হাসিনাবিরোধী অভ্যুত্থান সম্পর্কে জানলেও ভারতের কিছু করার ছিল না: জয়শঙ্কর
Published: 23rd, March 2025 GMT
২০২৪ সালের ৫ আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগেই বাংলাদেশে হাসিনাবিরোধী গণঅভুত্থান তৈরি হচ্ছে, সে বিষয়টি ভারত সরকার আগেই অবগত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। শনিবার (২৩ মার্চ) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্যদের এ কথা জানান তিনি।
জয়শঙ্কর বলেন, আগে থেকে জানতে পারলেও এ বিষয়ে বিশেষ ‘কিছু করার মত অবস্থানে’ ভারত ছিল না, কারণ শেখ হাসিনার ওপর তাদের ‘যথেষ্ট প্রভাব ছিল না’ এবং তাকে কেবল ‘পরামর্শ’ দেওয়ার সুযোগ ছিল। খবর দ্য হিন্দুর
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সদস্যরা ভারতের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলোচনার জন্য জয়শঙ্করের সঙ্গে ওই বৈঠক করেন। বৈঠকে প্রতিবেশী দেশগুলোর- বিশেষ করে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি ইঙ্গিত দেন, আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারের মত ভারতও বাংলাদেশের অস্থির পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত ছিল। আলোচনায় জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্কের সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রসঙ্গও টানেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের হার্ডটক অনুষ্ঠানে ভলকার তুর্ক সম্প্রতি বলেন, জুলাই আন্দোলনের মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে সতর্ক করা হয়েছিল, যদি তারা দমন-পীড়নে জড়িত হয়, তাহলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিলেও ভারত শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ায় দিল্লি ও ঢাকার মধ্যে সম্পর্কে অস্বস্তি রয়ে গেছে।
ছাত্র-জনতার সেই প্রবল আন্দোলনেই গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। তিনি এখনও সেখানেই আছেন।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফর করেন। সে সময় বিষয়টিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে দিল্লির যোগাযোগের সূচনা হিসেবে দেখানো হয়েছিল।
তবে, আগামী ২-৪ এপ্রিল ব্যাংককে অনুষ্ঠেয় বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড.
ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের সফর সেরে ফেলা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এ মাসের শেষে যাচ্ছেন চীন সফরে। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বিমান সংযোগ বাড়ানোসহ বেশ কয়েকটি চুক্তি সে সময় স্বাক্ষরিত হতে পারে।
ঢাকা/এনএইচ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কেমন হতে পারে ইরানের জবাব
ইসরায়েলের হামলার পর কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইসরায়েলকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে হুমকিও দিয়েছেন। পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা ও ঊর্ধ্বতন সামরিক নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, এই গল্পের শেষ ইরানের হাতেই লেখা হবে। ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করা মানে সিংহের লেজ নিয়ে খেলা করা। এই ধরনের হামলার মুখে ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রয়োজন অনুভব করতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি।
পাল্টা হামলায় প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলে ১০০ ড্রোন ছুড়েছে ইরান। প্রতিবেশী দেশ ইরাক জানিয়েছে, ইরানি ড্রোনগুলো তাদের আকাশসীমা অতিক্রম করে ইসরায়েলের দিকে ছুটে গেছে। তবে ইসরায়েল নিজ ভূখণ্ডের বাইরে এসব ড্রোন ঠেকিয়ে দেওয়ার দাবি করেছে। জর্দান জানিয়েছে, তাদের দেশে ইরানি ড্রোন বিস্ফোরণের আশঙ্কায় তারা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে কিছু ড্রোন ভূপাতিত করেছে।
আয়াতুল্লাহ খামেনি বলেছেন, ইসরায়েল ইরানের আবাসিক স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করেছে। হামলায় নারী ও শিশু নিহত হয়েছে। তিনি এর জবাবে সামরিক ও কূটনৈতিক উভয় ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখানোর অঙ্গীকার করেছেন।
এদিকে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক স্থাপনায় হামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় কিনা, তা পর্যবেক্ষণ করছে ওয়াশিংটন। তবে ইরানি নেতারা সম্ভবত মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসন কেবল এই হামলা সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিল না, বরং গোপনে ইসরায়েলকে সমর্থনও দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা এই হামলায় জড়িত ছিল না। তবে তেহরান মনে করে, হামলাটি ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র সমন্বিত হামলা। দেশটি এও মনে করে, ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সম্পূর্ণরূপে মার্কিন সামরিক সরঞ্জামের ওপর নির্ভরশীল।
ইরান ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই বিবৃতিতে ইসরায়েলকে সন্ত্রাসবাদের জন্য অভিযুক্ত করেছে। দেশটি জোর দিয়ে বলেছে, হামলাটি প্রমাণ করে, ইসরায়েল কোনো আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে না। তারা মাতালের মতো প্রকাশ্যে সন্ত্রাসে লিপ্ত হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ইরানের সমৃদ্ধি, পারমাণবিক প্রযুক্তি ও ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির বিষয়টি বিশ্ব এখন ভালোভাবে অবগত। কারা আগ্রাসী, কোন দেশ এই অঞ্চলের জন্য হুমকিস্বরূপ তাও বিশ্বের দেশগুলো এখন জানে।
ইরান জোর দিয়ে বলেছে, পারমাণবিক বোমা তৈরির কোনো গোপন পরিকল্পনা তাদের কখনও ছিল না। ইরানসহ পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী সব দেশের বেসামরিক উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার সার্বভৌম অধিকার রয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি আছে– এমন কোনো প্রমাণ নেই। চলতি সপ্তাহে দেওয়া আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) প্রতিবেদনেও তা নিশ্চিত করা হয়েছে।’ তবে আইএইএ জানিয়েছে, ইরান তার পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে করছে কিনা, তা প্রমাণ করা সম্ভব না।
বিশ্লেষণে বল হয়, তেহরান ধারাবাহিকভাবে যুক্তি দিয়ে আসছে, বারাক ওবামার সময় করা চুক্তি অনুসারে তারা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে আসছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গেও ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ধারবাহিক আলোচনা করে যাচ্ছে। ইরানের অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা জানতেন, ইরানের পদক্ষেপ নিয়ে ইসরায়েল ক্রমশ ক্ষুব্ধ হচ্ছে। তবে আরব কূটনীতিকদের আশা ছিল, ওয়াশিংটন-তেহরান অবশেষে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে সক্ষম হবে। তারা মনে করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ হামলার অনুমতি ইসরায়েলকে সহসাই দেবে না।
গত ২৩ এপ্রিল ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের চলমান আলোচনায় সন্তুষ্ট নয় ইসরায়েল। তারা বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে ইরানের কূটনৈতিক প্রক্রিয়াকে বিপথগামী করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু আমাদের নিরাপত্তা পরিষেবাগুলো উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।
তবে আরাগচির এই বক্তব্য ভুল প্রমাণিত করে ইসরায়েল সফল হামলা চালিয়েছে। ইরানের কাছে থাকা রাশিয়ার তৈরি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
ইরানের অর্জন মূলত একটি। তা হলো, সম্প্রতি আরব রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে দেশটি সম্পর্ক উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে। তবে লেবানন, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইয়েমেন ও ইরাকে যে প্রক্সি যুদ্ধ চালাচ্ছিল তেহরান, ইসরায়েল সেই প্রতিরক্ষা ভেঙে দিতে সক্ষম হয়। এই অবস্থায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরব রাষ্ট্রগুলো যৌথভাবে কোনো সামরিক পদক্ষেপের দিকে অগ্রসর হবে না।