বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানীর মতে, অফিসের যে ৪টি নিয়ম বাতিল করার এখনই সময়
Published: 6th, March 2025 GMT
১. প্রতিদিন মিটিং
অনেক অফিসেই প্রতিদিন গড়ে কর্মঘণ্টার প্রায় অর্ধেক সময়ই কেটে যায় মিটিং করে। সেই মিটিংয়ের খুব সামান্য অংশই বাস্তবে কর্যকর হয়। এসব মিটিং করার ফলে একদিকে যেমন কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়, অন্যদিকে বাকি সময়ে কাজ শেষ করার চাপ বাড়ে। ফলে প্রায়ই কর্মীরা ‘ওভারটাইম’ করেও কাজ শেষ করতে পারেন না। ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত আর একরাশ হতাশা নিয়ে ঘরে ফেরেন। অ্যাডাম জানান, গড়ে সপ্তাহে ১ দিন মিটিং অফিসের কর্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য উপযোগী।
আরও পড়ুনযে ১০ লক্ষণ দেখে বুঝবেন চাকরি ছাড়ার সময় এসে গেছে ৩১ অক্টোবর ২০২৪২.সপ্তাহে ৫/৬ দিন অফিস
আধুনিক সময়ে সমস্যার আধুনিক সমাধান একান্ত কাম্য। আগে শারীরিকভাবে কাজের প্রয়োজন ছিল বেশি। সময়ের সঙ্গে ক্রমেই কায়িক শ্রমের জায়গা নিতে চলেছে সৃজনশীল কাজ। তাই এখন আর আগের মতো সপ্তাহে ৫ বা ৬ দিন অফিস করার প্রয়োজন নেই। ৪ দিনই যথেষ্ট। জাপান, বেলজিয়াম, নিউজিল্যান্ড, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ডের অনেক অফিসে সপ্তাহে ৪ দিন ‘ওয়ার্ক ডে’। এসব দেশে কর্মীদের অনেকে ৩ দিন অফিস আর ৪ দিন ছুটির জন্য আন্দোলন করছেন। এমনকি অফিসে সশরীর হাজির হয়ে কাজ করার প্রয়োজনীয়তাও কমে আসছে। বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে বসে যেকোনো অফিসে কাজ করা সম্ভব, আমরা ইতিমধ্যে সে সময়ে ঢুকে পরেছি।
আরও পড়ুনদেশে বসে বিদেশে চাকরি, কেন জনপ্রিয় হচ্ছে ‘রিমোট জব’১৯ জানুয়ারি ২০২৫৩. বস–প্রথাআপনাকে কি কোনো কাজ করার আগে বসের অনুমতি নিতে হয়? আপনার ‘বস’কে তাঁর বসের অনুমোদন সাপেক্ষে চলতে হয়? এর মানে আপনার অফিসে স্বাধীনতা, নতুন উদ্ভাবন, সৃজনশীলতা, প্রতিনিয়ত পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সুযোগ নেই বললেই চলে। আধুনিক কর্মক্ষেত্রে বস-প্রথার দিন শেষ।
৪. তথাকথিত চাকরির পরীক্ষা ও সাক্ষাৎকারচাকরির পরীক্ষায় যেসব প্রশ্ন আসে, এর সঙ্গে চাকরিতে আপনার যে দায়িত্ব, তার কী সম্পর্ক? মনে করুন, আপনি ব্যাংকে ক্যাশিয়ার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চান। আর চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্ন এসেছে তেগুসিগালপা কোন দেশের রাজধানী? এভাবে প্রার্থী নির্বাচনের দিন শেষ। বরং চাকরিতে ওই ব্যক্তির যে দায়িত্ব, তাঁকে সে সম্পর্কিত কোনো সমস্যা সমাধান করতে দেওয়াই কি যুক্তিযুক্ত নয়? তাই চাকরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দক্ষতা যাচাই করতে ‘ডেমো’ নিন। যে চাকরিতে ধৈর্য্য মুখ্য, সেখানে ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিন।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট
আরও পড়ুনরতন টাটা কেন একটা ‘চাকরি’ খুঁজছিলেন১৩ অক্টোবর ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পর ক ষ কর র প চ কর র
এছাড়াও পড়ুন:
পোশাকশিল্পে এখনই রূপান্তরের সময়
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এই সিদ্ধান্ত সরবরাহ ব্যবস্থায় নতুন ভারসাম্য তৈরি করেছে। কারণ, এখন বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম (২০ শতাংশ) ও ভারত (২৫ শতাংশ)—তিন দেশই প্রায় সমান বা কাছাকাছি শুল্ক দেবে।
এই সিদ্ধান্ত স্বল্পমেয়াদে চাপ তৈরি করলেও দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ তৈরি করতে পারে। সে জন্য বাংলাদেশকে মানসম্পন্ন, টেকসই ও দ্রুত সরবরাহ করতে সক্ষম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। এই সুযোগ সীমিত সময়ের জন্য। এখনই আমাদের পোশাকশিল্পকে উৎপাদন, পণ্য বৈচিত্র্য, দ্রুত সরবরাহের পথে এগোতে হবে। তাহলে এই সুযোগ আমরা নিতে পারব।
এই সুযোগ নিতে হলে বাংলাদেশকে বেশ কিছু বিষয়ে জোর দিতে হবে।
এক. গত এক দশকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত মূলত টি-শার্ট, হুডি ও প্যান্টের মতো মৌলিক পণ্যের রপ্তানিতে এগিয়ে ছিল। কিন্তু এখন মার্কিন ক্রেতারা ছোট ছোট ক্রয়াদেশ, দ্রুত সরবরাহ ও নতুন চলভিত্তিক পণ্যের দিকে ঝুঁকছেন। সে জন্য বড় ক্রয়াদেশের পাশাপাশি কারখানার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ জায়গা ছোট ও দ্রুত উৎপাদন লাইনের জন্য বরাদ্দ করতে হবে। এক সপ্তাহের মতো সময়ে নানা বৈচিত্র্যময় পোশাক তৈরি করতে পারবে—এমন কর্মীবাহিনী গড়ে তুলতে হবে। ক্রয়াদেশের পরিমাণ অনুযায়ী দর–কষাকষি করে দাম ঠিক করতে হবে। অনেকে একটু বেশি দাম দিলেও দ্রুত সরবরাহ চায়।
দুই. চীন ও ভিয়েতনামের মতো পোশাকপণ্যে বৈচিত্র্য বাড়াতে হবে। আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রে শুধু দ্রুত সরবরাহ করছে না, তাদের পোশাকের বৈচিত্র্য অনেক বেশি। একই অবস্থা চীনেরও। অন্যদিকে বাংলাদেশ এখনো সুতার কাপড়ের ওপর নির্ভরশীল। পোশাকের বৈচিত্র্য বাড়াতে হলে উৎপাদন খাতে লেজার কাটিং, সিমলেস বন্ডিংয়ের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতিতে বিনিয়োগ করতে হবে। এখনই বড় বিনিয়োগ সম্ভব না হলে ছোট দল গড়ে তুলতে হবে, যারা বিদ্যমান যন্ত্র দিয়েই সিনথেটিক বা কৃত্রিম পোশাক তৈরি করতে পারবে। শুধু বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের দিকে না ঝুঁকে, মধ্যম সারির ব্র্যান্ডগুলোর কাছে বৈচিত্র্যময় পোশাক নিয়ে যেতে হবে।
তিন. সিনথেটিক কাপড়ের দেশীয় উৎসে জোর দেওয়া দরকার। আমাদের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম অনেক সময় সহজে ক্রয়াদেশ পায়। তারা নিজেরা যেমন কৃত্রিম কাপড়ের পোশাকের উৎস গড়ে তুলেছে, তেমনি ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে চীন থেকে কম সময়ে ও খরচে এই কাপড় আমদানি করতে পারে।
বাংলাদেশ এখনো কৃত্রিম কাপড়ের জন্য চীন, কোরিয়া ও তাইওয়ানের ওপর নির্ভরশীল। এসব দেশ থেকে কাপড় আমদানিতে ১৫ থেকে ২৫ দিন সময় লাগে। এতে সময় ও খরচ বাড়ে। সে জন্য দেশীয় বস্ত্রকলগুলো যেন কৃত্রিম তন্তু দিয়ে কাপড় তৈরি ও রং করার জন্য বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়, তা নিশ্চিত করা দরকার। যাদের সক্ষমতা কম, তারা তুলার সুতা দিয়ে তৈরি পণ্যে সামান্য কৃত্রিম উপাদান যুক্ত করে নতুন নকশার পোশাক তৈরি করতে পারে।
চার. শুধু কমপ্লায়েন্স নয়, স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করতে হবে। এখন শুধু কর্মসহায়ক পরিবেশ, অর্থাৎ কমপ্লায়েন্সের শর্ত পূরণ করলেই হচ্ছে না। বৈশ্বিক, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা এখন পরিবেশবান্ধব উৎপাদন, বিদ্যুৎ-পানির সাশ্রয়, রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা ও শ্রমিকদের অবস্থা, অর্থাৎ টেকসই উৎপাদনব্যবস্থা দেখতে চায়। ক্রেতাদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষও এসব বিষয়ে সোচ্চার।
এ ক্ষেত্রে করণীয় হলো, প্রতি কেজি কাপড় তৈরিতে কত লিটার পানি লাগে, প্রতি পিস পোশাকে কত ইউনিট বিদ্যুৎ লাগে, কতজন শ্রমিক দীর্ঘমেয়াদে কাজ ধরে রাখে—এসব তথ্য নিয়মিত সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা দরকার। এসব তথ্য সহজ ও আকর্ষণীয় প্রতিবেদনের মতো করে সাজিয়ে রাখা দরকার, যেন সহজেই বিদেশি ক্রেতাদের দেখানো যায়। অনেক ক্রেতা হয়তো নিজে থেকে এসব জানতে চান না, কিন্তু দেখলে তাঁরা এর প্রশংসা করবেন এবং আস্থাও পাবেন। পোশাকশিল্পে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে হলে এসব বিষয় এখন অপরিহার্য।
পাঁচ. অর্থায়নের সুযোগ কাজে লাগানো দরকার। অনেক কারখানা বড় পরিসরে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। অর্থায়ন, কাঁচামালের দাম ও ক্রয়াদেশের অনিশ্চয়তা তাদের আটকে রাখছে। অথচ এখনই সঠিক জায়গায় বিনিয়োগের সময়। বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের মতো অর্থায়নের স্কিমগুলো সম্পর্কে জানা দরকার। নতুন ক্রেতাদের কাছ থেকে কিছু অগ্রিম নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। আবার অন্য কারখানার সঙ্গে ক্রয়াদেশ ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়। এতে একবারে বড় ক্রয়াদেশ নেওয়া সম্ভব হয়। সঠিক বিনিয়োগ করলে নতুন বাজার ধরা সম্ভব।
সময় এখন এগিয়ে যাওয়ারডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা ২০ শতাংশ শুল্ক প্রথমে বাড়তি চাপ মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি সম্ভাবনার নতুন দরজাও খুলে দিয়েছে। দীর্ঘ সময় বাংলাদেশ যেভাবে সস্তা শ্রম আর শুল্ক সুবিধার ওপর নির্ভর করে এসেছিল, সেই যুগ শেষ।
এখন আমাদের লড়তে হবে গুণগতমান, বৈচিত্র্য, উদ্ভাবন, স্বচ্ছতা ও গতিশীলতার ওপর ভিত্তি করে। বৈশ্বিক ক্রেতারা এখনো বাংলাদেশকে পছন্দ করে। তাদের পছন্দের জায়গা ধরে রাখতে হলে আমাদেরও পরিবর্তিত হতে হবে। পিছিয়ে পড়ার সময় নেই। এখন এগিয়ে যাওয়ার সময়।
সাইয়েদ তানজিম মোজাহের: পরিচালক, ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যাপারেলস
চট্টগ্রামভিত্তিক দ্বিতীয় প্রজন্মের তৈরি পোশাক উদ্যোক্তা