২০২৪ সালের ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেই বাংলাদেশে হাসিনাবিরোধী গণঅভুত্থান তৈরি হচ্ছে, সে বিষয়টি ভারত সরকার আগেই অবগত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। শনিবার (২৩ মার্চ) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্যদের এ কথা জানান তিনি।

জয়শঙ্কর বলেন, আগে থেকে জানতে পারলেও এ বিষয়ে বিশেষ ‘কিছু করার মত অবস্থানে’ ভারত ছিল না, কারণ শেখ হাসিনার ওপর তাদের ‘যথেষ্ট প্রভাব ছিল না’ এবং তাকে কেবল ‘পরামর্শ’ দেওয়ার সুযোগ ছিল। খবর দ্য হিন্দুর

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্যরা ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলোচনার জন্য জয়শঙ্করের সঙ্গে ওই বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রতিবেশী দেশগুলোর- বিশেষ করে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি ইঙ্গিত দেন, আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারের মত ভারতও বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত ছিল। আলোচনায় জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্কের সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রসঙ্গও টানেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর।

বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের হার্ডটক অনুষ্ঠানে ভলকার তুর্ক সম্প্রতি বলেন, জুলাই আন্দোলনের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সতর্ক করা হয়েছিল, যদি তারা দমন-পীড়নে জড়িত হয়, তাহলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হবে।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিলেও ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ায় দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে সম্পর্কে অস্বস্তি রয়ে গেছে।

ছাত্র-জনতার সেই প্রবল আন্দোলনেই গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। তিনি এখনও সেখানেই আছেন।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফর করেন। সে সময় বিষয়টিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দিল্লির যোগাযোগের সূচনা হিসেবে দেখানো হয়েছিল।

তবে, আগামী ২-৪ এপ্রিল ব্যাংককে অনুষ্ঠেয় বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বৈঠক হবে কি না, সে বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও স্পষ্ট করে কিছু বলেনি।

ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের সফর সেরে ফেলা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এ মাসের শেষে যাচ্ছেন চীন সফরে। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বিমান সংযোগ বাড়ানোসহ বেশ কয়েকটি চুক্তি সে সময় স্বাক্ষরিত হতে পারে।

ঢাকা/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ

কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার দুজনকে করা এ ফোন কলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া দুই 

ফোনালাপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মার্কো রুবিও বলেন, তিনি পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। 

তবে তিনি আরও বলেন, ভারত যেন পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার আগে সতর্ক থাকে, কারণ এখনও পর্যন্ত ভারত এই হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেনি।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছেন।

পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও- ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুবিও এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ভারতের উস্কানিমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ভারতের ওপর দায়িত্বশীল আচরণ ও ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করে।

এর আগে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগাম জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়।

এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনকে আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। বর্তমানে এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।

তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সূত্র-এএফপি 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ
  • শাহবাজ শরিফ–জয়শঙ্করকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোন, কী বললেন
  • মন্ত্রিসভার ৩ কমিটির সঙ্গে জরুরি বৈঠকে কী আলোচনা করলেন নরেন্দ্র মোদি
  • ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনায় গুতেরেসের উদ্বেগ, শাহবাজ ও জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনালাপ