অফিস থেকেই নিয়ন্ত্রণ, তবু ওয়াসার পাম্পে পাম্পে অপারেটর
Published: 10th, March 2025 GMT
রাজশাহী পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) পাম্পগুলো এখন অফিস থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পাম্পে এখন জনবলের তেমন প্রয়োজনই নেই। তারপরও পাম্পগুলোতে দুই থেকে তিনজন করে পাম্প অপারেটর রাখা হয়েছে। তাদের বেতন-ভাতা খাতে বিপুল টাকা ব্যয় হলেও লোকসান কমাতে দফায় দফায় বাড়ানো হচ্ছে পানির দাম।
রাজশাহী ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, শহরে তাদের পাম্প রয়েছে ১২৩টি। দুবছর আগেই ৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের মাধ্যমে পাম্পগুলোতে রাশিয়া ও ভারত থেকে আনা সুইচ ডিভাইস লাগানো হয়। এখন পাম্পগুলো অফিস থেকেই চালু ও বন্ধ করা হয়। তারপরও পাম্পে পাম্পে রাখা হয়েছে দুই থেকে তিনজন অপারেটর। এদের বেশিরভাগই দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া। তাদের পেছনে প্রতিবছর বিপুল টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে ওয়াসাকে।
কেউ থাকে না পাম্পে
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওয়াসার এক অফিস আদেশে চলতি রমজান উপলক্ষে পাম্পের অপারেটরদের সময়সূচি দেওয়া হয়। এতে দেখা যায়, প্রথম শিফটে রাত ১১টায় অপারেটর পাম্পে যাবেন, রাত আড়াইটায় পাম্প চালু হবে, বন্ধ হবে ৫টা ১৫ মিনিটে এবং দায়িত্ব শেষ হবে সকাল ৭টায়। দ্বিতীয় শিফটে পাম্পে উপস্থিতি ভোর ৬টায়, পাম্প চালু সকাল ৭টায়, বন্ধ হবে দুপুর দেড়টায় এবং ডিউটি শেষ হবে দুপুর ২টায়। তৃতীয় শিফটে ডিউটি শুরু দুপুর ১২টায়, পাম্প চালু দেড়টায়, বন্ধ হবে সন্ধ্যা ৭টায়, ডিউটি শেষ হবে রাত ৮টায়। অর্থাৎ, রমজান মাসে সব পাম্পে তিনজন করে পাম্প অপারেটর রাখা হয়েছে।
রাজশাহী নগরের দড়িখড়বোনা এলাকায় রেলওয়ের গেটকিপারের ঘরেই ওয়াসার পাম্প চালু ও বন্ধ করা ডিভাইস বসানো আছে। রোববার সকাল ১০টায় সেখানে গিয়ে রেলওয়ের গেটকিপারকে পাওয়া যায়। তবে সেখানে ওয়াসার কোনো পাম্প অপারেটরকে পাওয়া যায়নি। রেলওয়ের ওই গেটকিপার বললেন, পাম্পের কেউই থাকে না। তারা মাঝে মাঝে আসেন।
নগরের বিসিক পাম্পে গিয়ে দেখা যায়, ঘরটি তালাবদ্ধ। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, শ্রমিক নেতা বাকী বিল্লাহ সাগর ও রুবেল এই পাম্পের অপারেটর। স্থানীয়রা জানান, তারা পাম্পেই আসেন না। সব সময় ঘরটি তালাবদ্ধই থাকে। ওয়াসার প্রধান কার্যালয়ের পাশেই উপশহর হাউজিং এস্টেট পাম্পে গিয়েও তালাবদ্ধ পাওয়া গেল ঘর। ফোন করা হলে পরে পাম্প অপারেটর মো.
অটোমেশনের ফলে অফিস থেকেই চালু ও বন্ধ করা হয় পাম্প। তাহলে অপারেটরের কী দরকার, এ প্রশ্নে মো. সুমন তাদের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরলেন। জানালেন, বিদ্যুতের ভোল্ট সাড়ে তিনের কম ও সাড়ে চারের বেশি হলে মোটর পুড়ে যায়। ডিভাইস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই তাদের সার্বক্ষণিক ভোল্টের দিকে নজর রাখতে হয়। ভোল্ট কম কিংবা বেশি দেখলে পাম্প বন্ধ করে দিতে হয়। এ জন্য তাদের পাম্পে থাকা খুব জরুরি বলে তিনি জানালেন।
ব্যয় মেটাতে বাড়ছে পানির দাম
ওয়াসার বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৩ কোটি ৫২ লাখ টাকার পরিচালন ব্যয় করে ১৭ কোটি ৭২ লাখ টাকার পানি বিক্রি করে ওয়াসা। অর্থাৎ লোকসান হয় প্রায় ৬ কোটি টাকা। প্রতিবছরই এমন লোকসান হয়ে থাকে। এই লোকসান কমাতে দফায় দফায় বাড়ানো হয় পানির দাম।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওয়াসা পানির দাম তিনগুণ বাড়িয়ে দেয়। এতে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি ইউনিট বা এক হাজার লিটার পানির দাম ২ টাকা ২৭ পয়সা থেকে ৬ টাকা ৮১ পয়সা এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি ইউনিট ৪ টাকা ৫৪ পয়সা থেকে ১৩ টাকা ৬৬ পয়সায় গিয়ে দাঁড়ায়।
গত বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ওয়াসার ১৬তম বোর্ড সভায় আবারও পানির দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। সম্প্রতি এ প্রস্তাব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে অনুমোদনের জন্য। অনুমোদন পেলে আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি ইউনিট পানির দাম বেড়ে ৮ টাকা ৮৫ পয়সা এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি ইউনিট ১৭ টাকা ৭০ পয়সা হবে।
ওয়াসা সূত্র জানিয়েছে, এখন দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে অস্থায়ী কর্মচারী আছেন ১৯৩ জন। এদের মধ্যে অল্প কিছু কর্মচারী আছেন প্রধান কার্যালয়ে, বাকি সবাই পাম্প অপারেটর। দক্ষ কর্মচারীরা ৬০০ ও অদক্ষ কর্মচারীরা ৫০০ টাকা মজুরি পান। তাদের পেছনে বছরে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা খরচ হয়। তাদের তেমন কাজ না থাকলেও এই টাকা ব্যয় করছে ওয়াসা। আর গত বছরে প্রায় ৬ কোটি টাকা লোকসানের জন্য পানির দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ভুল পদক্ষেপে রাজশাহী ওয়াসার ব্যয় বাড়তেই আছে। তাদের বিপুলসংখ্যক জনবল কাজে না লাগলেও আমাদের বিলের টাকাতেই বেতন-ভাতা দিচ্ছে। এই বোঝা টানতে গিয়ে ওয়াসা দফায় দফায় পানির দাম বাড়াচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত থেকে না সরে এলে ঈদের পর কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
রাজশাহী ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী পারভেজ মামুদ বলেন, ‘এখনও পরীক্ষামূলক সময় চলছে। অটোমেশনের পাশাপাশি আমরা পাম্প অপারেটরদেরও রেখেছি যেন কখনও ডিভাইস কাজ না করলে ম্যানুয়ালি পাম্প চালানো যায়। তবে আগামী বছরই জনবল কমাতে শুরু করব। একটা সময় হয়তো পাম্পে কোনো অপারেটরই থাকবে না। এই সময়টা দিতে হবে।’
পাম্পে অপারেটরদের না থাকার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এখনও পাম্প ঘরে অপারেটরদের থাকা জরুরি। মুশকিল হলো, জায়গার অভাবে আমরা ঘরে তাদের থাকার ভাল ব্যবস্থা করতে পারিনি। ফলে অনেকেই বাড়ি চলে যান। তারপরও তারা যেন থাকে সেই নির্দেশনা আমাদের আছে। যারা এই নির্দেশনা অমান্য করে তাদের কাছে ব্যাখা চেয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঢাকা/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অফ স থ ক ই ইউন ট
এছাড়াও পড়ুন:
বেসরকারি ব্যাংক নেবে ম্যানেজার, নিয়োগ প্রধান কার্যালয়ে
বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক পিএলসি জনবল নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকটিতে রেগুলেটরি রিপোর্টিং, ফিনান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস বিভাগের শূন্য পদে লোকবল নিয়োগ দেওয়া হবে। গত ২৪ জুলাই প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইস্টার্ন ব্যাংক ‘অ্যাসোসিয়েট ম্যানেজার টু ম্যানেজার, এসও-এসপিও (রেগুলেটরি রিপোর্টিং, ফিনান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস)’ পদে জনবল নিয়োগ দেবে। পদসংখ্যা নির্ধারিত নয়।
শিক্ষাগত যোগ্যতা: সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রি।
অন্যান্য যোগ্যতা: ব্যাংকের আর্থিক বিবরণী সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা এবং জেনারেল লেজার (জিএল) সম্পর্কে কার্যকর জ্ঞান।
শিক্ষাগত যোগ্যতা: স্নাতক অথবা সমমান ডিগ্রি থাকলে আবেদন করা যাবে
অভিজ্ঞতা: ২-৬ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
আরও পড়ুন৪৪তম বিসিএসের রিপিট ক্যাডার নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত আসছে৭ ঘণ্টা আগেবেতন: আলোচনা সাপেক্ষে
সুযোগ-সুবিধা: বেতন ছাড়াও ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী আরও সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা রয়েছে।
আবেদনে বয়স: নির্ধারিত নয়
কর্মক্ষেত্র: অফিসে।
কর্মস্থল: রাজধানী ঢাকায়
আরও পড়ুনএমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বিশেষ সুবিধা নিয়ে নির্দেশনা মাউশির, কে কত টাকা পাবেন৫ ঘণ্টা আগেআবেদনের নিয়ম: আগ্রহীরা এখানে Eastern Bank PLC ক্লিক করে আবেদন করতে পারবেন।
আবেদনের শেষ সময়: ২ আগস্ট ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন।
আবেদনপদ্ধতি: আগ্রহী প্রার্থীরা এখানে ক্লিক করে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন।