দেনমোহরে মূল্যস্ফীতি, দুই লাখে বাড়তি ৬২ হাজার টাকা
Published: 6th, March 2025 GMT
মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মিলিয়ে দেনমোহর পরিশোধের রায় দিয়েছেন কুমিল্লার পারিবারিক আদালত। ২ লাখ টাকা দেনমোহরের প্রকৃত মূল্য ২ লাখ ৬২ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছেন। আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ করতে বলেছেন।
বৃহস্পতিবার কুমিল্লার পারিবারিক আদালতের জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ শেখ সাদী রহমান এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ের বিষয়টি সমকালকে নিশ্চিত করেছেন নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১-এর সরকারি কৌঁসুলি বদিউল আলম সুজন। তিনি বলেন, ‘আদালতের এমন রায় ব্যতিক্রমী।’
জানা গেছে, ২০২২ সালে চান্দিনা উপজেলার দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে সুমাইয়া আক্তারের সঙ্গে বিল্লাল হোসেনের ছেলে ইব্রাহিম খলিলের বিয়ে হয়। বিয়েতে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেনমোহরের মধ্যে ৫০ হাজার টাকা উসুল দেখান হয়। ২ লাখ টাকা বাকি রাখা হয়। ২০২৩ সালের জুনে তালাক দেন ইব্রাহিম। দেনমোহর ও ভরণপোষণ দাবি করে কুমিল্লা পারিবারিক আদালতে মামলা করেন সুমাইয়া। শুনানি শেষে গতকাল আদালত বাদীর পক্ষে এই রায় ঘোষণা করেন।
বাদী পক্ষের আইনজীবী আজাদ হোসেন বলেন, ওই দম্পতির বিয়ে হয়েছিল ২০২২ সালে, এখন ২০২৫ সাল। প্রতিবছর মূল্যস্ফীতির কারণে টাকার মানের তারতম্য ঘটে, যা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে স্পষ্ট। এ অবস্থায় দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ১৫১ ধারা প্রয়োগ করে মূল্যস্ফীতি অনুসারে বাদীর দেনমোহরের প্রকৃত মূল্য ২ লাখ ৬২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই টাকা বাদীর প্রাপ্য।
দেওয়ানি কার্যবিধি আইনের ১৫১ ধারায় বলা হয়েছে, আদালতের সহজাত ক্ষমতা। দেওয়ানি আদালত দুটি ক্ষেত্রে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন। ন্যায়বিচারের স্বার্থে এবং আদালতের কার্যধারার অপব্যবহার রোধ করার জন্য।
ভুক্তভোগী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘আদালত থেকে এমন ন্যায়বিচার পাব ভাবিনি। অনেকে বলেছিলেন, মামলা করে কী লাভ হবে? ন্যায্য পাওনা ফিরে পাবে না।’
নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১-এর সরকারি কৌঁসুলি বদিউল আলম সুজন সমকালকে বলেন, ‘অবহেলিত নারী সমাজের জন্য এটাকে যুগান্তকারী রায় বলে মনে করছি। কারণ, আমাদের মুসলিম রীতিতে বিয়ে বিচ্ছেদের পর দেনমোহর নিয়ে নারীদের অনেক বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হতে হয়। আদালতেও ঘুরতে হয়। কিন্তু বিচারক বাস্তবতা উপলব্ধি করে যে রায় দিলেন, তা যুগান্তকারী।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে
বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।
বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা/নাজমুল/রফিক