বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশের মহাসচিব ও বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেছেন, ‘‘প্রতিটি দিন দুটি সূর্য উদিত হয়, একটি হচ্ছে প্রভাত সূর্য, অন্যটি হচ্ছে সংবাদ। সূর্যের আলোতে আমরা দেখি, আর সংবাদমাধ্যম আমাদের বিশ্ব দেখায় বা জানায়। একজন সাংবাদিকের কাজ সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা। সত্য-মিথ্যার মিশ্রণে সাংবাদিকতা নয়।’’ 

রবিবার (২৩ মার্চ) সন্ধ্যায় কুষ্টিয়া শহরের দিশা টাওয়ারের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিক ইউনিয়ন কুষ্টিয়া আয়োজিত আলোচনাসভা ও ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘‘সংবাদপত্র একটি মহান পেশা। সাংবাদিকদের সমাজের দর্পণ বলা হয়। সাংবাদিকরা সমাজের ওয়াচডগ করেন। অন্যায়, অনিয়ম, নিগ্রহ, শোষণ-বঞ্চনা ও অধিকার হরণের বিরুদ্ধে সব সময় সাংবাদিককে সোচ্চার থাকতে হয়।’’

আরো পড়ুন:

হবিগঞ্জে মাইকে ঘোষণা দিয়ে ৪ সাংবাদিকের ওপর হামলা

কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে কাজ করবে সরকার: তথ্য উপদেষ্টা

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘‘অর্ধ সত্য নয়, অথবা সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ নয়, সাংবাদিকদের প্রকাশ করতে হয় সম্পূর্ণ সত্য। আমি সোজা সাপ্টা বলি, অর্ধসত্য কখনো সাংবাদিকতা হতে পারে না। সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের নানা ঝুঁকিতে পড়তে হয়। জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিকরা এই মহান কাজটি করে যাচ্ছেন। অসহায় আত্মসমর্পণ সাংবাদিকদের মানায় না। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় আমরা দেখেছি, সাংবাদিকদের একটা বিশাল অংশ সরকারের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। যার কারণে আমরা আয়না ঘরের মতো চিত্র দেখেছি। যার কারণে শেখ হাসিনার দুর্নীতির খবর, সেনা প্রধানের দুর্নীতির খবর আমরা বাংলাদেশে পায়নি, পেয়েছি বিদেশে। কেবলমাত্র আমাদের অসহায় আত্মসমর্পণের কারণে অথবা সাংবাদিকদের দলদাসগীরির কারণে।’’

কাদের গনি চৌধুরী আরো বলেন, ‘‘মনে রাখবেন, সত্য কাজে বাধার সম্মুখীন হলেও সত্যের পাশে সমাজের মানুষ পাশে এসে দাঁড়ায়। সাংবাদিকতা কখনো মুর্খ জনের পেশা নয়। সাংবাদিকতা বুদ্ধিদীপ্ত মানুষের পেশা। বস্তুনিষ্টতা ছাড়া সংবাদিকতা পর্যায়ে পড়ে পড়ে না। যারা দায়িত্বহীনভাবে সাংবাদিকতা পেশাকে ব্যবহার করেন, তারা আর যায় হোক সাংবাদিক নয়।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘প্রকৃতপক্ষে সংবাদ মাধ্যমের দায়বদ্ধতা হলো সমাজের কাছে, দেশের কাছে, মানুষের কাছে। বিগত সরকারের সময়ে বাংলাদেশে সাংবাদিকতা বলতে কিছু ছিল না। সেই যায়গা থেকে আমাদের সাংবাদিকতাকে বাঁচাতে হবে, দেশকে বাঁচাতে হবে, তথ্য সন্ত্রাস ও হলুদ সাংবাদিকতা থেকে বাঁচাতে হবে। আমরা কারো কাছে বিক্রি হবো না, সরকারের কাছে মাথা নত করব না। আমরা সত্যকে সত্য বলেই সাংবাদিকতা করব।’’

এ সময় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, সাবেক সংসদ সদস্য মেহেদী আহম্মেদ রুমী, কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক সামিমুল হাসান অপু, কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি আল মামুন সাগর, কুষ্টিয়া জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি তারিকুল হক তারিকসহ জেলার সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা এবং জেলায় কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
 

ঢাকা/কাঞ্চন/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সরক র র ব দ কত

এছাড়াও পড়ুন:

দখলদারদের কাছে প্রশাসনের আত্মসমর্পণ

বরিশালের আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের জীবন-জীবিকার উৎস ঐতিহ্যবাহী টরকী–বাশাইল খালটি করুণ মৃত্যুর প্রহর গুনছে। নাব্যতাসংকট, নির্বিচার দখল, দূষণ ও কর্তৃপক্ষের লাগাতার অবহেলার শিকার হয়ে প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খালের এমন পরিণতি খুবই দুঃখজনক। এটি পরিবেশের ওপর কাঠামোগত আগ্রাসনের ধারাবাহিকতারই চিত্র।

খালটি যখন প্রবহমান ছিল, তখন তা ছিল দুই উপজেলার কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। কিন্তু প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কৃষকদের এখন সেচের
জন্য ‘ডাবল লিফটিং’ (দুবার পানি উত্তোলন) করতে হচ্ছে। প্রথমে পাম্প দিয়ে কোনোমতে খালে পানি আনতে হয়। এরপর সেই পানি আবার পাম্প দিয়ে জমিতে দিতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় কৃষকের সেচ খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০ শতক জমিতে যেখানে খরচ হতো ৭০০ টাকা, সেখানে এখন গুনতে হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা। লাভের মুখ দেখতে না পেয়ে অনেক কৃষক বোরো আবাদ ছেড়ে মাছের ঘের বা পানের বরজ তৈরি করতে বাধ্য হচ্ছেন, নয়তো আবাদি জমির পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে স্থানীয় খাদ্যনিরাপত্তা ও কৃষি অর্থনীতিতে মারাত্মক ধস নামতে বাধ্য।

এ বিপর্যয়ের মূল কারণটি অত্যন্ত স্পষ্ট—অবৈধ দখলদারত্ব ও প্রশাসনিক দুর্বলতা। খালের উৎসমুখ, অর্থাৎ টরকী বন্দরসংলগ্ন পালরদী নদীর মোহনা দখলদারেরা পুরোপুরি রুদ্ধ করে দিয়েছেন। প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে খাল ভরাট করে গড়ে উঠেছে অসংখ্য পাকা ও আধা পাকা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। গৌরনদী ভূমি কার্যালয়ের পক্ষ থেকে ‘খালের জমি কাউকে ইজারা দেওয়া হয়নি’—এমনটা বলা হলেও দখলদারেরা কীভাবে খালের জায়গাকে ‘রেকর্ডীয় সম্পত্তি’ বা ‘ইজারা নেওয়া জমি’ দাবি করেন? এর মধ্য দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যেই সরকারি সম্পত্তি দখল করে অবৈধভাবে ইমারত নির্মাণ করছেন।

এই দখলদারদের দাপট এতটাই বেশি যে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) গত বছর খাল খননের আবেদন পেয়েও কাজ শুরু করতে পারেনি। বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী সাহেদ আহমেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, অবৈধ স্থাপনার কারণে খননযন্ত্র চালানো বা খনন করা মাটি রাখার মতো সামান্য জায়গাও সেখানে নেই। অর্থাৎ মুষ্টিমেয় অবৈধ দখলদার একটি সরকারি উন্নয়ন সংস্থাকে তার আইনি দায়িত্ব পালনে পঙ্গু করে রেখেছেন এবং স্থানীয় প্রশাসন এই দখলদারত্বের সামনে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ কেন এই অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? কার ইশারায় এই দখলদারত্ব এত বছর ধরে চলতে দেওয়া হলো? টরকী–বাশাইল খালকে পুনরুদ্ধার করতে এখন কি কোনো আন্তরিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে, নাকি আমরা এ জলধারার উৎসের পুরোপুরি মৃত্যু নিশ্চিত হতে দেখব?

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দখলদারদের কাছে প্রশাসনের আত্মসমর্পণ