Samakal:
2025-11-03@13:45:47 GMT

স্বপ্ন ওড়ানো তরুণ জুলহাস

Published: 8th, March 2025 GMT

স্বপ্ন ওড়ানো তরুণ জুলহাস

জুলহাস মোল্লা। গত ৪ মার্চ  মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার যমুনার চরে হাজারো মানুষের সামনে নিজের হাতে তৈরি উড়োজাহাজ আকাশে উড়িয়ে তাক লাগিয়ে দেন এই তরুণ। পেশায় ইলেক্ট্রিক মেস্ত্রি জুলহাস কেমন করে তার এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করলেন সেই গল্প শুনেছেন বিপ্লব চক্রবর্তী

নিজের বানানো উড়োজাহাজ নিয়ে আকাশে উড়লেন মানিকগঞ্জের স্বপ্নবাজ তরুণ জুলহাস মোল্লা। স্থানীয় জাফরগঞ্জ এলাকায় যমুনা নদীর চরে নিজের তৈরি উড়োজাহাজে উড়ে বেড়াচ্ছেন এই তরুণ। তা দেখতে নিচে ভিড় জমিয়েছেন জেলা প্রশাসকসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ স্থানীয় হাজারো মানুষ। জাফরগঞ্জের এক গৃহবধূ রুখসানা বেগম। তাঁর কাছে অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সামনে থেকে কখনও উড়োজাহাজ দেখিনি। এলাকার ছেলে উড়োজাহাজ তৈরি করেছে তাই দেখতে এসেছি। এসে দেখলাম জুলহাসের উড়োজাহাজ আকাশে উড়ছে।’ জুলহাসের বাবা জলিল মোল্লা বলেন, ‘ছেলেটা ছোটবেলা থেকেই ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের নানান জিনিস কুড়িয়ে জমিয়ে রাখত। সুযোগ পেলে এসব নিয়ে খুটুর-খাটুর করত। বানাতো নানান জিনিস। পড়াশোনা বাদ দিয়ে এসব করার কারণ জানতে চাইলে বলত, দেখবে, কোনো একদিন এমন একটা জিনিস বানাব, যা দেখে সবাই চমকে উঠবে। আজ ছেলে সবার সঙ্গে আমাকেও চমকে দিয়েছে। আমার ছেলের বানানো উড়োজাহাজ আজ সত্যিই আকাশে উড়েছে। আমি যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না!’ 
স্বপ্নের পেছনে আছে কষ্টের ইতিহাস
নিজের স্বপ্ন ওড়ানোর কথা জানতে চাইলে জুলহাস মোল্লা বলেন, ‘আমি কখনও উড়োজাহাজ বা বিমানে উঠিনি। এই উড়োজাহাজ তৈরি করে আকাশে উড়তে পেরে নিজের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে বলতে পারেন। আসলে আমি আমার স্বপ্নটাকেই যেন আকাশে উড়িয়েছি। এই স্বপ্নের পেছনে আছে অনেক কষ্টের ইতিহাস। কেবল তাই নয়; শুরুর দিকে পরিবার থেকে শুরু করে বাড়ির আশপাশের মানুষ আমার কাজ দেখে বলতেন, সে তো পাগল হয়ে গেছে! মানে আমাকে পাগল বলতেন অনেকেই। আজ সেই মানুষগুলোই আমাকে উৎসাহ দিচ্ছেন। পিঠ চাপড়ে বাহবা দিচ্ছেন। এরচেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে? আমি অনেক কষ্ট করেছি। খেয়ে না খেয়ে এই কাজ করেছি। তিন বছর গবেষণা এবং এক বছর সময় লেগেছে উড়োজাহাজটি তৈরি করতে। সব মিলিয়ে প্রায় আট লাখ টাকা খরচ হয়েছে এটি তৈরিতে। এই উড়োজাহাজটি তৈরির আগে আরেকটি উড়োজাহাজ তৈরি করেছি, সেটি ওড়ানো সম্ভব হয়নি। এছাড়া গবেষণা কাজের জন্য ১৫০টি ৫ ফুট সাইজের রিমোট কন্ট্রোল উড়োজাহাজও তৈরি করেছি। এতেও খরচ হয়েছে অনেক টাকা। তবে আমি খেয়ে না খেয়ে এসব টাকা জোগাড় করেছি। ধারদেনাও আছে। তাই বলে দমে যাইনি। এতো কিছুর পরও আমি বলতে পারি, আমার আগে কেউ বাংলাদেশে নিজ উদ্যোগে বিমান তৈরি করে আকাশে ওড়াতে পারেনি। অনেকেই চেষ্টা করেছিলেন, সফল হননি। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা না থাকলেও শুধু ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম দিয়েই আমি সফলতার মুখ দেখেছি।’ 
জন্ম ও বেড়ে ওঠা
জুলহাস মোল্লার বাড়ি মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার বাঘুটিয়া গ্রামে। স্থানীয় জিয়নপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করেন এই তরুণ। এরপর কলেজে ভর্তি হলেও আর্থিক টানাপোড়েনে একাডেমিক পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। জুলহাসের ছোটবেলা কেটেছে দৌলতপুর উপজেলার যমুনার চরে বাঘুটিয়া গ্রামে। ওই গ্রামের আলো হাওয়ায় বেড়ে ওঠা এই তরুণ ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি প্লাস্টিকের বোতল, কাগজ, সংসারের ফেলে দেওয়া নানান উপকরণ দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করতেন। জুলহাসের বাবা জলিল মোল্লা জড়িত কৃষিকাজের সঙ্গে। ৬ ছেলে আর এক মেয়ের সংসার জলিল মোল্লার। বড় ছেলে মেহের আলী সৌদিপ্রবাসী। মেজ ছেলে জেহের আলী জড়িত ক্ষুদ্র ব্যবসার সঙ্গে। সেজ ছেলে মনোয়ার হোসেন ড্রাইভার। চতুর্থ ছেলে ছানোয়ার হোসেন ঢাকায় বুকবাইন্ডিং পেশায় জড়িত। ছোট ছেলে নয়ন মিয়া জুলহাসের সঙ্গে ইলেকট্রিক কাজ করেন। এক মাত্র মেয়ে জোছনাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন অনেক আগেই। 
যেভাবে এলো উড়োজাহাজের ভাবনা
উড়োজাহাজের ভাবনা কেমন করে এলো মাথায়, এই প্রশ্নের উত্তরে জুলহাস বলেন, ‘চার বছর আগে হঠাৎ মাথায় আসে ছোট ছোট রিমোট কন্ট্রোল বিমান তৈরি করার। এর কিছুদিন পর আল্টালাইট উড়োজাহাজ তৈরির কথা মাথায় আসে। সেটি তৈরি করে তেমন সাফল্য পাইনি। পরে তিন বছর গবেষণা করে এবং এক বছরের প্রচেষ্টায় এই উড়োজাহাজ তৈরি করি। এর সঙ্গে আমার ছোটভাই নয়ন মিয়াও জড়িত। মূলত টাকার জোগান না থাকায় পাম্প ইঞ্জিন, অ্যালুমিনিয়াম, এসএস দিয়ে 
উড়োজাহাজটি তৈরি করেছি। উড়োজাহাজটির ওজন প্রায় একশ কেজি। গতি পরিমাপের জন্য যুক্ত করেছি ডিজিটাল মিটার, অ্যালুমিনিয়াম ও উন্নত কাপড় দিয়ে পাখা তৈরি করেছি। এর সেভেন হর্স ইঞ্জিন চলে অকটেন অথবা পেট্রোল দিয়ে। ঘণ্টায় গতি সর্বোচ্চ ৭০ কিলোমিটার। চাইলে এর সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব। পরিবর্তন আনা যাবে গঠনেও।’
আগামীর স্বপ্ন
উড়োজাহাজই এখন জুলহাসের ধ্যানজ্ঞান! এই 
উড়োজাহাজকে ঘিরে জুলহাসের কাছে তাঁর স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে আমার উড়োজাহাজ কেন্দ্রিক একাডেমিক পড়াশোনা তেমন নেই। যদিও আমি এর পেছনে প্রচুর সময় ব্যয় করেছি এবং সাফল্যও পেয়েছি। তবে আমার আরও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। আমার তৈরি উড়োজাহাজ একজন চালক বা পাইলট ওড়াতে পারে। যদি ৫ লাখ টাকার ইঞ্জিন লাগানো যায় তবে তা দিয়ে যাত্রী ওড়ানো সম্ভব। তবে দেশের আইন অনুযায়ী এ ধরনের উড়োজাহাজ তৈরি করা গেলেও ওড়ানোর বৈধতা নেই। সরকারি নীতিমালা মেনেই খোলা জায়গায় চর এলাকায় মাত্র ৫০ ফুট উচ্চতায় উড়োজাহাজটি উড্ডয়ন করেছি। অনুমোদন পেলে এই উড়োজাহাজটি ১ হাজার ফুট উচ্চতায় উড্ডয়ন করানো সম্ভব। 
আগামীতে আশা করি এসব বাধা কেটে যাবে 
এবং এই উড়োজাহাজকে ঘিরে স্বপ্ন দেখবে 
নতুন বাংলাদেশ!’ 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কারা বেশি কাঁদেন? 
  • বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত