নাশকতা মামলায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং দৈনিক যুগান্তরের প্রতিনিধি আবেদুজ্জামান আমিরীকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। গত বুধবার সন্ধ্যায় পটিয়া থানার মোড় এলাকা থেকে সাংবাদিক আবেদ আমিরীকে তুলে নিয়ে যায় র‍্যাবের একটি দল। পরে রাত ১১টার দিকে তাঁকে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর থানায় হস্তান্তর করা হয়। সেখানে তাঁকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে চট্টগ্রাম আদালতে পাঠানো হলে তিনি জামিন আবেদন করেন। পরে বিচারক আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে স্থানীয় এক বিরোধের ঘটনায় গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনা মিশিয়ে ওই বছরের ২০ আগস্ট একটি মামলা করেন হালিশহরের মুন্সীপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ আহমেদ সাদ্দাম। ওই মামলায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। ৩১ আসামির মধ্যে পটিয়া এলাকার দু’জনকেও মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এর একজন সাংবাদিক আবেদুজ্জামান আমিরী। 

আবেদ আমিরীর সহকর্মীরা অভিযোগ করেন, গত ৪ আগস্ট আবেদ আমিরী চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরে ভাঙচুর করেছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। অথচ তিনি ওই দিন হালিশহরেই যাননি, সারাদিন ছিলেন পটিয়াতে। তারা বলেন, আমিরীকে হালিশহর থানায় করা মামলাটির বাদী চেনেনও না। বাদী নিজেও বলেছেন, ৪ আগস্টের ভাঙচুরের ঘটনায় আমিরী জড়িত নন। তাঁর স্বজন বলছেন, পটিয়ারই কেউ ষড়যন্ত্র করে আমিরীর নাম হালিশহরের মামলায় ঢুকিয়েছে।

মামলার বাদী হালিশহরের মুন্সীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সাজ্জাদ আহমেদ সাদ্দামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক আবেদুজ্জামান আমিরীকে চেনেন না বলে জানান।

এদিকে সাংবাদিক আবেদকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। তারা অবিলম্বে সাংবাদিক আবেদুজ্জামান আমিরীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।

এ ব্যাপারে হালিশহর থানার ওসি মো.

মনিরুজ্জামান জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনার মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে যৌথ বাহিনী আবেদ আমেরীকে গ্রেপ্তার করেছে। 


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: হ ল শহর আম র ক আগস ট র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ