মানিকগঞ্জে রমজানে তৃষ্ণা মেটায় ‘সাহিদুলের মাঠা’
Published: 9th, March 2025 GMT
পবিত্র রমজানে ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ শরবত বা পানীয়। আর সেটা যদি মাঠা হয়, তাহলে তো কথাই নেই! সারা দিন রোজা রেখে সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন মাঠা রোজাদারদের ক্লান্তি দূর করে নিমেষেই। তাই রমজানে মাঠার কদর বেড়ে যায়।
রমজান মাস এলেই কদর বেড়ে যায় মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে পরিচিত ‘সাহিদুলের মাঠা’র। রোজার প্রথম দিন থেকেই শহরের প্রসিদ্ধ দই-মিষ্টির দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে সাহিদুলের মাঠা। এ ছাড়া তাঁর বাড়ি থেকেও অনেকে মাঠা কিনে নিয়ে যান।
সদর উপজেলার নতুন বসতি গ্রামের ষাটোর্ধ্ব খন্দকার সাহিদুল হক নিজের বাড়িতেই মাঠা তৈরি করে আসছেন। ২০১৬ সাল থেকে শুধু রমজান মাসেই তিনি মাঠা তৈরি ও বিক্রি করেন। বছরের অন্য সময় তিনি বোরহানি তৈরি করে বিভিন্ন খাবার হোটেলে সরবরাহ করেন।
শনিবার সকালে খন্দকার সাহিদুল হকের সঙ্গে তাঁর বাড়িতে বসে কথা হয়। তিনি বলেন, ভোর থেকেই গরুর দুধ জ্বাল দিয়ে মাঠা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথমে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা দুধ জ্বাল দিতে হয়। ঠান্ডা হওয়ার পর জ্বাল দেওয়া দুধ আরেকটি পরিষ্কার পাত্রে রাখা হয়। তিন থেকে চার ঘণ্টা এভাবে রাখার পর জমাট বাঁধা দই হয়। পরে বড় পাত্রে দই নিয়ে পরিমাণমতো চিনি, লবণ ও লেবুর রস মিশিয়ে সজোরে ঘোটা দিতে হয়। বেলা ১১টার মধ্যেই তৈরি হয়ে যায় সুস্বাদু মাঠা। প্রতিদিন এক থেকে দেড় মণ দুধ জ্বাল দেন। এ থেকে এক থেকে দেড় মণ মাঠা তৈরি করেন।
মাঠা তৈরির পর তা বোতলে ভরা হয়। এরপর এসব মাঠা ব্যাগে ভরে রিকশায় ও সাইকেলে করে শহরের দই-মিষ্টির দোকানগুলোতে সরবরাহ করেন সাহিদুল। আবার কেউ কেউ তাঁর বাড়ি থেকেই মাঠা কিনে নিয়ে যান।
সদর উপজেলার দীঘি গ্রামের আইয়ুব পাশা বলেন, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন পরিবেশে গরুর খাঁটি দুধ দিয়ে মাঠা তৈরি করেন সাহিদুল। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর হওয়ায় তাঁর বাড়ি থেকে প্রতিদিনই আশপাশের গ্রামের রোজাদাররা মাঠা কিনে নিয়ে যান। তিনি নিজেও মাঝেমধ্যে কিনে থাকেন।
মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক চিকিৎসক বদরুল আলম চৌধুরী বলেন, পানীয়ের মধ্যে মাঠার গুণাগুণ অনেক। দুধ দিয়ে তৈরি হয় বলেই মাঠাতে দুধের পুষ্টিগুণ থাকে। এ ছাড়া ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের ঘাটতি মিটতে পারে মাঠা থেকেই। নিয়মিত মাঠা পান করলে শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমে এবং হজমে সহায়তা করে।
জেলা শহরে মদিনা গ্র্যান্ড সুইটস অ্যান্ড বেকারির জীবন হোসেন বলেন, সারা বছর মাঠার চাহিদা থাকলেও রোজায় চাহিদা আরও বাড়ে। সাহিদুলের মাঠা ও বোরহানির কদর ক্রেতাদের কাছে অনেক বেশি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
৭৭ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন ডিলার, উপকারভোগীরা জানেন ‘বরাদ্দ হয়নি’
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় গত জুলাই মাসে ট্রেডিং করপোরেশন বাংলাদেশের (টিসিবি) উপকারভোগীদের জন্য ৭৭ দশমিক ৮ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির (ওএমএস) একজন ডিলার (পরিবেশক) তুলেও নেন। তবে ওই মাসে টিসিবির অন্য পণ্য পেলেও চাল পাননি বলে অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহম্মদপুরের ৮ ইউনিয়নে টিসিবির উপকারভোগী কার্ডধারী আছেন ১৫ হাজার ৫৬৭ জন। এসব উপকারভোগী নিজেদের কার্ড দেখিয়ে প্রতি মাসে একবার ইউনিয়নের টিসিবির নিয়োগ করা ডিলারের কাছ থেকে বাজারের চেয়ে কম মূল্যে তেল, চিনি, ডাল ও চাল কিনতে পারেন। গত জুলাইয়ে ডিলারদের কাছ থেকে তেল, চিনি ও ডালের একটি প্যাকেজ কিনতে পেরেছেন তাঁরা। ওই মাসে চালের বরাদ্দ আসেনি বলে জানানো হয় কার্ডধারীদের।
মহম্মদপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিতে দেখা গেছে, গত ৩০ জুলাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মজনুর রহমান স্বাক্ষরিত দুইটি বিলি আদেশে (ডিও) উপজেলার হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে একজন ওএমএস ডিলারের অনুকূলে ৭৭ দশমিক ৮৩৫ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই দিনই মহম্মদপুর ও বিনোদপুর খাদ্যগুদাম থেকে এ চাল তুলেও নেওয়া হয়।
সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।শরিফা, টিসিবির কার্ডধারী, রাজাপুর ইউনিয়নটিসিবি ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন টিসিবি উপকারভোগীদের চাল ছাড়া অন্য পণ্য সরাসরি তাঁদের নিয়োগ করা ডিলারদের কাছে সরবরাহ করে। চালের বরাদ্দ দেওয়া হয় খাদ্য বিভাগ থেকে। এ অনুযায়ী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে প্রথমে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিয়োগ করা ওএমএস বা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারদের অনুকূলে ২৬ টাকা কেজি দরে চাল বরাদ্দ দেয়। সেই চাল ওই ডিলারদের কাছ থেকে ২৮ টাকা কেজি দরে নেন টিসিবির ডিলাররা। এরপর তাঁরা ৩০ টাকা কেজি দরে ওই চাল উপকারভোগীদের কাছে বিক্রি করেন।
উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পারুল নামে টিসিবির এক উপকারভোগী ১ সেপ্টেম্বর জানান, আগস্ট মাসে চাল, ডাল, তেল ও চিনির প্যাকেজ পেলেও জুলাই মাসে তাঁদের চাল ছাড়া অন্য তিন ধরনের পণ্যের প্যাকেজ দেওয়া হয়েছিল। জুলাই মাসে তাঁদের জানানো হয় চাল বরাদ্দ হয়নি।
বিষয়টি জানতে উপজেলার ৮ ইউনিয়নে টিসিবির নিয়োগ করা ৮ জন ডিলারের সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁদের মধ্যে মহম্মদপুর সদর, নহাটা, পলাশবাড়ীয়া, বালিদিয়া, রাজাপুর ও বাবুখালী ইউনিয়নের ডিলার জানিয়েছেন, জুলাই মাসে তাঁদেরকে চাল দেওয়া হয়নি। নহাটা ও রাজাপুর ইউনিয়নের ডিলার মিলন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিলন ঘোষ ৪ সেপ্টেম্বর বলেন, ‘জুলাই মাসে আমাদের বলা হইছিল চাল বরাদ্দ নেই। এ কারণে চাল ছাড়া অন্য পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। তবে অ্যাপে দেখাইছিল চাল। কিন্তু আমরা পাইনি।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পানঅবশ্য বিনোদপুর ও দীঘা ইউনিয়নের দুই ডিলার দাবি করেছেন তাঁরা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে চালও কার্ডধারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। তবে দুই ইউনিয়নের অন্তত ১০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাঁরা কেউই চাল পাননি। এর মধ্যে বিনোদপুর বাজারের একজন ফল ব্যাবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জুলাই মাসে ডিলার জানাইছিল চাল ফুরায় গেছে।’
হোসনিয়া কান্তা উপজেলার বিনোদপুর এলাকার ওএমএস ডিলার। গত ২৫ জুলাই লটারির মাধ্যমে তিনিসহ তিনজন উপজেলায় ওএমএস ডিলার হিসেবে নিয়োগ পান বলে খাদ্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে হোসেনিয়া কান্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে সরবরাহ করা তাঁর মুঠোফোনে সোমবার যোগাযোগ করা হলে একজন ধরে জানান, ওই নম্বর হোসেনিয়া কান্তা ঋতু নামে কেউ ব্যবহার করেন না।
জানতে চাইলে টিসিবির ঝিনাইদহ ক্যাম্প অফিসের উপপরিচালক আকরাম হোসেন সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘টিসিবির চাল খাদ্য বিভাগ থেকে সরবরাহ করা হয়। আর বিতরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য প্রতিটি উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি রয়েছে। যেখানে প্রতি ইউনিয়নে একজন ট্যাগ অফিসার আছেন, যিনি এগুলো তদারকি করেন।’
জেলার কয়েকজন চাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ টাকা কেজি দরে কেনা এসব চাল বাজারে প্রায় ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। উপকারভোগীদের কাছে তা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করার কথা। এ হিসাবে উপকারভোগীদের ফাঁকি দিয়ে এ চাল বাজারে বিক্রি করতে পারলে কেজিতে ২২ থেকে ২৪ টাকা লাভ হয়।
চাল না পাওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মহম্মদপুরের ইউএনও শাহীনুর আক্তার। সোমবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাল দেওয়া হয়নি এখন পর্যন্ত এমন অভিযোগ কেউ দেয়নি। খাদ্য অফিস থেকে আমি যত দূর জানতে পেরেছি তাতে সবকিছু দেওয়া হয়ে গেছে। বরাদ্দ থাকলে তা আটকে রাখার সুযোগ নেই। তারপরও কোনো অভিযোগ থাকলে খতিয়ে দেখব।’
হঠাৎ এক মাসে চাল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েন উপকারভোগীরা। রাজাপুর ইউনিয়নের শরিফা নামের টিসিবি কার্ডধারী এক নারী বলেন, ‘সেখানে ৩০ টাকা কেজিতে চাল পাওয়া যায়। বাজার থেকে ওই চাল কিনতে কেজিতে প্রায় ৫০ টাকা লাগে। জুলাই মাসে চাল না পাওয়ায় কিছুটা কষ্টই হইছে।’