বগুড়া শহরে চলাচলের জন্য তৈরি করা রাস্তা থেকে প্রতিদিন গড়ে চাঁদা উঠছে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা। ৮৫২টি দোকান থেকে তোলা এ টাকার ভাগ যায় পুলিশ, পৌরসভার স্থায়ী দোকানি ও রাজনৈতিক কর্মীদের পকেটে। এই চাঁদাবাজি টিকিয়ে রাখতে ফুটপাত দখলমুক্ত করা হচ্ছে না। এ কারণে যানজটমুক্ত হচ্ছে না শহর। রমজানের আগে বসত ৪৬২টি দোকান। এগুলো থেকে আগে চাঁদা উঠত ৪৭ হাজার টাকা। এখন দোকান বেড়েছে, চাঁদাও আদায় হচ্ছে দ্বিগুণের বেশি। ভ্রাম্যমাণ এসব দোকানের কারণে ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
শহরের ফুটপাতে প্রতিদিন ৪৬২টি দোকান বসে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৫৪টি বসে ফলের দোকান। ফুচকার দোকান বসে সাতমাথা ও সার্কিট হাউস রোডে ৩৮টি। ভ্রাম্যমাণ কাপড়ের দোকান ভ্যানে করে বিক্রি করে সকালে ৩৩টি এবং সন্ধ্যায় ৪৪টি মিলে মোট ৭৭টি। ডাবের দোকান বসে ১২টি। শহরের ব্যস্ততম সাতমাথায় বিকেলের পর থেকে রাত ১২ পর্যন্ত বসে ২২টি ফাস্টফুডের দোকান। শহরের প্রধান সড়ক ঘেঁষে ফুটপাতে বসে ২৭টি চা দোকান।
শহরে যানজটের অন্যতম কারণ এসব দোকান। সকালে দোকান উঠিয়ে দিলে বিকেলেই তারা আবার বসে যায়। এর পেছনে আছেন স্থায়ী দোকানি, পুলিশ, পৌরসভা ও স্বেচ্ছাসেবক দল ও শ্রমিক দলের কর্মীরা। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, স্থায়ী দোকানের সামনে অস্থায়ী দোকান বসে গেছে। মূল দোকানদার ফুটপাতের দোকান ভাড়া দিয়েছেন। ঈদ মৌসুমে এমন দোকান বসছে অন্তত ৩৫৬টি। একেকটি ভ্রাম্যমাণ দোকানের ভাড়া গড়ে ২০০ টাকা দিন। এতে ভাড়া ওঠে ৭১ হাজার টাকা। এ ছাড়া ৪৬২টি দোকান থেকে পৌরসভার নিরাপত্তাকর্মীরা ১৫ টাকা করে চাঁদা তোলেন। রমজানে চাঁদা তোলা হচ্ছে ২০ টাকা করে ৮৫২টি দোকান থেকে প্রতিদিন ১৭ হাজার ৪০ টাকা। এ টাকা পৌরসভার নামে ওঠালেও পৌরসভার তহবিলে জমা হয় না। কয়েকজন কর্মচারী ভাগ করে নেন। পৌরসভার নামে চাঁদা তোলার ‘টিম লিডার’ হিসেবে আছেন নিরাপত্তকর্মী আনোয়ার হোসেন। আনোয়ার হোসেন চাঁদা তোলার বিষয় অস্বীকার করলেও তাঁর নাম ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বলেছেন।
৪৬২টি দোকান থেকে পুলিশের চাঁদা দোকানপ্রতি গড়ে ৩০ টাকা করে ১৩ হাজার ৮৬০ টাকা। এখন ৮৫২টি দোকান থেকে ৩০ টাকা করে চাঁদা ওঠে ২৫ হাজার ৫৬০ টাকা। শহরের সাতমাথা ফুচকা ও ফাস্টফুডের দোকানে এবং ভ্যানে করে কাপড় বিক্রেতা ১৫৫ জনের কাছ থেকে ১৫০ টাকা করে স্বেচ্ছাসেবক দল ও শ্রমিক দল চাঁদা তোলে ২৩ হাজার ২৫০ টাকা। আগে শহরের সাতমাথাসহ বিভিন্ন স্থানে একচেটিয়াভাবে যুবলীগ কর্মী মোমিনুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী রেহান হোসেন ও সাব্বির আহম্মেদ এবং মডার্ন চাঁদা তুলত। এখন চাঁদা তোলে স্বেচ্ছাসেবক দলের নামে সাগর, শ্রমিক দলের নামে স্বাধীন। প্রতিদিন রাত ৯টার পর থেকে ১০টার মধ্যে চাঁদা নেন। পুলিশের পক্ষ থেকে আগে চাঁদা তুলত ছোটন নামে এক কনস্টেবল। ৫ আগস্টের পর চাঁদা তোলা বন্ধ ছিল পুলিশের। কিন্তু ঈদ সামনে রেখে পুলিশের পক্ষ থেকেও চাঁদা তোলা শুরু হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও নির্দিষ্ট করে কাউকে নিয়োজিত করা হয়নি। একেকদিন একেকজন চাঁদা তোলেন। আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা দোকানিরা কেউ মাস চুক্তিতে, কেউ দৈনিক হিসেবে চাঁদা নেন। ফুটপাতের সবচেয়ে বেশি যানজট তৈরি করছেন স্থায়ী দোকানিরা। তারা তাদের দোকানের সামনে ফুটপাত ভাড়া দেওয়ায় যানজট কমছে না। এদিকে অনেক দোকানি নিজেদের পণ্য সাজিয়ে রাখেন ফুটপাতে। এতে বাধ্য হয়ে ফুটপাত ছেড়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হয় পথচারীদের।
থানা রোডের আলী হোসেন নামে এক ফল ব্যবসায়ী বলেন, যারা চাঁদার জন্য আসে, তাদের দেখলেই আমরা বুঝে যাই। তাদের হাতে চাঁদা দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকি। চাঁদা না দিলে পরের দিন আর বসতে দেবে না। কাঁঠালতলা চাঁদনি বাজার এলাকার শহীদুর রহমান নামে এক স্থায়ী দোকানি বলেন, ‘আমার দোকানের সামনে ভ্রাম্যমাণ ফল ব্যবসায়ীকে বসতে দিয়েছি গরিব লোক হওয়ায়। বিনিময়ে সামান্য কিছু টাকা নিই।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী সাগর বলেন, সাতমাথায় যারা ভ্যানে করে কাপড় বেচছেন, তারা গরিব। আমরা তাদের এমনিতেই সহায়তা করে থাকি, টাকার বিনিময়ে নয়। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, শহরের সাতমাথায় আমাদের সংগঠনের কারা ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা তোলে তা আমার জানা নেই। এর প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেব।
রোজার শুরুতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পর পর তিন দিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়। এসব দোকান সকালে উচ্ছেদ করা হলেও বিকেলে আবার বসে যায়। ঈদ সামনে রেখে এসব দোকান বেড়েই চলেছে।
বগুড়া চেম্বারের সভাপতি সাইরুল ইসলাম বলেন, স্থায়ী ব্যবসায়ীরা তাদের প্রতিষ্ঠানের সামনে ভ্রাম্যমাণ দোকানিকে ফুটপাত ভাড়া দেওয়ায় যানজট কমছে না। এ বিষয়ে প্রশাসনের কঠোর প্রদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, পুলিশ এসব দোকান থেকে চাঁদা তোলে না। পুলিশের নাম করে কেউ চাঁদা তুললে তাকে বেঁধে রাখতে বলা হয়েছে। বগুড়া পৌরসভার প্রশাসক ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক মাসুম আলী বেগ বলেন, পৌরসভা থেকে কোনো ধরনের চাঁদা তোলা হয় না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এসব দ ক ন ন র স মন ফ টপ ত র প রসভ র ব যবস য় ক দল র য নজট শহর র
এছাড়াও পড়ুন:
আরও বিস্তৃত হয়েছে শ্রমিকের সংগ্রামের জমিন
মে দিবস। পৃথিবীর খেটে খাওয়া মানুষের দিন। ১৮৮৬ সালের ১ মে আমেরিকার শিকাগো শহরে আট ঘণ্টা শ্রমদিবসের দাবিতে রাস্তায় নেমেছিলেন শ্রমিকেরা। পুলিশের গুলিতে বহু মানুষ প্রাণ হারান। কিন্তু সেই রক্তের বিনিময়েই কাগজে–কলমে হলেও প্রতিষ্ঠিত হয় শ্রমের মর্যাদা, নির্ধারিত কর্মঘণ্টা, ন্যায্য মজুরি ও সংগঠনের অধিকার। একসময় এসব দাবিই রূপ নেয় আন্তর্জাতিক শ্রম আইনের ভিত্তিতে।
কিন্তু ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে আমরা যখন এই দিনে ফিরে তাকাই, তখন প্রশ্ন আসে, এখনো কি সেই সব দাবি প্রাসঙ্গিক? নাকি সময় পাল্টে দিয়েছে সব? এখন তো কাজের ধরনই বদলে গেছে—একদিকে অটোমেশন, অন্যদিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জয়যাত্রা। উৎপাদনের পদ্ধতি যেভাবে বদলেছে, তাতে পুরোনো ধরনের শ্রমিক যেন ক্রমে অদৃশ্য হয়ে পড়ছেন।
আজকের দুনিয়ায় পুঁজি এক ক্লিকে দেশান্তরিত হয়, কারখানা গড়ে ওঠে যেখানে মজুরি কম এবং আইনের নিয়ন্ত্রণ দুর্বল। মানুষ এখন আর কেবল শ্রমিক নয়; তাঁদের বলা হচ্ছে ‘ফ্রিল্যান্সার’, ‘কন্ট্রিবিউটর’, ‘পার্টনার’, ‘ডেলিভারি ম্যান’। কিন্তু আসলে, এদের অনেকেই এক নতুন ধরনের দিনমজুর; যাঁদের নেই নিরাপত্তা, নেই সুনির্দিষ্ট অধিকার। কাজ করছেন তাঁরা—কখনো রাস্তায় খাবার পৌঁছে দিয়ে, কখনো কম্পিউটারে চ্যাটবট প্রশিক্ষণ দিয়ে, আবার কখনো অ্যালগরিদম পরিশোধনে; কিন্তু কেউই প্রাতিষ্ঠানিক কর্মী নন। তাঁরা জানেন না যে তাঁদের কাজের ফল কোথায় যাবে, কীভাবে ব্যবহৃত হবে।
এই ব্যবস্থার একটি বড় উদাহরণ হচ্ছে অ্যামাজন। তাদের গুদাম ও সরবরাহ চেইনে রোবট, ড্রোন ও এআই প্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। শ্রমিকেরা সেখানে নির্ধারিত সময়ের বেশি কাজ করতে বাধ্য হন, মেশিনের গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। অথচ যখন তাঁরা সংগঠিত হতে চান, তখন কোম্পানির বিরুদ্ধে ওঠে লবিং, বিরোধিতা, ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ। ২০২৩ সালে অ্যামাজনের একাধিক গুদামে ইউনিয়ন গঠনের চেষ্টাকে রুখে দিতে কোম্পানিটি কোটি কোটি ডলার খরচ করে আইনি দল গঠন করে।
মে দিবস আজও জীবিত; কিন্তু তার সংগ্রামের মাঠ আরও বিস্তৃত হয়ে গেছে। তা এখন শুধু কারখানার ফটক নয়; সার্ভার রুমে, ডেটা সেন্টারে, কোড লাইনে, ক্লাউড সিস্টেমে। কিন্তু যেখানেই হোক শ্রমিক তো সে–ই, যাঁর শ্রমে পৃথিবী চলে, যাঁকে ছাড়া কিছুই চলে নাশুধু অ্যামাজন নয়, গোটা দুনিয়াতেই শ্রমের এক নতুন রূপ তৈরি হচ্ছে—ডিজিটাল ও প্ল্যাটফর্মভিত্তিক শ্রম। এই ব্যবস্থায় শ্রমিকেরা কাজ করেন উবার, ফুডপান্ডা, আপওয়ার্ক বা ফাইভারের মতো অ্যাপে যুক্ত হয়ে। অথচ তাঁদের নেই কোনো কর্মস্থল, নেই কর্মঘণ্টার নিশ্চয়তা, নেই অসুস্থতার ছুটি বা পেনশনের মতো সামাজিক সুরক্ষা। বাস্তবে তাঁরা একা, বিচ্ছিন্ন। প্রতিযোগিতার চাপে তাঁদের ঠেলে দেওয়া হয় অনিরাপত্তার ভেতর।
২০২৩ সালের একটি আন্তর্জাতিক জরিপে দেখা যায়, উন্নয়নশীল দেশের অন্তত ৮০% গিগ-ওয়ার্কার দিনে ১০ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন। অথচ তাঁদের দুই-তৃতীয়াংশ মাস শেষে কোনো নির্দিষ্ট ন্যূনতম মজুরি পান না। গ্লোবাল গিগ ইকোনমির এই বাস্তবতা বাংলাদেশেও দৃশ্যমান। আমাদের শহরগুলোয় এখন হাজারো বাইক বা সাইকেলচালক কাজ করছেন খাবার কিংবা পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য, কিন্তু তাঁরা কেউই প্রাতিষ্ঠানিক কর্মী নন।
এর পাশাপাশি আরও একটি বড় পরিবর্তন এনেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উত্থান। প্রশ্ন উঠেছে, এআই কি শ্রমিকের বন্ধু, না প্রতিদ্বন্দ্বী? যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার এক গবেষণা অনুযায়ী, আগামী ৫ বছরে এআই কমপক্ষে ৮০ কোটি মানুষের কাজের ধরন পাল্টে দেবে। এর মধ্যে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ সম্পূর্ণভাবে কাজ হারাতে পারেন। হোয়াইট-কলার পেশাগুলো যেমন হিসাবরক্ষণ, গ্রাহকসেবা, এমনকি সাংবাদিকতার কাজও এই প্রযুক্তির কারণে সংকটে পড়ছে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০২৩ সালের ‘দ্য ফিউচার অব জবস’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ৮ কোটি ৫০ লাখ কাজ হারিয়ে যাবে প্রযুক্তি ও অটোমেশনের কারণে। তবে একটা মৌলিক প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা। যদি উৎপাদিত পণ্যের খরিদ্দার না থাকে, তাহলে উৎপাদন করে কীভাবে মুনাফা আসবে? আর শ্রমিক না থাকলে কিনবে কে? তবে একই সময়ে ৯ কোটি ৭০ লাখ নতুন ধরনের কাজের সৃষ্টি হতে পারে। কাজগুলো হবে ডেটা অ্যানালিটিকস, প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালনা এবং সৃজনশীল ও মানবিক দক্ষতানির্ভর কাজ। এই নতুন শ্রমিকদের অবস্থার কথা ওপরে বলা হয়েছে।
কিন্তু এই নতুন কাজের মালিকানা কার হাতে? শ্রমিকদের নয়, রাষ্ট্রেরও নয়—এই ক্ষমতা এখন করপোরেট অলিগার্কদের হাতে কেন্দ্রীভূত। যুক্তরাষ্ট্রে ইলন মাস্ক, জেফ বেজোস, মার্ক জাকারবার্গদের মতো প্রযুক্তি ধনকুবেররা শুধু প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রকই নন, তাঁরা রাজনীতিতেও সরাসরি প্রভাব ফেলছেন। করপোরেট লবিংয়ের মাধ্যমে আইন তৈরির পেছনে তাঁদের প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে; যেমন ট্যাক্স ছাড়, শ্রম আইন শিথিলকরণ বা প্রতিযোগিতা নীতির ধ্বংস।
বাংলাদেশেও দৃশ্যপট খুব আলাদা নয়। তৈরি পোশাকশিল্পে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন, যাঁরা দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাতের ভিত্তি। কিন্তু তাঁরা এখনো ন্যূনতম মানবিক মজুরি পান না। গত বছর শ্রমিকেরা ন্যূনতম ২৩ হাজার টাকা মজুরি চাইলেও সরকার তা নামিয়ে ১২ হাজারে নিয়ে আসে। আন্দোলনের জবাবে আসে পুলিশি দমন, ধরপাকড়, ভয়ের পরিবেশ। মালিকেরা নতুন প্রযুক্তি বসিয়ে আরও কম শ্রমিক দিয়ে আরও বেশি উৎপাদন নিশ্চিত করবেন। আগে–পরে এটা অবধারিত।
এই প্রেক্ষাপটে মে দিবস আজ আমাদের সামনে এক নতুন প্রশ্ন তোলে—শ্রমিক আসলে কে? তাঁর অধিকার কী? আর লড়াইটা কিসের জন্য?
যদি শ্রমিকের সংজ্ঞাই বদলে যায়, তাহলে লড়াইয়ের রূপও কি পাল্টাতে হবে না? একসময়ের আট ঘণ্টার কাজের দাবি এখন হয়তো পুরোনো মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবে বহু মানুষ এখনো দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করছেন। কেউ কাজ পাচ্ছেন না, কেউ কাজ করেও মাস শেষে ঠিকমতো পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না। কেউ এমন এক ধরনের ডিজিটাল শ্রম করছেন, যার নিয়ন্ত্রণ বা মালিকানা তাঁর নয়, তিনি জানেনই না যে কার জন্য কাজ করছেন।
তাই আজ মে দিবস শুধু অতীত স্মরণের দিন নয়—এটি ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনারও দিন। এটি নতুন ধরনের দাবির জায়গা—ডিজিটাল শ্রমের স্বীকৃতি, গিগ-ওয়ার্কারদের অধিকার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে জনসাধারণের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি। আর অবশ্যই আমাদের মতো দেশে গায়ে খাটা শ্রমের ন্যায্য মজুরির দাবি।
মে দিবস আজও জীবিত; কিন্তু তার সংগ্রামের মাঠ আরও বিস্তৃত হয়ে গেছে। তা এখন শুধু কারখানার ফটক নয়, সার্ভার রুমে, ডেটা সেন্টারে, কোড লাইনে, ক্লাউড সিস্টেমে। কিন্তু যেখানেই হোক, শ্রমিক তো সে–ই, যাঁর শ্রমে পৃথিবী চলে, যাঁকে ছাড়া কিছুই চলে না।
এই সত্য যত দিন থাকবে, মে দিবস তত দিন থাকবে; নতুন প্রশ্ন নিয়ে, নতুন লড়াই নিয়ে।
জাভেদ হুসেন প্রথম আলোর সম্পাদকীয় সহকারী