নেত্রকোনায় পাহারাদারকে হত্যা করে খামার থেকে সাত গরু লুট
Published: 6th, March 2025 GMT
নেত্রকোনার দুর্গাপুরে গরুর খামারের এক পাহারাদারকে হত্যা করে সাতটি গরু নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার রাত ১১টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার মধ্যে কাকৈরগড়া ইউনিয়নের গোদারিয়া চৌরাস্তা এলাকার মাহবুবুল হকের গরুর খামারে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত পাহারাদারের নাম মো. জয়নাল মিয়া (৬৫)। তাঁর বাড়ি নেত্রকোনার দুর্গাপুরের পুকুরিয়াকান্দা গ্রামে। পুলিশ তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা ও থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জয়নাল মিয়া দুই মাস ধরে মাহবুবুল হকের গরুর খামারে পাহারাদার হিসেবে কাজ করতেন। সেখানে আরও দুজন কর্মচারী কাজ করেন। গতকাল বুধবার রাত ১১টার দিকে হেলাল নামের একজন পাহারাদার দিনের দায়িত্ব শেষ করে জয়নালকে রাতের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে বাড়ি চলে যান। আজ বৃহস্পতিবার সকালে হেলাল কাজে ফিরে জয়নালের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিতে চান। কিন্তু তাঁকে নির্ধারিত স্থানে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
একপর্যায়ে গরুর খড়ের ঘরের খুঁটির সঙ্গে জয়নালের হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখতে পান। পরে হেলাল খামারের মালিকসহ আশপাশের মানুষকে বিষয়টি জানান। তাঁরা এসে জয়নালের লাশ দেখতে পান। খবর পেয়ে নেত্রকোনা জেলা পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ, সহকারী পুলিশ সুপার (দুর্গাপুর সার্কেল) আল-ইমরানুল আলম, দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়াসহ পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আজ বেলা পৌনে দুইটার দিকে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছিল।
ওই খামারের মালিক মাহবুবুল হক বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা আমার খামারে পাহারাদার জয়নালকে হত্যা করে ১১টির গরুর মধ্যে ৭টি গরু নিয়ে গেছে। যারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’
এ ব্যাপারে সহকারী পুলিশ সুপার (দুর্গাপুর সার্কেল) আল-ইমরানুল আলম বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, গতকাল বুধবার রাত ১১টার পর থেকে আজ সকাল ছয়টার মধ্যে যেকোনো এক সময়ে এ ঘটনা ঘটেছে। এ হত্যাকাণ্ড ও গরু লুটের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জয়ন ল
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।