গ্রামবাসীকে ১০ লাখ টাকা অর্থ সহায়তা দিলেন হামজা
Published: 18th, March 2025 GMT
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় নিজ গ্রাম স্নানঘাটের মানুষের অর্থ সহায়তা দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের হয়ে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা ইংলিশ লিগের খেলোয়াড় হামজা দেওয়ান চৌধুরী। মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) বিকেলে তিনি এলাকার দেড় শতাধিক মানুষের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ টাকা বিতরণ করেন তিনি। এ সময় হামজার বাবা দেওয়ান মুর্শেদ চৌধুরীসহ পরিবারের অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
হামজা নিজ অর্থায়নে গ্রামে এতিমখানা ও মাদ্রাসা নির্মাণ করেছেন। বিনামূল্যে সেখানে এতিম শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুযোগে করে দিয়েছেন। এ দিন বিকেলে মাদ্রাসার এতিম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি।
হামজার বাবা দেওয়ান মুর্শেদ চৌধুরী জানান, প্রতি বছরই হামজা গ্রামের অসহায়দের জন্য অর্থ সহায়তা পাঠান। মসজিদ, মাদ্রাসা ও দরিদ্রদের সহায়তা করতে পছন্দ করেন হামজা। নিজ অর্থায়নে মাদ্রাসা ও এতিমখানা পরিচালনা করছেন।
আরো পড়ুন:
হামজাকে নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় তোলপাড়
নেইমারের পর ছিটকে গেলেন মেসি
সোমবার (১৭ মার্চ) দুপুরে যুক্তরাজ্য থেকে সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে নামেন হামজা। তাকে বরণ করে নিতে সকাল থেকে বিমানবন্দরে ভিড় করেন মিডিয়াকর্মী ও ভক্তরা। এরপর বিকাল সাড়ে ৩টায় হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট গ্রামে পৌঁছালে হাজার হাজার জনতা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেয়। স্মরণীয় এ সফরে তার সঙ্গী রয়েছেন মা, স্ত্রী ও সন্তানরা।
হামজা চৌধুরীর চাচা দেওয়ান মাসুদ জানান, ২০১৪ সালে সর্বশেষ দেশে এসেছিলেন হামজা। ২০২২ সালে হামজার বিয়ে হয়। তাদের আগমন ঘিরে এলাকার মানুষ উচ্ছ্বসিত।
হামজা চৌধুরীর বাবা জানান, অনেকে হামজাকে সংবর্ধনার আয়োজন করতে চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি মানা করেছেন। রমজান মাসে পুরো পরিবার লম্বা সফর করেছে।
তিনি আরো জানান, যেহেতু দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষজন এসেছে, তাই সবার সম্মানে নিজে বাড়িতে ইফতারের ছোট্ট আয়োজন করেছেন তিনি।
ঢাকা/মামুন/বকুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা
বছর পাঁচেক আগেও ধান কাটার শ্রমিকেরা বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন। বৈশাখে হাওরের বুকজুড়ে সবুজ ধান যখন সোনালি রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাওরে আসতে থাকেন ধান কাটার শ্রমিকেরা। কিন্তু, এই চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। হাওরের কৃষক এখন ধান কাটার জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে কৃষকের শ্রম এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কৃষি শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।
তিন বছর হলো ধান কাটার পেশা ছেড়েছেন মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মো. মকবুল মিয়া। এখন তিনি সারাবছর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।
আরো পড়ুন:
খুলনার বরফশ্রমিক
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি
ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত
মকবুল মিয়া বলেন, ‘‘আগে বছরের ছয় মাস বর্ষায় নৌকা বাইতাম, আর হুগনা সিজন আইলে নিজের জমি চাষ করতাম, আবার মাইনষের জমিতেও কামলা দিতাম। যা আয় অইতো তাই দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চইল্যা যাইতো। কিন্তু, যহন থেইক্যা নতুন নতুন মেশিন হাওরে আইতাছে, তহন থেইক্যা আমরার আর বেইল নাই।’’
‘‘কেউ আর আমরারে আগের মতন দাম দেয় না। কাম করলেও ঠিকমতো টেহা পাই না, তাই পুষায় না,’’ বলেন এই কৃষিশ্রমিক।
মকবুলের মতো ধান কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, ঝাড়া, কাঁধে বহন করার মতো স্বাধীন পেশা ছেড়েছেন অষ্টগ্রামের ফয়জুল, ইটনার শামছুল মিয়া, নিকলীর ফরিদ উদ্দিনসহ অসংখ্য শ্রমিক। এক সময় যারা এ পেশায় দলবেঁধে কাজ করতেন, এখন দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। ধান কাটার পেশা বদলে তারা এখন কেউ রিকশাচালক, কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি-ফুচকার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
তারা বলছেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির গতির সঙ্গে তারা কখনো তাল মেলাতে পারবেন না। কৃষকরাও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। বেশি জমি যাদের আছে তারাও আধুনিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। যে কৃষক অল্প জমিতে চাষাবাদ করেছেন, তারাও আর পয়সা খরচ করে কৃষিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। ফলে খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপাকে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগে। ফসল কাটার পরে বহন ও মারাই করা, তারপর বস্তায় সংরক্ষণ করার জন্যও অনেক শ্রমিকের দরকার। এটুকু ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের সারা দিনের কাজ। তার জন্য মজুরি গুনতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু, এ কাজে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে সময় এবং অর্থ দুটোই কম লাগে।
বৈশাখে বর্ষার পানি ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়-তুফান শুরু হলে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তারা যে পদ্ধতিতে ধান কাটা সহজ এবং দ্রুত হয় সেই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার পুরো জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এই ধান থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ধান কাটতে এ বছর হাওর অঞ্চলে ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটতে কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ৪১৩টি ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন।
জেলা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ‘‘মানুষের পেশা পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু, কৃষি এমন একটা পেশা, যারা এ পেশা রপ্ত করেছেন তাদের জন্য নতুন পেশায় আসা খুব কঠিন। বর্তমানে কৃষিকাজে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে কৃষিশ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’
‘‘শুধু কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে,’’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারকেই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, মাঠে যদি কৃষক ও শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য না পান, তাহলে কৃষিও একদিন হুমকির মুখে পড়বে।’’
ঢাকা/তারা