটি বাস ক্যাম্পাসে নিয়ে গেছেন। অভিযুক্ত চালক ও তাঁর সহকারীকে শনাক্ত করার পর বাসগুলো ছাড়া হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, ‘শিক্ষককে হেনস্তার ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা বাসগুলো নিয়ে গেছে বলে শুনেছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান ফেরদৌস সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযুক্ত চালককে শনাক্ত করার জন্য বাসগুলো আটকে রাখা হয়েছে। বাসের মালিকপক্ষকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করতে পারলেই আমরা বাসগুলো ছেড়ে দেব।’

শিক্ষক আদীব শাহরিয়ার জামান প্রথম আলোকে বলেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে দায়িত্ব পালন শেষে দুপুরে মিরপুরে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। পথে নিউমার্কেট থেকে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ৩৬ নম্বর বাসে ওঠেন। বাসটি মিরপুর ১০ নম্বরে ২০ মিনিটের মতো সিগন্যালে আটকে ছিল। তখন বেশির ভাগ যাত্রী নেমে যাওয়ায় অনেক আসন ফাঁকা হয়ে যায়। এর মধ্যে সিগন্যাল ছাড়লেও চালকের সহকারী যাত্রী ডাকতে থাকেন এবং বাসটি থেমে থেমে চলতে থাকে। এতে আবার বাসটি সিগন্যালে পড়ার উপক্রম হয়।

আদীব শাহরিয়ার জামান আরও বলেন, আরেকটি সিগন্যালে আটকানো এড়াতে যাত্রীরা চালককে দ্রুত বাসটি চালাতে বলেন। বাসের অর্ধেকের মতো যাত্রীই ছিলেন ভর্তি পরীক্ষার্থী। তাঁরাও সিগন্যালটি পার হওয়ার জন্য অনুনয় করতে থাকেন। কিন্তু চালক কথা শোনেননি। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন তিনি। এর জেরে চালক ও সহকারীর সঙ্গে তাঁর তর্ক শুরু হয়।

ভুক্তভোগী শিক্ষক বলেন, মিরপুর সুপার লিংক বাসটির সর্বশেষ স্টপেজ মিরপুর ১২ নম্বর। তাঁর নামার কথা ছিল ১১ নম্বরে। কিন্তু চালক ও তাঁর সহকারীর আচরণের প্রতিবাদ করায় চালক হুমকি দেন, মিরপুর ১১ নম্বরে তাঁকে নামতে দেবেন না। পরের স্টপেজ মিরপুর ১২ নম্বরে নিয়ে তাঁকে মারধর করবেন। তখন আট থেকে ১০ জন যাত্রী বাসের ভেতরে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন বাস থেকে নামতে চাইলেও তাঁদের নামতে দেওয়া হয়নি। তখন প্রতিবাদ করে ১১ নম্বরের কাছাকাছি একটি জায়গায় বাসটি থামাতে বাধ্য করেন তিনি।

বাস থামার পর প্রথমে স্ত্রীকে নামিয়ে দেন বলে জানান আদীব শাহরিয়ার জামান। তিনি বলেন, স্ত্রীর পর তিনি বাস থেকে নামেন। তাঁর পেছনে বাস থেকে নামেন চালক ও তাঁর সহকারী। তাঁরা একটি বাঁশ নিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করেন। পেটে লাথি দেন চালক। টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয় পোশাক। এই সময় সাধারণ লোকজন তাঁদের ঘিরে দেখতে থাকেন। বাসে থাকা পরীক্ষার্থীরাও পুরো ঘটনা দেখেন। এরপর চালক ও তাঁর সহকারী দ্রুত বাসে উঠে চলে যান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ র র সহক র র জন য প রথম ঘটন র ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় জামায়াতসহ ৭ দলের বিক্ষোভ আজ, কোথায়, কখন, কোন দল

ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েক দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকায় আজ বৃহস্পতিবার একযোগে বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল।

বিক্ষোভের আগে বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় দলগুলো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করবে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব কর্মসূচি চলবে।

প্রায় অভিন্ন দাবিতে সাতটি দল তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকায়, আগামীকাল শুক্রবার বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে দলগুলোর।

জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এই কর্মসূচি পালন করবে। সাতটি দলের কেউ ৫ দফা, কেউ ৬ দফা, কেউ ৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সবার মূল দাবি প্রায় অভিন্ন। দাবিগুলো হচ্ছে

জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে (কেউ কেউ উচ্চকক্ষে) সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চালু করা

অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা

বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

সাড়ে চারটায় জামায়াত

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটকের সামনে সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াত। সমাবেশে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।

জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।

বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।জোহরের পর ইসলামী আন্দোলন

জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।

জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।আসরের পর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস

আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ কর্মসূচিতে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ ছাড়া খেলাফত মজলিস বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এতে দলের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।

একই সময়ে, একই জায়গায় মিছিল করবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও। বিকেল চারটায় একই জায়গায় বিক্ষোভ করবে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।

আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীর মধ্য এলাকায় একযোগে সাতটি দলের বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘিরে নেতা-কর্মীদের সমাগমে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য নগরবাসী দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে পারেন। যদিও আজ ও আগামীকাল সকালে বিসিএস পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এই সাত দল কর্মসূচি বিকেলে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ